গৃহকর্মীকে ন্যায্য মজুরি না দেওয়া এবং কর্মী ভিসা গ্রহণে জালিয়াতির অভিযোগে হামিদুর রশিদ নামের ওই জাতিসংঘ কর্মকর্তাকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
হামিদুর বর্তমানে জাতিসংঘের একটি প্রকল্পে পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।
হামিদুর ভিসা জালিয়াতি করে বাংলাদেশ থেকে কাজের লোক (গৃহকর্মী) নিয়ে এসেছিলেন বলে রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গতকাল দুপুরের পর থেকে খবর প্রকাশিত হতে থাকে।
গৃহকর্মীকে নির্যাতন ও মজুরি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের ডেপুটি কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। প্রায় একই ধরনের অভিযোগে এবার গ্রেপ্তার হলেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বাংলাদেশি কর্মকর্তা।
হামিদুর গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে যোগাযোগ করে জানা যায়, পুরোনো একটি অভিযোগের জেরে হামিদুর গ্রেপ্তার হন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৫০ হাজার ডলারের জামিনে মুক্তি পান তিনি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা একজন নারী গৃহকর্মী ন্যায্য পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন হামিদুরের বিরুদ্ধে। সেই নারী যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর চার বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন।
অল্প সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে দুই-দুজন উচ্চপদস্থ বাংলাদেশি কর্মকর্তার গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় বেশ বিব্রত বাংলাদেশি কমিউনিটি।
অনেকেই বলছেন, দেশ থেকে আসা গৃহকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদনের জন্য এমন অভিযোগ আনছেন।
যদিও এসব ঘটনায় মানবাধিকার ও শ্রমিকের প্রতি ন্যায়বিচারে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থান নিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
হামিদুরকে একজন ভালো মানের কূটনীতিক হিসেবে অনেকেই উল্লেখ করে বলছেন, আমেরিকায় কূটনীতিবিদ হিসেবে ভালোমন্দের বিচার হচ্ছে না। অভিযোগ এসেছে ন্যায্য মজুরি থেকে গৃহকর্মীকে বঞ্চিত করার।
হামিদুর এর আগে একবার নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাঁর সাবেক স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে।
গতকাল ম্যানহাটন ফেডারেল আদালতে কূটনীতিক হামিদুর রশিদের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতি, বৈদেশিক শ্রমিক নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালার লঙ্ঘন আর পরিচয় গোপন রেখে শ্রমিক আমদানির অভিযোগ আনা হয়।
শ্রমিক পাচার, গৃহপরিচারককে নির্যাতন ও বেতন না দেওয়ার অভিযোগে গত ১২ জুন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরদিন ৫০ হাজার ডলার বন্ড দিয়ে ছাড়া পান তিনি।
২০১৪ সালে নিউইয়র্কের তৎকালীন কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ এনেছিলেন তাঁর গৃহকর্মী। অভিযোগ দাখিলের দিনই সপরিবারে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন মনিরুল। পরে ওই গৃহকর্মী আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পান।
হামিদুরের বিষয়ে জানতে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, পুরোনো অভিযোগের ভিত্তিতে হামিদুর গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
মাসুদ বিন মোমেন জানান, তিনি নিজে কোনো গৃহকর্মী নিয়ে আমেরিকা আসেননি। বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে কর্মকর্তাদের এ ধরনের গৃহকর্মী দেশ থেকে নিয়ে আসাকে নিরুৎসাহ করা হচ্ছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘বাইরের দেশে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি যাতে নষ্ট না হয়, এ জন্য সবাই মিলে একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’