কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করেননি চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিবাহিত নেতারা। একই পথে হেঁটেছেন নগর কমিটি ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং জেলার থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারাও। তাছাড়া দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কোন কমিটি না থাকলেও ইউনিট কমিটিতে রয়েছে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়কসহ অধিকাংশ বিবাহিত নেতা। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে দেড় শতাধিক বিবাহিত ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন বলে দায়িত্বশীল নেতাদের সূত্রে জানা গেছে।
আবার এদের অনেকেরই সন্তান রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে গোপনে বিয়ে করে পদ ধরে রাখতে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন বলেও জানান অনেকেই।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পদত্যাগের বিষয়ে জানান দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ পদত্যাগ পত্র এখনও জমা দেননি। তবে বিবাহিতদের মধ্যে কেউ পদত্যাগপত্র জমা দিলে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান এ নেতা।
নিজের বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরাদ হোসেন ইমু বলেন, আমি বিয়ে করলে বড় আয়োজন করেই করবো। সেখানে আপনিও দাওয়াত পাবেন। গোপনে বিয়ে করার কি দরকার। আমি নিজেই বর্তমান কমিটির কয়েকজনের বিয়ে খেয়েছি। তবে কেন্দ্রীয় ঘোষণা মতে এখনও পর্যন্ত বিবাহিত কেউ পদত্যাগপত্র জমা দেননি, দিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের দোষারোপ করে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন বলেন, নিয়তান্ত্রিকভাবে মেয়াদ শেষ এমন কমিটি ভেঙ্গে দেয়া, বিবাহিত, অছাত্রসহ নানাবিধ অনিয়মের সাথে জড়িত থাকলে কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন ধরণের আল্টিমেটাম প্রয়োজন নেই। জেলার অনেকেই বিবাহিত আছেন। তবে এতে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির একটি সুযোগ হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগঃ
নগর ছাত্রলীগের ২৯১ সদস্যের কমিটিসহ ওয়ার্ড কমিটির অর্ধশতাধিক নেতাই বিবাহিত। এদের মধ্যে ‘খোদ’ নগর কমিটির সভাপতি ইমরাদ হোসেন ইমুও বিয়ে করেছেন বলে একাধিক নেতা জানান। এ বিবাহিতদের মধ্যে সহ-সভাপতি ৬ জন, সম্পাদক মন্ডলির নেতা ৩ জন, নির্বাহী সদস্য ৫ জনসহ প্রায় ৩৫ জন গোপনেই বিয়ে করেছেন। তাছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া সদস্যদের মধ্যে ১০ জনসহ নগর কমিটির ৭০ জনের মতো বিবাহিত।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিবাহিতদের মধ্যে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরাত হোসেন ইমু ছাড়াও সহ-সভাপতি মিথুন মল্লিক, তালেব আলী, লুৎফুল এহসান সাহা, আবু মোহাম্মদ আরিফ, ইমতিয়াজ চৌধুরী বাবলা, সরোয়ার উদ্দিন, সৌমেন বড়ুয়া, জাহিদুল হক চৌধুরী ও মঈনুল হাসান চৌধুরী শিমুল বিবাহ করেছেন। অনেকে সন্তানের বাবাও হয়েছেন।
যুগ্ম-সম্পাদকের মধ্যে গোলাম সামদানি জনি, সুজন বর্মন, অমিতাভ চৌধুরী বাবু আর সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে শওকত আলী রনি ও হাসমত আলী রাসেল এবং নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে সাখাওয়াত পেয়ারুসহ প্রায় অর্ধশত নেতা বিবাহিত।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগঃ
কর্ণফুলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন এক কন্যা সন্তানের জনক। সাতকানিয়া থানা ছাত্রলীগের আহবায়ক ও পাঁচজন যুগ্ন আহবায়ক বিবাহিত। লোহাগাড়া ছাত্রলীগের আহবায়ক দুই সন্তানের জনক। চন্দনাইশের আহবায়ক ও বোয়ালখালি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পটিয়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত। আনোয়ারা, বাঁশখালী, কমিটি না থাকলেও অনেকেই বিবাহিত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তারাই নতুন কমিটিতে আসতে বিভিন্ন ভাবে তদবির করছেন। সবমিলে ২০জনের মতো বিবাহিত নেতা রয়েছেন।
উত্তর জেলা ছাত্রলীগঃ
উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সহ-সভাপতি বিকে লিটন, মাহবুব উল্লাহসহ ১০ জন, যুগ্ম সম্পাদক ৩ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন ছাড়াও নির্বাহী কমিটির অরো কয়েকজন নেতা বিবাহিত। এছাড়া থানা এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল ৬০ জনের মতো নেতা বিবাহিত।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এক সিদ্ধান্ত হয়। এতে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন ইউনিট শাখার নেতৃত্বে যারা বর্তমানে বিবাহিত রয়েছেন, তাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে কারো বিরুদ্ধে এই অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।
বিডি প্রতিদিন/১৪ জুলাই ২০১৭/হিমেল