ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারো বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে তিস্তা ও ধরলা নদীর ৬৩ চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলার পানির গতিতে সদরের কুলাঘাট ইউপির শিবেরকুটি এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাধটি ধসে গেছে। তিস্তার প্রবল পানির স্রোতে ভেসে গেছে হাতীবান্ধার ধুবনি এলাকার বালুর বাঁধ। ফলে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভারত গজলডোবা ব্যারেজের ৫৪টি গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথেই ধরলায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙ্গন।
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলার চরবেষ্টিত গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ। এতে ব্যারেজের ভাটিতে থাকা জেলার হাতীবান্ধা (উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, সির্ন্দুনা, সানিয়াজান), কালীগঞ্জ (উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার), আদিতমারী (উপজেলার মহিষখোচা) ও লালমনিরহাট সদর (উপজেলার ,কুলাঘাট,রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের) নদীর চরবেষ্টিত ৬৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে অর্ধ-লক্ষাধিক মানুষ। এখন পর্যন্ত সেখানে পৌঁছানো হয়নি কোন সরকারী সাহায্য সহযোগিতা। ভেঙ্গে পড়েছে চরের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের তিস্তা ধরলার ৬৩ চরের অধিবাসীদের সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ধরলার প্রবল পানির স্রোতে কুলাঘাট ইউনিয়নের শিবেরকুটি এলাকায় অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩’শ মিটার বাধ ধসে গেছে। ধরলা ও রত্নাই নদীর মধ্যবতি নির্মিত এই বাধ রক্ষায় এলাকাবাসী প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ধরলার তীব্র পানির স্রোতে অর্ধ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলিন হয়েছে,তিস্তার পানির গতিতে ভেসে গেছে হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারিতে অবস্থিত ধুবনি বালুর বাধটি। গড্ডিমারি ইউপি চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফলতির কারণেই এ বাধ ভেসে গেল, তাদের কে বারবার বলার পরও ব্যবস্থা নেয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিস্তা ধরলার পানির স্রোতে চরের অনেক রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যাকবলিত মানুষগুলো বলেছেন, দু’দিন থেকে পানিবন্দি হয়ে অনাহারে থাকলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোন সাহায্য সহযোগিতা।
কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী জানান, দেড় মাস আগে পাউবো কর্তৃপক্ষ জিও ব্যাগ এনে রাখলেও তারা ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় সেগুলো অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখায় কর্মকর্তাদের গাফলতির কারনে ৩’শ মিটার এ বাধটি ধসে গেল।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- সহকারী প্রকৌশলী মো : কামরুল ইসলাম,বাধ ধসে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বাঁধটি রক্ষার জন্য জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।