চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে খাদ্যবাহী একটি ট্রেন যাচ্ছিল গতকাল। নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় পৌঁছাতেই ট্রেনটিতে উঠে আসে তিন ছিনতাইকারী। গার্ড মো. গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে সেলফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। এর পর ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় তিন ছিনতাইকারী। প্রতিটি ট্রেনে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমপক্ষে তিন সদস্য উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও এ সময় ট্রেনে উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন সদস্য।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি গাজীপুর এলাকায় ট্রেনে ভ্রমণের সময় ছিনতাইকারীর হামলায় নিহত হন শফিকুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী যুবক। ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ট্রেনের ভেতরই ঘটে যাওয়া এ ধরনের আরেকটি ঘটনায় নিহত হন তিনজন যুবক।
সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন আন্তঃনগর, মেইল, এক্সপ্রেস, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ট্রেনগুলোয় উপস্থিতির মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা থাকলেও তা ব্যর্থ হচ্ছে। সারা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনগুলোয় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মূলত যত্রতত্র ট্রেন থামানোর প্রবণতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অবহেলার কারণেই রেলসেবা অনিরাপদ হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার এসব ঘটনায় রেলের নিয়োজিত কর্মীদের যোগসাজশও থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট ইকবাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর কিছুই করার থাকে না। এর পরও আমরা বিভিন্ন সময়ে ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকি। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি গার্ড, যাত্রীসহ সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন। চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে ট্রেনের গার্ড আহত হওয়ার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে চলন্ত ট্রেনে ছিনতাই রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
চলন্ত ট্রেনে ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অ্যালার্ম চেইন পুলিং প্রবণতা কমানো জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
দেশের রেলযোগাযোগ খাতে চলমান ট্রেনগুলো অনির্ধারিত স্টপেজে বিরতি দিচ্ছে প্রায়ই। এ বিরতির সময়ই ছিনতাইকারীরা ট্রেনে উঠে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায় বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। ছিনতাই ছাড়াও ট্রেনগুলোয় যাত্রীদের মালামাল চুরি, চোরাচালান, অবৈধ পণ্য পরিবহনসহ রেলকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ছিনতাইয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনগুলোয়। এমনিতে নানা জটিলতায় রেলের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। তাত্ক্ষণিকভাবে যত্রতত্র ট্রেন থামানোর কারণেও এ নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। অ্যালার্ম চেইন পুলিংয়ের (এসিপি) দৌরাত্ম্যে গত দুই মাসে কয়েকশ ট্রেনকে অনির্ধারিত স্থানে যাত্রাবিরতি করতে হয়েছে। দুষ্কৃতকারী ও রেলকর্মীদের সহযোগিতায় স্টপেজের বাইরে ট্রেন থামানোয় যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিচালন ব্যয়বৃদ্ধি ও শিডিউল সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। সম্প্রতি এসিপি নিয়ন্ত্রণে নিজের অক্ষমতার কথা জানিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছে রেলওয়ে। ট্রেনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় যাত্রী কমে যাওয়াসহ খাতটির আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন রেলের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুলিশের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্টেশন এলাকায় চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের ধরতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। চলন্ত ট্রেন ছাড়াও স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো গেলে ট্রেনে ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও কমে আসবে।