পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের গোপন বাড়িতে যেদিন মার্কিন নেভি সিল অভিযান চালিয়েছিল, সে রাতে লাদেনের পাশেই ছিলেন তাঁর চতুর্থ স্ত্রী আমল। ছিলেন তাঁর এক ছেলে হুসেন। পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ওই দু’জন। সম্প্রতি সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন আমল।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ক্যাথি স্কট-ক্লার্ক এবং আদ্রিয়ান লেভি একটি বই লিখেছেন। ‘দ্য এক্সাইল’ নামে সেই বইয়ের জন্যই তাঁরা কথা বলেছিলেন আমলের সঙ্গে। আর সে কথা প্রসঙ্গেই বেরিয়ে এসেছে অনেক অজানা তথ্য। খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে ‘দ্য এক্সাইল’। সম্প্রতি ওই বই নিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য সানডে টাইমস’-এ কলম ধরেছিলেন ওই দুই সাংবাদিক। সেখানে লাদেন হত্যা এবং নেভি সিলের গোপন অভিযানের কথাও উঠে আসে।
তাঁরা লিখেছেন, অ্যাবটাবাদে প্রায় নিশ্ছিদ্র দুর্গে তিন স্ত্রী এবং ১৭ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতেন ওসামা বিন লাদেন। প্রায় ছয় বছর ধরে সেখানে আত্মগোপন করেছিলেন তিনি। ২০১১ সালের ১ মে ওই বাড়িতে অভিযান চালায় মার্কিন নেভি সিলের কমান্ডোরা। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র তথ্য অনুযায়ী, ওই রাতে মার্কিন সেনাবাহিনীর দুটি ‘ব্ল্যাক হক’ হেলিকপ্টার নামে অ্যাবটাবাদ কম্পাউন্ডে। তার মধ্যে একটি ভেঙে পড়ে। ওই বাড়িরই তিন তলায় খোঁজ মেলে লাদেনের। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়।
আমল ওই দুই সাংবাদিককে জানিয়েছেন, সেই রাত ছিল বিভীষিকাময়। তিন তলার বাড়িতে চার স্ত্রীর মধ্যে তিন জন থাকতেন। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে সেখানেই থাকতেন ওসামা। রাত ১১টা নাগাদ রাতের খাওয়া ও প্রার্থনা সেরে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েন। আচমকা একটি শব্দে আমলের ঘুম ভাঙে। উঠে বসেন লাদেনও। তাঁর মুখে ছিল আতঙ্কের ছায়া!
স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের বাড়ির নীচে গোপন কুঠুরিতে চলে যেতে বলেন। আমল জানিয়েছেন, লাদেন নাকি সেই সময়ে বলেন, ‘ওরা আমাকে চায়, তোমাদের নয়। ’ কিন্তু, রাজি হননি আমল। বাকিরা চলে গেলেও ছেলে হুসেনকে নিয়ে তিনি থেকে গিয়েছিলেন। ছিলেন দুই মেয়েও। পরিবারেরই কোনও বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়ে মার্কিন বাহিনী ওই গোপন বাড়ির সন্ধান পায়, সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন আমল। এবং এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত।
আমলের কথা অনুযায়ী, দুর্গের তিন তলায় উঠে প্রথমেই লাদেনের এক ছেলে খালিদের মুখোমুখি হয় নেভি সিলের সদস্যেরা। তাঁর হাতে ছিল একে-৪৭। খালিদকে হত্যা করে তিন তলায় উঠে একের পর এক ঘরে তল্লাশি চালাতে থাকেন কমান্ডোরা। এর পর আচমকাই পর্দা সরিয়ে আমলদের ঘরে ঢুকে পড়েন তাঁরা। কম্যান্ডোদের বাধা দিতে মুহূর্তের মধ্যেই তাঁদের ঝাঁপিয়ে পড়েন লাদেনের দুই মেয়ে সুমাইয়া ও মিরিয়াম। এগিয়ে যান আমলও।
কিন্তু, কম্যান্ডোরা তাঁর পায়ে গুলি করেন। আমলের কথায়, পায়ে গুলি লাগার পরেই আমি পড়ে যাই। বুঝতে পারি ওরা জানে মেরে ফেলবে। তাই মরে পড়ে থাকার ভান করি। সেই সময় নাকি আতঙ্কে কাঁপছিলেন ওসামার বাকি স্ত্রী ও সন্তানেরা। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওসামাকে বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেয় তাঁরা।
গুলিতে লাদেনের মাথা ফুঁড়ে দিয়েছিলেন মার্কিন নেভি সিলের কম্যান্ডোরা। এর পর তাঁর দেহ ও পরিবারের বাকি জীবিত সদস্যদের নিয়ে বেরিয়ে যান কমান্ডোরা। তার আগে দ্বিতীয় স্ত্রী খাইরিয়া ও দুই মেয়েকে দিয়ে ওসামার মৃতদেহ শনাক্তকরণ করিয়েছিলেন তাঁরা।
হোয়াইট হাউসে বসে পুরো অপারেশনটা নাকি লাইভ দেখেছিলেন মার্কিন শীর্ষ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিরা। এর পর সেই রাতের অভিযান নিয়ে, নানা রকম তথ্য উঠে আসে। আমলের বয়ান সেই তালিকায় নয়া সংযোজন।
সম্প্রতি লাদেনকে একাই হত্যা করেছিলেন বলে দাবি করেন মার্কিন নেভি সিল টিমের প্রাক্তন সদস্য রবার্ট ও’নিল। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর বই— ‘দ্য অপারেটর: ফায়ারিং দ্য শটস দ্যাট কিলড বিন লাদেন’-এ সেই রাতের খুঁটিনাটি বিবরণ দিয়ে এমনটাই দাবি করেছিলেন তিনি।
সূত্র : আনন্দবাজার