ঢাকা: সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক সংকট দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য সারা দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে প্রায় পৌনে চার হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৩৮২ জন সিনিয়র শিক্ষকের পদ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের জন্য আরো ৩৩৩টি পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকারি হাইস্কুলের নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে সিনিয়র শিক্ষকের পদগুলো সৃষ্টি করা হবে। এ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে আলাদা এক প্রস্তাবে আইসিটি পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ৩৩৩টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ পর্যায়ের পদগুলোও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) এলিয়াছ হোসেন বলেন, সরকারি স্কুলগুলোতে মামলা জটিলতার কারণে শিক্ষকদের পদোন্নতি বন্ধ থাকায় শিক্ষক সংকট প্রকট। সারা দেশে প্রায় দুই হাজারের মতো শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এই সংকট দূর করতে পুরনো বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। নিয়োগ বিধিমালা-২০১৭ নামের বিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং-এর জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তা চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধিমালার মাধ্যমে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১২ সালে সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা উন্নীত করা হয়। নানাবিধ জটিলতায় নতুন নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকট নিরসন আর পদোন্নতির দাবির প্রেক্ষিতে সরকার পুরনো বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২৬ বছরের পুরনো নিয়োগ-বিধি অনেকটাই অকার্যকর। সূত্র জানায়, আগের বিধিতে শিক্ষা জীবনে একটি মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণি থাকলেও একাধিক তৃতীয় শ্রেণি ‘গ্রহণযোগ্য’ ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধিত ওই বিধিমালায় একাধিক তৃতীয় শ্রেণিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন প্রার্থীর সমগ্র শিক্ষাজীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ থাকলে তিনি শিক্ষক পদে নিয়োগের আবেদন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পুরো শিক্ষাজীবনে একটি মাত্র তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে।
মাউশি’র সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে (কয়েকটি জাতীয়করণসহ) সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৩৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট ১১ হাজার ৩০টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ২৪০টি সহকারী শিক্ষকের পদের মধ্যে ১ হাজার ৮১৫টি পদই শূন্য। অন্যদিকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের ৪৬২টি পদের মধ্যে সবক’টিই শূন্য। সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে পদোন্নতি দিয়ে এ পদগুলো পূরণ করা হবে। ৪৬২টি সহকারী প্রধান পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা ৪৩০ জন শিক্ষককে ইতিমধ্যে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শিগগিরই তাদের পদায়নের আদেশ জারি করা হবে। এছাড়া ৩২৮টি প্রধান শিক্ষকের পদের মধ্যে ৮২টি পদ শূন্য রয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, ২০১২ সাল থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন হয়েছে। নতুন নতুন বিষয় পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি দীর্ঘদিন। ফলে জগাখিচুড়ি অবস্থা মাধ্যমিকের লেখাপড়া। রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোয় শূন্য পদ না থাকলেও গ্রামের স্কুলে বেশি শূন্য পদ। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি), শারীরিক শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, চারু ও কারুকলা নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব জায়গায় এসব বিষয়ে শিক্ষক নেই। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির মতো মৌলিক বিষয় পড়ানো হচ্ছে অন্য বিষয়ের শিক্ষক দ্বারা। মাউশি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে ৩৪তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারের ৪৫০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন পিএসসি। এদের এখন মেডিকেল ও পুলিশ ভ্যারিফিকেশন চলছে। দ্রুত তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।