ভারতকে উড়িয়ে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন

Slider খেলা সারাবিশ্ব

70644_pk

 

 

 

 

ঢাকা: অবিশ্বাস্য পাকিস্তান! একপেশে ফাইনাল! টপ ফেভারিট ভারত পাত্তাই পেলো না। ব্যাটে-বলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতলো পাকিস্তান। দুবারের  চ্যাম্পিয়ন ভারত প্রথমবার ফাইনালে ওঠা পাকিস্তানের কাছে হারলো। ৪ঠা জুন প্রথম খেলায় ভারতের কাছে গো-হারা হার দিয়ে শুরু করেছিল পাকিস্তান।

মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় সেই ভারতকে সমান লজ্জা দিয়ে শিরোপা জিতে নিলো পাকিস্তান। ৩১৯ রানের জবাবে পাকিস্তান অলআউট হয়েছিল ১৬৪ রানে। ৩৩৮ রানের জবাবে ১৫৮ রানে অলআউট ভারত। জয়ের ব্যবধান ১৮০ রান। অননুমেয় পাকিস্তান আরো একবার দেখালো তাদের চমক। প্রথমে ব্যাটে পরে বলে আউটপ্লেড ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ওভাল মাঠের ইতিহাসে ৩৩৮ রান তাড়া করে জয়ের কোনো নজির ছিল না। নতুন নজির হলোও না। আইসিরি কোনো প্রতিযোগিতায় ১৩ বারের মেকাবিলায় মাত্র ২ বার জয়ের নজির ছিল পাকিস্তানের। সর্বশেষ জয় এসেছিল ২০০৯-এ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এর আগে একবারই আগে ব্যাট করা দল জিততে পেরেছিল। অসাধারণ সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যান অব দ্য ফাইনাল হন ফখর জামান।
টসে জেতার পরেই যেন হেরে গেল ভারত। যে টপ থ্রির জোরে উড়ছিল ভারত গতকাল শুরুতেই তারা ভূপাতিত। আসরে যে আমির এক ম্যাচে মাত্র দুই উইকেট পেয়েছিলেন তিনিই ভারতের ভিতটা উপড়ে দেন। টপ থ্রির তিন তারকা রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান আর বিরাট কোহলি তিনজনই আমিরের শিকার। আসরে এই তিনজন করেছিলেন ৮৭০ রান। আর গতকাল করলেন ২৫। রোহিত ০, বিরাট ৫ আর শিখর ২১। টপ থ্রির পরে যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনির ওপর অনেকের আশা ছিল। এ দু’জন এই বছরেরই জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ রানে তিন উইকেট পড়ার পর দলকে ৩৯১ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলন। যুবরাজ ১৫০ আর ধোনি ১৩৪ রান করেছিলেন। কিন্তু এই দুই পরীক্ষিত যোদ্ধাও বিদায় নেন অল্প রানে। দুই পেসার মোহাম্মদ আমির আর হাসান আলী তিনটি করে উইকেট নেন। হাসান আলী ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে আসরে সর্বোচ্চ উইকেটেরও মালিক হলেন। গোল্ডেন বল আর প্লেয়ার অব দ্য টুর্নাামেন্টের পুরস্কারও পান তিনি।
ফাইনাল শুরুর আগে ভারতের ব্যাটিং আর পাকিস্তানের বোলিং নিয়েই আলোচনা ছিল তুঙ্গে। যেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা কিছুই না। সবই তার বোলারদের অবদান। কিন্তু সময় মতোই জ্বলে উঠলেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও। টস জিতে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি বল তুলে নেন। তার ধারণা ছিল পাকিস্তানিরা আর কতই বা করবে। তাছাড়া তার যে ব্যাটিং লাইন তাতে ওই রান টপকানো কঠিন কিছু হবে না। এ মাঠেই তো এ আসরে ভারতের ৩২১ রান টপকে শ্রীলঙ্কা জয় ছিনিয়ে নেয় খুব সহজে। তাই কোহলি ঝুঁকি নিতে চাননি। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটাই শেষ পর্যন্ত মনে হয় কাল হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বসেরা দুই স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবিন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ছিলেন কেদার যাদব। আর দু’জন নিয়মিত পেসার ভুবনেশ্বর কুমার আর জসপ্রিত বুমরাহর সঙ্গে বোলিং সামলান হারদিক পান্ডিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভুবনেশ্বর ছাড়া আর কোনো বোলারই পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের সমীহ আদায় করতে পারেননি। ফল নির্ধারিত ৫০ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩৩৮। আইসিসির প্রতিযোগিতায় ভারত আর পাকিস্তানের ফারাকটা অনেক। র‌্যাঙ্কিংয়েও ভারত ২ আর  পাকিস্তান ৮। গ্রুপ পর্বের খেলায় ভারত দেখিয়ে দিয়েছিল পার্থক্যটা কত। কিন্তু গতকাল উত্তর লন্ডনের কেনিংটন দ্য ওভালে পাকিস্তানিরা যেন অন্যরকম পণ করে নামে। আর তাতেই ব্যাটিং ঝলকটাও দেখা গেল তাদের। