কোনো ভাবেই নমনীয় হচ্ছে না অস্ট্রেলিয়ার পেশাদার ক্রিকেটারদের সংগঠন এসিএ। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আরো কঠোর একটি সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসিএ)। দেনা-পাওনা সংক্রান্ত জটিলতার অবসান না হওয়ায় এবার ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বয়কট করার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশ সফরে না আসারও হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।
১লা জুলাই থেকেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা বেকার। তারা আর জাতীয় দলের ক্রিকেটার নন। শুধু জাতীয় দলের কেন, ‘এ’ দল থেকে শুরু করে পুরো দেশের প্রায় ২৩০’র বেশি ক্রিকেটার এখন বেকার। পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ৩০শে জুনের মধ্যে সিএ’র নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি ক্রিকেটাররা। তাদের এই অনড় অবস্থানের কারণে হুমকিতে পড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর। আগস্টের ১৮ তারিখ ঢাকা আসার কথা রয়েছে অস্ট্রেলিয়া দলের। তবে, বাংলাদেশ সফরের আগে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন যে সফর, সেটা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। সপ্তাহ খানেক পরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ‘এ’ দলের। কিন্তু ক্রিকেটাররা জানিয়ে দিয়েছে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা ছাড়া তারা কোনো সফরে যাবে না। তবে আজ থেকে ব্রিসবেনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের উদ্দেশ্যে যে ট্রেনিং ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, সেটাতে অংশ নেবে তারা। ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নিলেও সফরে যাওয়া না যাওয়া এখন পুরোপুরি অনিশ্চয়তায় রাখলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটি। বৈঠক শেষে এসিএ’র প্রধান নির্বাহী অ্যালিস্টার নিকোলসন বলেন, পরিকল্পিতভাবেই খেলোয়াড়রা অনুশীলনে যাচ্ছে। এবং আমরা আশা করি সমঝোতা স্মারক নিয়ে এরই মধ্যে কিছু অগ্রগতি হবে। যদি তা নয় হয়, তবে সফর বয়কটই করা হবে।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করা না করার বিষয়ে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গতকাল বৈঠকে বসেন ক্রিকেটাররা। পুরুষদের সঙ্গে নারী ক্রিকেটাররাও অংশ নেন এই বৈঠকে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ এখন ছুটি কাটাতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বৈঠকে ফোন কলের মাধ্যমে কথা বলেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, দুই পক্ষই যেন খুব কম সময়ের মধ্যে মাঝামাঝি অবস্থানে এসে একটা সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে পারে। এখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, চুক্তির ভেতরে যারা ছিল কিংবা যারা বাইরে ছিল- কেউই সমঝোতা স্মারক নিশ্চিত না হওয়া ছাড়া কোনো সফরে অংশ নেবে না।
সংকট মূলত বেতন কাঠামো নিয়ে। দুই দশক ধরে চলে আসা বেতন কাঠামো অনুযায়ী বোর্ডের লভ্যাংশের একটা অংশ আনুপাতিক হারে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে দেয়া হয় চুক্তিবদ্ধ জাতীয় ও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের। কিন্তু পুরনো এই নিয়ম পরিবর্তন করে নতুন কাঠামোতে বেতন-ভাতা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় সিএ। লভ্যাংশের একটি অংশ ভাগ করে দেয়া হবে শুধু কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের, যেটির সংখ্যা হবে মাত্র ২০ জন। বোর্ডের মতামত হলো, ঘরোয়া ক্রিকেটাররা যেহেতু বোর্ডের আয়ে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারে না, তাই লভ্যাংশের ভাগিদারও তারা হতে পারে না। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের বদলে ওই টাকা বোর্ড খরচ করতে চায় তৃণমূল ক্রিকেটে। ক্রিকেটারদের আপত্তির জায়গা এখানেই। তাদের দৃষ্টিতে, এটি ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য অপমানজনক। এ কারণেই চুক্তি করছেন না ক্রিকেটাররা। ফলে প্রোটিয়া সফর একরকম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অসিদের! আগামী ৮ই জুলাই থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শুরু হওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের।