সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে যমুনা নদীর পানি। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। অন্যদিকে আটদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে কুড়িগ্রামের সাত উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা এলাকায় যমুনা নদীর বাঁধটিতে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের কারণে বাহুকা, ইটালি, সিমলা, বালিঘুগরি, চিলগাছা, ভেওয়ামারা, গজারিয়া, পাঁচ ঠাকুরীসহ আশপাশের অন্তত ২০টি গ্রামে পানি ঢুকছে। আতঙ্কে এসব এলাকার মানুষ মালপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। রতনকান্দি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, বাহুকা উচ্চ বিদ্যালয়, রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদও প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
বাঁধ ভাঙার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতি ও উদাসীনতাকে দায়ী করছে স্থানীয়রা। বাহুকা গ্রামের গোলাম কিবরিয়া রাসেল ও আমজাদ হোসেন বলেন, বাঁধটির নির্মাণকাজ অনেক আগেই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পাউবো ও ঠিকাদারদের গাফিলতিতে কাজ এখনো শেষ হয়নি।
গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাহুকায় লিংক বাঁধের ৩০ মিটার ধসের কথা স্বীকার করেছেন সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইমাম। তিনি বলেন, দ্রুতই বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করা সম্ভব হবে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার তীরবর্তী দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরসহ জেলার সাত উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ আটদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানিবন্দি বেশির ভাগ মানুষের ঘরের সঞ্চিত খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে তারা। খাদ্যের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলগুলোয় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। পাঠদান বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চার হাজার পরিবারের সবাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে এক হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। আরো তিন হাজার পরিবার এখনো ত্রাণের চাল পায়নি।
কাজীপুর উপজেলার বটতলা এলাকায় পাকা সড়কের ১৫ ফুট ধসে গেছে। এতে করে পার্শ্ববর্তী বালিয়ামারী, জালছিড়ার পাড়, মিয়াপাড়া, বটতলা মণ্ডলপাড়া ও কলেজপাড়াসহ সাত গ্রামের মানুষের যোগাযোগে দুর্ভোগ বেড়েছে। এসব এলাকার লোকজন পার্শ্ববর্তী সড়ক দিয়ে আট থেকে ১০ কিলোমিটার ঘুরে কাজীপুর উপজেলা শহরে যাতায়াত করছে।
কাজীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, রাস্তার ধসে যাওয়া অংশে বালির বস্তা ফেলে যোগাযোগ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, প্রতিদিনই বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ আসছে। সেগুলো গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা বিতরণ করছি।
এদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপত্সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপত্সীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ১৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।