সিটি কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাঁকে (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) এবং তাঁর দলকে সুস্থ রাজনীতির সঠিক পথে আসার আহ্বান জানাতে চাই। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তাঁরা যে ভুল করেছিলেন, এর পুনরাবৃত্তি করা তাঁদের উচিত নয়। জনগণ যাদের পছন্দ করবে তাদেরই ভোট দেবে।’
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ, তাঁর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ হারানোর পর হিলারি ক্লিনটনকে প্ররোচিত করে তাঁকে (শেখ হাসিনা) ফোন করানো এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে তিনবার তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হুমকি দেওয়া নিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ভূমিকা’র কঠোর সমালোচনা করেন।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনা অব্যাহত রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া মেট্রিক পাস করতে পারেননি। জিয়াউর রহমান কোনোভাবে তা পাস করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাঁদের ছেলেরা কোন শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে, সে বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না, আপনারা তা ভালো করেই জানেন এবং এটাই তাঁদের মান।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা জিনিস তারা (বিএনপি) খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে, তা হলো কীভাবে অর্থ বানানো যায়, কমিশন নেওয়া যায় এবং “হাওয়া ভবনের” নামে সম্পদ জমানো যায়। তাই দেশের জনগণ ভালো থাকলে খালেদা জিয়া ভালো বোধ করেন না। খালেদা জিয়া ভালো বোধ করবেন যদি তিনি আবার লুটপাট, হত্যা ও জনগণের সম্পদ ধ্বংস করার সুযোগ পান।’
‘তিনি (খালেদা) আজ (বৃহস্পতিবার) এক বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন খুব খারাপ অবস্থায় আছে। তিনি এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কিন্তু উচ্চ আদালতে ১৫০ বার রিট পিটিশন করে এবং ১৪০ বার সময়ের সুযোগ চেয়ে হেরে এখন বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন। এখন খারাপ সময় তাঁদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য নয়।’
সুইডেনের রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। সাধারণ মানুষের হাতে হাতে এখন মুঠোফোন ও ল্যাপটপ রয়েছে। দেশজুড়ে মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা পাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনের সময়, বিদ্যুৎ সরবরাহ ভয়াবহভাবে কমে গিয়েছিল, তারা শুধু মানুষকে বিদ্যুতের খুঁটি দিতে পেরেছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি হচ্ছে, জনগণকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো, ভিক্ষা করানো নয়। ‘জাতি হিসেবে আমরা মর্যাদার সঙ্গে বাঁচব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আর তাঁর দল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জড়িত। বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আমি রাজনীতি, জনগণের স্বার্থ এবং গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে তা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি।’
বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতার স্থান না দেওয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, কোনো নির্দোষ মানুষকে হত্যা ইসলাম সমর্থন করে না। ‘যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’ বিএনপিকে তিনি ‘সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী সংগঠন’ বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা দেওয়ার ওপর জোর দেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।