রাজধানীর একটি বেসরকারি সংস্থায় অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছেন তারেক হোসেন। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থেকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি) মাধ্যমিক প্রথম বর্ষ তথা নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন তিনি। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে তারেক হোসেন জানতে পারেন, লেখাপড়া করতে হবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে। কিন্তু পরীক্ষার মাত্র দুই মাস আগে সৃজনশীল পদ্ধতির উপযোগী বই হাতে পান তিনি। এর মধ্যে কয়েকটি আবার হাতে এসেছিল আরো অনেক পরে; পরীক্ষার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে। যথারীতি পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল অর্জনে ব্যর্থ হন তিনি। তারেক হোসেন বর্তমানে মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ তথা দশম শ্রেণীতে পড়ছেন। নতুন শ্রেণীর ক্লাস শুরু হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। যদিও সৃজনশীল পদ্ধতির কোনো বই এখনো হাতে পাননি তিনি। সময়মতো বই হাতে না পাওয়ায় তারেকের পড়াশোনার আগ্রহ এখন রূপ নিয়েছে হতাশায়।
জানা গেছে, বাউবিতে প্রথম সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু হয় ২০১৫ সেশনের মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সৃজনশীল পদ্ধতির ঘোষণা এলেও শিক্ষার্থীরা বই হাতে পান ফাইনাল পরীক্ষার মাত্র দুই মাস আগে। কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে আরো দেরিতে; পরীক্ষার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে। এতে বেশ বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এখন মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ অর্থাত্ দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে। চলতি মাস পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক ক্লাস শেষ হয়ে গেলেও এখনো সৃজনশীল পদ্ধতির বই হাতে পাননি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোয় দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি স্বীকার করে বাউবি উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মাননান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ার ফলে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। টেন্ডারে ন্যূনতম ২১ দিন সময় দিতে হয়। এরপর বই ছাপানোর জন্য লাগে তিন মাস। এছাড়া বই লেখানোর কাজ করতে হচ্ছে বাইরের লোক দিয়ে। এজন্য অনেক সময় তাদের অসতর্কতার কারণে কিছু ভুলত্রুটিও থেকে যাচ্ছে। এসব ত্রুটি সংশোধনেও কিছু অতিরিক্ত সময় লাগছে। আবার মুদ্রণের পর দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বই পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। এ কারণে ভবিষ্যতে হার্ড কপি না দিয়ে ই-বুক পড়ানোর পরিকল্পনা করেছি আমরা।’
প্রতি শিক্ষাবর্ষে বাউবির মাধ্যমিকে ভর্তি হচ্ছেন লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী এসব শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বই লেখার আগেই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করে তাদের সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে। সময়মতো বই হাতে না পাওয়ায় পরীক্ষার যথাযথ প্রস্তুতিও নেয়া যাচ্ছে না, যার প্রভাব পড়ছে ফলাফলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই শিক্ষার্থীদের বই হাতে পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে।
বাউবির ওপেন স্কুলের পরিচালনাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক-কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা, জগন্নাথ, রাজশাহী, উন্মুক্তসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সমন্বয়ে এসব বই লেখা হচ্ছে। অধিকাংশ বই লেখার কাজ শেষ হলেও দু-একটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব বই সংগ্রহ ও রিভিউ করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ওপেন স্কুলের ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোতাহারুল ইসলাম বলেন, ‘সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর পর প্রতিটি বই নতুন করে লিখতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষকদের লেখা এসব বই সমন্বয় ও রিভিউ করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়াও অত্যন্ত ধীরগতির। সব মিলিয়ে বৃহত্ পরিসরে কাজ হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছাতে বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। নতুন বই প্রণয়নের কাজ শেষ হয়ে গেলে সামনের দিনগুলোয় আর এ ধরনের সমস্যা পোহাতে হবে না।’