ঢাকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নানকে তৃতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আজ রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
আপিল বিভাগের আজকের আদেশের ফলে মেয়র হিসেবে মান্নানের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মো. আবু হানিফ।
মেয়র পদ থেকে মান্নানকে তৃতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গত ৯ জুলাই তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মান্নানের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে তা চেম্বার বিচারপতির আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদেশ স্থগিত না করে চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মান্নানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আবু হানিফ।
আইনি লড়াই চালিয়ে দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার ১৯ দিনের মাথায় ও মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার চার বছর পূর্তির দিনে ৬ জুলাই মান্নানকে তৃতীয়বারের মতো সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের এক মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় আইন অনুসারে এই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মান্নান রিট আবেদন করেন।
৬ জুলাই বেলা তিনটা পর্যন্ত অফিস করে বাসায় যান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মান্নান। বেলা সাড়ে তিনটায় তাঁকে বরখাস্ত করার চিঠি পৌঁছায় করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। এর আধা ঘণ্টার মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নেন আসাদুর রহমান, তিনি আওয়ামী লীগদলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
২০১৩ সালের ৬ জুলাই মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মান্নান। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার চার বছরে তিনি দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৮ মাস ১৯ দিন। কারাগারে কাটিয়েছেন ২২ মাস। এ সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৯টি।
২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট প্রথম দফায় মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হলে গত বছরের ১১ এপ্রিল উচ্চ আদালত রুল ও স্থগিতাদেশ দেন, যা আপিলে বহাল থাকে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় গত বছরের ১৮ এপ্রিল তাঁকে দ্বিতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগে ৩১ মে খারিজ হয়। মান্নানকে বরখাস্ত করার পর প্রতিবারই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান আসাদুর রহমান।
২০১৩ সালে গাজীপুরসহ পাঁচটি সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা। এর মধ্যে বরিশালের মেয়র ছাড়া বাকি চার মেয়রকে মামলার কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। খুলনা সিটি মেয়র আদালতের রায়ে দায়িত্ব ফিরে পান গত বছর। রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রথমবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার প্রায় দুই বছর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২ এপ্রিল দায়িত্ব ফিরে পান। মেয়রের চেয়ারে বসতে না-বসতেই ওই দিনই তাঁদের আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কয়েক দিন পর আদালতের আদেশে তাঁরা আবার দায়িত্ব ফিরে পান।