বিমানবন্দর থেকেই ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশীদের

Slider সারাদেশ

base_1499283897-Untitled-1

 

 

 

 

 

নিজ দেশের হাইকমিশনের ভিসাই গ্রহণ করছে না মালয়েশিয়া। বৈধ ভিসা সত্ত্বেও শুধু সন্দেহের কারণে বাংলাদেশী পর্যটকদের ঢুকতে দিচ্ছে না দেশটি। বিমানবন্দরের ডিটেনশন সেন্টারে বেশ কিছুদিন আটক রাখার পর ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাদের।

কুয়ালালামপুরের কেএলআই ১ ও ২ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশী পর্যটক ও বিজনেস ট্রাভেলাররা দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের আচরণের শিকার হয়ে আসছেন। সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান ঘিরে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভ্রমণসহ নানা প্রয়োজনে যারাই মালয়েশিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করছেন, সন্দেহ হলেই তাদের আটকে দেয়া হচ্ছে। ফলে বৈধ কাগজ থাকার পরও অনেক বাংলাদেশীকে জেল খেটে দেশে ফিরতে হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই দেশটিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের।

সম্প্রতি কুয়ালালামপুর থেকে ফেরত আসা এক যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মালয়েশিয়ায় বিমানবন্দরে নামার পর পরই বাংলাদেশী যাত্রীদের আলাদা করে লাইনে দাঁড় করাচ্ছেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। নিজেদের খেয়ালখুশিমতো যাকে ইচ্ছে এন্ট্রি সিল না দিয়ে অফিসে ডেকে নেয়া হচ্ছে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের নামে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাউকে আবার বসিয়ে রেখেই হয়রানি করা হচ্ছে। পছন্দ হলে এন্ট্রি সিল দেয়া হচ্ছে, নয়তো আটক করে বিমানবন্দরের ভেতরের ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে (হাজতে) ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরে ফিরতি টিকিটের দিন দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনা এখন প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটেই ঘটছে। ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যারা ১০ দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে মালয়েশিয়া গেছেন, তাদের প্রায় ১০ দিনই জেল খাটতে হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ভিসাসহ বৈধ সব নথি থাকার পরও কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর প্রবণতা বাড়ছে। এমনও হয়েছে, কোনো কোনো ফ্লাইটের ৭০ শতাংশ যাত্রীকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। যাদের অনেককেই কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে (হাজতে) কয়েক দিন বন্দি থাকতে হয়েছে। আবার ইমিগ্রেশন পার হতে না পারা যাত্রীরা দেশে এসে তাদের লাগেজও পাচ্ছেন না। বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রতিনিয়তই এ ধরনের অভিযোগ আসছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কুয়ালালামপুরে আটক হওয়া বাংলাদেশীদের ভিসায় ভুল থাকার কথা নয়। তাহলে তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হতে পারতেন না। পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ ভিসা নিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও হোটেল বুকিং আছে কিনা, সেটাও যাচাই করা হয়। মালয়েশিয়ায় বেড়াতে যাওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা আছে কিনা, সেটাও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বোঝার চেষ্টা করেন। সবকিছু ঠিক থাকলেই কেবল একজনকে ইমিগ্রেশন পার হতে দেয়া হয়। ওই ব্যক্তিই আবার মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে গিয়ে আটকে যাচ্ছেন।

ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইনস ও শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহেই মালয়েশিয়ার কেএলআই ১ ও ২ বিমানবন্দরে নেমে এ ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন শতাধিক বাংলাদেশী পর্যটক।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ এ প্রসঙ্গে বলেন, কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশন থেকে প্রায়ই পাঁচ-ছয়জন যাত্রীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এজন্য এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। ভিসা, হোটেল বুকিংসহ সব তথ্য যাচাই করেই টিকিট ইস্যু করা হয়। এর পরও কিছু যাত্রী ফেরত আসেন। সেটা পুরোপুরিই ইমিগ্রেশন অফিসারের ইচ্ছার ওপর বর্তায়।

সব কাগজপত্র থাকার পরও বাংলাদেশীদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় মালয়েশীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ অভিবাসন পুলিশের বিষয়। তারাই মূলত বিবেচনা করেন কাকে প্রবেশ করেত দেবেন, আর কাকে দেবেন না। এক্ষেত্রে হাইকমিশনের করার কিছু নেই। আমি মালয়েশীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা, আমার ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। সব নথি দেখানোর পরও তাদের সন্দেহের চোখে পড়তে হয়। তবে এখান থেকে যে ভিসাগুলো ইস্যু করা হয়, তার সবই বৈধ।

জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ থেকে নামার পর পরই সেখানকার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের হয়রানির মুখে পড়েন মালিন্দো এয়ারের ওডি-১৬৫ ফ্লাইটের ৪২ যাত্রী। ভিসা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও এন্ট্রি সিল না দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা কক্ষে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের সবাইকে প্রায় ১২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি ফিরতি ফ্লাইটেই তাদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা।

এর আগে গত বছর নিটল মোটরসের একটি দলকে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর রাতে এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইটে নিটল নিলয় গ্রুপের ৬৯ সেলস এজেন্ট মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। এরা সবাই নিটল নিলয় গ্রুপের একটি ফেম ট্রিপে অংশ নিচ্ছিলেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও শুধু সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ৬৯ জনকেই আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। ওই সময় প্রায় তিনদিন ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে (হাজতে) থাকতে হয় তাদের।

প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশী যাত্রী হয়রানি ও আটকের অভিযোগ পেয়ে কেএলআই বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ক্যাম্প পরিদর্শন করতে যান। তার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *