সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দুই পাশের গাছ নিধনে চলছে। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় লাগানো এই গাছগুলো কাটার ফলে ওই এলাকার মারাত্তক পরিবেশ বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা।
সড়কের দুই পাশের প্রায় সব গাছ কেটে ফেলছে স্বয়ং বন বিভাগ। ঝড়ের কারণে সড়কে গাছ পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন অজুহাতে কাটা হচ্ছে গাছগুলো। এ যেন মাথা ব্যাথার কারনে মাথাই কেটে ফেলা। তবে বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাছ কাটার পর পুণরায় বৃক্ষরোপন করা হবে।
জানা যায়, সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ সুরমা এলাকার সড়কের দুই ধারে প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৯৯৩-৯৪ সালে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় রোপন করা হয় ১ হাজার ২০০ গাছ। এরমধ্যে আকাশি, রেইনট্রি, কড়ই, অর্জুন, মেহগনি ও শিশুগাছ রয়েছে।
২০১৫ সালে সড়কপাশের এই সবুজ বেষ্ঠনি কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। সেসময় পরিপক্ক গাছ হিসেবে চিহ্নিত করে ১ হাজার ৯৫টি গাছের গায়ে ‘ক্রস’ চিহ্ন এঁকে কাটার জন্য চিহ্নিত করে বন বিভাগ। সেসময় সমালোচনার মুখে গাছন কাটার আয়োজন পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি এই গাছগুলো কাটা শুরু হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের চাপে গাছ কাটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
ওই সড়কের দক্ষিণ সুরমার পারাইরচক মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শতাধিক গাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। আরো গাছ কাটা চলছে। কাটা গাছগুলোর ডালপালা ওজন করে বিক্রিও করে ফেলা হচ্ছে।
আবু আহমদ নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী এই গাছগুলো কাটাচ্ছেন। বন বিভাগের মাধ্যমে গাছ কাটার কাজ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
পারাইচকে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশেই রয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ফেলার ডাম্পিং ইয়ার্ড। এরপাশে রয়েছে একাধিক বড় বিল। ফলে সবসময়ই নানাজাতের পাখির আনোগোনা ছিলো সেখানে।
গাছ কাটার ফলে এসব পাখি আশ্রয়হীন হয়ে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, এই সড়কের পাশে গাছগুলোতে প্রচুর চিলের আবাস ছিলো। গাছ কাটার ফলে তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে।এই এলাকা পুরো বিরাণ ভূ’মিতে পরিণত হবে। তিনি গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানান এবং ইতোমধ্যে কেটে ফেলা গাছগুলোর জায়গায় পুণরায় গাছ লাগানোর দাবি জানান।
সিলেট বন বিভাগের বন সম্প্রসারণ ও নার্সারি শাখা সূত্রে জানা যায়, পারাইরচকে গাছগুলো লাগানো হয়েছিল ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সালে। সামাজিক বনায়নে ২২ জনের একটি উপকারভোগী দল গঠন করে রোপণ করা হয়েছিল গাছগুলো।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০ বছর পর গাছগুলো কাটা হবে বলে উল্লেখ থাকায় কাটার জন্য গাছ চিহ্নিত করে তালিকা করা হয়। পরে জেলা বন ও পরিবেশ উন্নয়ন কমিটিতে এ তালিকা উপস্থাপন সাপেক্ষে দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দর ৩১ লাখ ১১ হাজার ৪০০ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে সমালোচনার কারণে ২০১৫ সালে গাছ কাটার আয়োজন থেমে যায়।
সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) গাছ কাটার বিষয়ে তাগাদা দেওয়ায় দ্রুত কাটা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, গাছগুলো মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় ঝড়ে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ও সড়কের নিরাপত্তার স্বার্থেই গাছগুলো কেটে ফেলতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে পুণরায় বনায়ন করার জন্যও বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুনিরুল ইসলাম বলেন, সামাজিক বনায়নের নীতি অনুযায়ী আমাদের গাছ কাটতে হচ্ছে। কারণ, উপকারভোগী ব্যক্তিদের বিনিয়োগও আছে এখানে।
তিনি বলেন, গাছগুলো বিক্রির ১০ শতাংশ টাকা রাখা হবে আবার বনায়নের জন্য। সামগ্রিক অবস্থায় আমাদের চেষ্টা থাকবে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপণ করে ওই এলাকা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া।