বিদ্যুৎ গিলে খাচ্ছে ইজিবাইক

জাতীয়

Eassy_bike1রাজধানী ঢাকাসহ অধিকাংশ জেলা শহর, মফস্বল ও গ্রামগুলোতে রিকশা ও ভ্যানগাড়ির বিকল্প হিসেবে অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা। অবৈধভাবে চলা এসব বাইক বিদ্যুতের একটি বড় অংশ গিলে খাচ্ছে। কারণ এগুলোর ব্যাটারি বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইজিবাইক আমদানি ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ী সমিতির দেওয়া তথ্যানুয়ী, দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এখন প্রায় ১০ লাখ ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করছে। আর এসব যানবাহন চার্জ দিতে দৈনিক প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে  ১১০০ ওয়াট হিসেবে পাঁচ থেকে ছয় ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ধরা হলে ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। এক অনুসন্ধানে ধারণা পাওয়া গেছে, শুধু ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এখন তিন-চার লাখ ইজিবাইক চলছে। এর মধ্যে উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুর, খিলক্ষেত, মুগদা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, আদাবর, চটবাড়ি বেড়িবাঁধ, কামরাঙ্গীরচর, ডেমরা ইত্যাদি এলাকায় ইজিবাইকের চলাচল রয়েছে। উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে ইজিবাইক এত বেশি বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের চলাফেরাও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে উত্তরার ৪ ও ৬ নম্বর সেক্টরের মাঝখানে শাহজালাল এভিনিউ এখন পুরোটাই ইজিবাইকের দখলে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিভাগীয় ও জেলা প্রতিনিধিরা গত বছর ইজিবাইক নিয়ে সরেজমিন কাজ করেন। তারা জানান, ভাড়া অন্যান্য যানের চেয়ে তুলনামূলক কম হওয়ায় মূল শহরে এবং তার বাইরে এখন যাত্রীদের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা। আর এগুলোর বেশিরভাগ চালকই সামান্য অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক লাইন থেকে ব্যাটারি চার্জ করিয়ে নিচ্ছেন। জানা গেছে, বগুড়ার বিভিন্ন জেলা-উপজেলাগুলোতে ইজিবাইক চালকরা যে গ্যারেজে গাড়িগুলো রাখছেন, সে জায়গাতেই রাতভর একটি গাড়ির শুধু চার্জের জন্য গ্যারেজ মালিককে মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে দিচ্ছেন। সিলেটের জেলা-উপজেলাগুলোতেও অবাধে চলছে ইজিবাইক। আর এগুলোর চালকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ লাইন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গাড়িগুলো চার্জ দিচ্ছেন। কুমিল্লা শহরে এই যানগুলো চার্জ দেওয়ার জন্য আছে আলাদা দোকান। সেখানে নিয়ম ভঙ্গ করে বিদ্যুতের অপচয় করে গাড়িগুলোতে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ শহরে এই বাইকগুলো চার্জের জন্য আলাদা করে ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে ইজিবাইকে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এক একটি ঘরে একসঙ্গে ১০টি করে ইজিবাইকে একটানা ৮ ঘণ্টা করে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তাদের খরচ হচ্ছে ১৫০ টাকা। মিরপুর বেড়িবাঁধের এক ইজিবাইক চালক সুরুজ মিয়া বলেন, প্রতিদিন ছয় ইউনিট করে মাসে তার গাড়িতে ১৮০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। ওয়াকিবহাল সূত্র মতে, এই যানগুলোর বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে পুলিশি অভিযান চালানো হলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এগুলো ঠিকই চলছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, যানগুলোর প্রথম সমস্যা হলো, এগুলো রিচার্জ করতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, আর দেশে যেখানে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে— সেখানে এই যানগুলোতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বিদ্যুতের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদিও গ্রামে ইজিবাইক একটি জনপ্রিয় যানবাহনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ জন্য বিদ্যুতের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ব্যবস্থা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তার মতে, অফ পিক আওয়ারে এই যানগুলো চার্জ করা এবং সোলার চার্জিং সিস্টেমে এর রিচার্জের ব্যবস্থা করা যায় কিনা— সেটি ভাবতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সরকার দেশের ২২টি সড়কে এসব যান চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এরপর সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী হওয়ায় উচ্চ আদালত থেকেও এসব যান চলাচলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে একসঙ্গে বহু মানুষের জীবিকা অর্জনের উৎস হওয়ায় সরকারিভাবে বৈধ উপায়ে এই বাহনগুলো চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিদ্যুৎ অপচয় কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কেরানীগঞ্জের রহিতপুরে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এই যানগুলোর জন্য দেশের প্রথম চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করে। পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও গাজীপুরেও এই স্টেশন তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *