এক সময় বাংলাদেশের পরিচয় ছিলো ক্রিকেটের আন্ডারডগ হিসেবে। কিন্তু সে বহু দিন আগের কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে সমীহ করা লোকের সংখ্যা এখন বিশ্বব্যাপী অনেক। কিন্তু তারপরও ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের অন্যতম সহায়ক ছিলো বৃষ্টি আর ভাগ্য। ক্রিকেট ভাষ্যকার শামীম আশরাফ চৌধুরী বলছেন, ‘এটা অবশ্যই বলতেই হবে যে ভাগ্যদেবী প্রসন্ন ছিলো। যেমন অস্ট্রেলিয়ার সাথে যে পরিস্থিতিতে ম্যাচটা ছিলো সেদিন বৃষ্টি না হলে পয়েন্ট ভাগাভাগির কোন সম্ভাবনাই ছিলো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার ভরসা ছিলো পুরনো খেলোয়াড়েরাই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এটা লক্ষণীয় ছিলো যে নবীনরা যেভাবে গত দু বছর ধরে, ২০১৫ সালের ওয়ার্ল্ড কাপের পর খেলে আসছিলো এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার দায়িত্ব তাদেরই ছিলো বেশি। কিন্তু প্রবীণরাই খেলে দেখিয়েছে।’ অর্থাৎ নতুন খেলোয়াড়রা এবার ভক্তদের আশা ততটা পূরণ করেন নি। কিন্তু মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক বা তামিমের যখন দিন ফুরাবে সে দিনের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেট কতটা প্রস্তুত? সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট বলছেন জাতীয় দলের পাশাপাশি নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলা একটি এ দল বাংলাদেশের খুবই দরকার। তিনি বলছেন, ‘ঠিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল দল যেমন প্রচুর পরিমাণে দেশে-বিদেশে ম্যাচ খেলে বেড়াচ্ছে, সেরকমই একটা ‘এ’ দল থাকা উচিত যারা অন্য দেশের এ টিমের সাথে সিরিজ বা দ্বিপক্ষীয় ম্যাচ নিয়মিত খেলবে। যাতে করে আরো বিশ থেকে ২৫ টা খেলোয়াড়কে চোখের মধ্যে রাখা যায়। তারা যেন জাতীয় দলের কোন খেলোয়াড়ে ইনজুরিতে ভুগলে বিকল্প হিসেবে খেলতে পারে।’ খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, জেলা পর্যায়েও অনেক কার্যক্রম দরকার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এখনো অনেক যায়গা আছে যা ডেভেলপ করা উচিত। একটা এ টিম ছাড়াও সাথে সাথে প্রতিটা জেলায় স্টেডিয়ামের সাথে একটা একাডেমী গড়ে তোলা দরকার। প্রত্যেকটা অঞ্চলের খেলোয়াড়েরাই যেনো ঐ খানেই খেলে বড় হতে পারে। ধরুন প্রতিটা বিভাগে আন্ডার নাইন্টিন টিম বা আন্ডার ফিফটিন টিম থাকবে। সারা বছর তারা ট্রেনিং ক্যাম্প করবে।’ পাইলট বলছেন পাইপলাইনে নতুন খেলোয়াড় থাকলেও তা যথেষ্ট হচ্ছে না। আর সেজন্য বোর্ডকে কিছুটা দুষলেন তিনি। তার মতে, ‘এটা আমাদের খেলোয়াড় নয় আমাদের বোর্ড পেশাদারিত্বের যায়গায় পিছিয়ে আছে। জাতিয় দল ভাল করছে বলে অনেক কিছু ঢাকা পরে যাচ্ছে।’ তবে এখনি আশাহত না হওয়ার কিছু নেই বলছেন শামীম আশরাফ চৌধুরী। তিনি বলছেন, ‘চিন্তিত হওয়ার মতো সময় এখনো আসেনি। মাশরাফি ছাড়া, বাকি চারজন, মাহমুদুল্লাহ রিয়াজ, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, এদের আরো অন্তত চার পাঁচ বছর টপে লেভেলে খেলার ক্ষমতা আছে।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার খুঁজতে কার্যক্রম চলছে পুরো বছর জুড়েই। বোর্ডের প্রধান নির্বাচন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলছেন, ‘আমাদের নানা এজ গ্রুপ আছে। আন্ডার ফিফটিন, সেভেন্টিন, নাইন্টিন। এছাড়া আছে হাই পারফরম্যন্স ইউনিট যাদের প্রিমিয়ার ডিভিশন বা বিপিএল থেকেও নেয়া হয়। এই চারটা জিনিস আমাদের ভবিষ্যৎ খেলোয়াড় তৈরি প্ল্যাটফর্ম। ধরুন আন্ডার নাইন্টিনে যারা ভালো করে তাদের হাই পারফরম্যন্স ইউনিটে নিয়ে আসি। জাতীয় দলে ২৪ জনের যে পুল আছে তাদের কেউ অফ গেলে এই ইউনিট থেকে নেয়া হয়। আরো আছে ডেভেলপিং স্কোয়াড যেখানে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে জাতিয় দলের জন্য খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করা হয়।’ সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ দল কত নতুন প্রতিভা হাজির করতে পারে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন দলের সমর্থকরা।