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর আগে ব্যাট করে পাকিস্তান একবারই ৩০০ রান ছাড়াতে পেরেছিল। পাকিস্তান যেভাবে শুরু করেছিল তাতে সাড়ে তিনশ’ রান হবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। শেষ ৪৬ থেকে ৪৯ ওভারে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানেরা মাত্র একটি ছক্কা আর একটি চার মারতে সক্ষম হয়। এরপর শেষ ওভারে এক ছক্কায় মাত্র ৯ রান নেয় তারা। হাফিজ ৩৭ বলে ৫৭ আর ইমাদ ওয়াসিম ২১ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৯০তম ম্যাচে এটি হাফিজের ৩২তম ফিফটি হলেও এ আসরে প্রথম। ভারতের বিপক্ষে প্রথম খেলায় করেছিলেন ৩৩ রান। এরপর তার সংগ্রহ ২৬, ১ ও অপরাজিত ৩১।
উদ্বোধনী জুটিই পাকিস্তানের রানের ভিত গড়ে দেয়। আজহার আলী আর ফখর জামান ১২৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। এ জুটি হয়তো আরো অনেকটা যেতে পারতো কিন্তু অযথা এক রানআউটে ভাঙে এ জুটি। কয়েক দফা বাঁচতে বাঁচতে অবশেষে ২৩তম ওভারের শেষ বলে আজহার আলী রান আউট হন। ৭১ বলে ৫৯ রান করেন আজহার। আজহারের এটি ৫০তম ওয়ানডে ম্যাচ। আর এতে তিনি পেলেন ১২তম ফিফটি। ভারতের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয়। গ্রুপ পর্বেও ঠিক ৫০ রান করেছিলেন তিনি।
১৮তম ওভারের শেষ বলে জাদেজাকে চার মেরে ১০০ পূর্ণ হয় পাকিস্তানের। ২০০৩ সালের পর এই প্রথম পাকিস্তানের ওপেনাররা পরপর দুই ম্যাচে শতরানের জুটি গড়লো। আর এশিয়ার বাইরে এটিই প্রথম। আইসিসির কোনো প্রতিযোগিতায় ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের কোনো উদ্বোধনী জুটিরও এটা প্রথম শতরানের জুটি। এতদিন সেই ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্যাঙ্গালোরে আমির সোহেল-সাঈদ আনোয়ারের ৮৪ রানই ছিল সবচেয়ে বেশি।
এরপর ঠিক ২০০ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে হারদিক পান্ডিয়াকে হাঁকাতে গিয়ে জাদেজার হাতে ধরা পড়েন ফখর জামান। ১১৪ রান করেন তিনি ১০৬ বলে। অশ্বিনের বলে চার মেরে স্বপ্নের তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ফখর জামান। মাত্র চতুর্থ ওয়ানডেতে  প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। ৯২ বলে তিনি যখন সেঞ্চুরি করেন তখন পাকিস্তানের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৮৫। এ আসরে এটিই কোনো পাকিস্তানির প্রথম সেঞ্চুরি।
ভাগ্যের লিখন যাকে বলে তা যেন ছিল ফখরের কপালে। মাত্র ৩.১তম ওভারে ভারতীয় পেসার জসপ্রিত বুমরাহর ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন পাকিস্তানি ওপেনার ফখর জামান। তবে নো-বলের কারণে বেঁচে যান ফখর। ফ্রি-হিটের ডেলিভারিটি ছিল ওয়াইড বল। পরের বলে ব্যাটের ভিতরের কানায় লেগে বল পার হয় বাউন্ডারি। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই অভিষেক ফখর জামানের। ক্যারিয়ারের তিন ম্যাচে পাকিস্তানি এ নবীন ওপেনারের সংগ্রহ যথাক্রমে ৩১, ৫০ ও ৫৭।
ফিফটি পেতে পারতেন বাবর আজমও। কিন্তু কেদার যাদবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে যুবরাজ সিংয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৪৬ রানের মাথায় আউট হয়ে যান বাবর আজম। ৫২ বলের ইনিংসে মাত্র ৪টি চার মারেন তিনি। দলের রান তখন ২৬৭/৪। এর আগে শোয়েব মালিক ১৬ বলে ১২ রান করে আউট হন ভুবনেশ্বর কুমারের বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *