রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর আবাসিক গ্রাহক রংপুর তারাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মো. কাজী মাসুদ। দুটি লাইট আর একটি বৈদ্যুতিক পাখার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন তিনি। এজন্য প্রতি মাসে তার বিদ্যুৎ ব্যবহার হওয়ার কথা ৩০ থেকে ৩৫ ইউনিট। কিন্তু মে মাসের বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য তার মিটার রিডিং ধরা হয় ৫৫ ইউনিট। প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৮০ পয়সা হিসাবে ওই মাসে তার নামে বিল আসে ২০৯ টাকা। এ নিয়ে অভিযোগ করেন কাজী মাসুদ।
দেশজুড়ে বিস্তৃত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৭৯টি সমিতির অধিকাংশের বিরুদ্ধেই এমন মনগড়া বিল তৈরির অভিযোগ রয়েছে। এতে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও অনেক সময় দ্বিগুণ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রামীণ গ্রাহকদের। কেউ কেউ আবার বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও কম বিল পরিশোধ করছেন।
জানা যায়, পল্লী বিদ্যুতের সেবার বিপরীতে ঘুষ আদান-প্রদানের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভুল ও মনগড়া মিটার রিডিং। মিটার রিডিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি না গিয়ে, অফিসে বসে নিজেদের মতো করে রিডিং ধরে বিল তৈরি করছেন। আবার আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনেক গ্রাহক অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও তাদের রিডিং কম ধরা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবির পরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ খালেদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, কিছু কিছু এলাকায় এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই সমিতির জেনারেল ম্যানেজারকে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়ে থাকি। আর যেসব মিটার রিডারের বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজে যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মতোই গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ রয়েছে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রামগঞ্জ জোনাল অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। মিটার রিডিংয়ে কারসাজি করে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিলও বেশি দেখানো হচ্ছে।
জানা যায়, রামগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর পাটওয়ারীবাড়ির বিদ্যুৎ গ্রাহক মনিরুল ইসলামের বিদ্যুৎ বিলের কপিতে উল্লিখিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৯০ ইউনিট। মার্চ মাসে তার মোট রিডিং ধরা হয় ১৬০ ইউনিট। ফলে ওই মাসে তার বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখানো হয় ৭০ ইউনিট। অথচ বিল প্রস্তুতের এক সপ্তাহ পর ১৫ এপ্রিল এ গ্রাহকের ইউনিট বাড়ে মাত্র ৩ ইউনিট। তাই আগের মাসের বাকি অর্ধেক সময়ে ৬৭ ইউনিট কীভাবে হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংশ্লিষ্ট সমিতিতে অভিযোগ করেন মনিরুল ইসলাম।
একইভাবে ওই ওয়ার্ডের শরীফ হোসেনের বিলের কপিতে এপ্রিলে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখ ছিল ৯০ ইউনিট ও মে মাসে রিডিং ধরা হয় ১৭০ ইউনিট। যদিও বিল প্রস্তুতের এক সপ্তাহ পর মিটারে রিডিং বৃদ্ধি পায় মাত্র ১০ ইউনিট।
ভুল ও অতিরিক্ত রিডিংয়ের পাশাপাশি গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের শ্রেণীও (স্লাব) পাল্টে দেয়া হয়। সাধারণত প্রথম ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ইউনিটপ্রতি মূল্যহার ৩ টাকা ৮০ পয়সা এবং ৭৫ ইউনিটের বেশি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা ৫ টাকা ১৪ পয়সা। কিন্তু বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার দেখিয়ে অনেক সময় গ্রাহকের স্লাবও পরিবর্তন করা হয়।
উল্লেখ, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় সারা দেশে ৭৯টি সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির বিপরীতে গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৭৮ লাখ। এসব গ্রাহকের প্রায় ৯০ শতাংশই আবাসিক।