খালেদার ফেরা না ফেরা নিয়ে আ.লীগে টেনশন, বিএনপির নতুন স্বপ্ন!

Slider ঢাকা রাজনীতি

178643_1ঢাকা: গেল শনিবার লন্ডন সফরে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় সফর। এর আগে ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর ও ২০০৯ সালে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। ওই সময়ে লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানসহ তার পরিবারের সঙ্গে করে প্রায় দুই মাস পর দেশে ফিরেন তিনি। যতদূর জানা যাচ্ছে তাতে সেখানে এবারো প্রায় দুমাস কাটাতে পারেন তিনি। সফরটি একান্তই তার ব্যক্তিগত ও চিকিৎসার জন্য হলেও তা রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। ক্রমেই আলোচনা-সমালোচনার ঢালপালা গজাচ্ছে। এইত গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এসেছে খালেদার সফরটি। বৈঠক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে যা জানতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেয়া একজন মন্ত্রী অনির্ধারিত আলোচনায় বলেন, উনি (খালেদা) গেছেন, কিন্তু আসবেন কি না, কেউ জানে না। মন্ত্রীর এমন উক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখেন ফিরে আসেন কি না?’ শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার একদিন পরই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলছেন মামলার ভয়ে খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন। তিনি আর দেশে ফিরবেন না বলেও তারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মামলার ভয়ে খালেদা জিয়া পালিয়ে লন্ডন চলে গেছেন। মামলার ভয়ে খালেদা জিয়া আর ফিরে আসবেন না বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকে ইঙ্গিত করে কাদের এও বলেন, আমাদের শক্তির উৎস বাংলাদেশের জনগণ। বিদেশে বসে শেখ হাসিনাকে হটানোর ষড়যন্ত্র সফল হবে না। তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে দিয়ে দেশে সংঘাত-অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছেন। তার এজেন্ডা নির্বাচন নয়। আসল উদ্দেশ্য অসাংবিধানিক অস্বাভাবিক সরকার আনা।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দেশে বন্যা হচ্ছে অথচ খালেদা জিয়া তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতে ও তার মামলার রায় বিলম্ব করতেই লন্ডনে গেছেন। বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা করাতে নয়, ষড়যন্ত্র করতে লন্ডনে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়া লন্ডনে গেছেন। বিমানবন্দরে মা-ছেলে কান্নাকাটি করেছেন। মা-ছেলে কান্নাকাটি করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তার দলের ছোড়া পেট্রলবোমার আগুনে শত শত মানুষ পুড়ে মরেছে। তাদের জন্য আকাশ-বাতাস কেঁদেছে। তিনি তো একবারও চোখের পানি ফেলেননি। খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সমালোচনার ঝড় উঠেছ। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘ওবায়দুল কাদের সব সময়ই মিথ্যা বলতে পটু। সত্য বলার রেকর্ড তার কমই। বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে ওবায়দুল কাদের এমন মিথ্যাচার করছেন। তারা এও বলছেন, খালেদা জিয়া পালিয়ে লন্ডন যাননি। এটা তার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে কয়েক হাজার নেতাকর্মী তাকে বিদায় জানিয়েছেন। তার নেত্রীরই বরং পালিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে। খালেদা জিয়া জীবনের চেয়ে দেশকেই বেশি ভালবাসেন।’ অন্যদিকে খালেদা জিয়া যাতে দেশে ফিরতে না পারে এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চক্রান্ত হচ্ছে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতারা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা একই সঙ্গে এই বিষয়টির অবতারণা করাতে এ ব্যপারে তাদের সন্দেহ সংশয় ঘনিভুত হয়েছে। তবে সরকার এমনটা করতে চাইলেও সম্ভব হবে না বলেও বিশ্বাস করেন তারা। খালেদা জিয়ার লন্ডন গমনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কর্তৃক তার দেশে ফিরে আসা নিয়ে সংশয় প্রকাশের পর বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া অবশ্যই ফিরবেন। দেশে ফিরে তিনি আগামি দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্বও দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমন কথা বলা তার উচিত হয়নি। ২০১৫ সালে যখন খালেদা বিদেশ গিয়েছিলেন, তখনও আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছিলেন, তিনি আসবেন না। কিন্তু তিনি ফিরেছিলেন। এবারও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আওয়ামী লীগের স্বরূপ মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘গণমানুষের নেত্রী খালেদা জিয়া আপোষহীনভাবে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনে তিনি এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। এখন তো ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। ফলে এই সময়ে তিনি দেশ ও জনগণকে ফেলে সেখানে থাকবেন, এটা বিশ্বাস করা যায় না।’ রিজভী বলেন, ‘যে নেত্রী শত-শত নির্যাতনের মধ্যে লড়াই করছেন, তিনি ফিরে আসবেন না, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তিনি অবশ্যই তার চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন।’ এছাড়াও বিএনপির সিনিয়র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ তথা সরকারের লোকজন যাই অপপ্রচার করুক না কেন, ম্যাডাম জিয়া নতুন মেসেজ নিয়েই দেশে ফিরবেন। তিনি দেশে ফিরেই দলকে চাঙ্গা করে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যেতে পারেন। সেজন্য সরকারী মহলে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। কেননা, দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান খুবই তীক্ষ্ণ জ্ঞানের অধিকারী, ফলে ক্ষমতাসীনরা এটাকে কিছুটা ভয় পাচ্ছে। উল্লেখ্য, ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্য সফরে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার দিনে বিমানবন্দরে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে লন্ডনে যাচ্ছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি সেখানে তার চোখের ও পায়ের চিকিৎসা করাবেন। চিকিৎসা নিতে কতদিন লাগতে পারে, তা চিকিৎসকরাই ভালো বলতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *