সিলেট; মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে সিলেট আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন আভাস দিয়েছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে হারিয়ে সিলেট সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
৯ বছর ধরে এক নাগারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন মুহিত। এর আগে অবশ্য আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজ থেকেই জানিয়েছিলেন আগামী নির্বাচনে তিনি আর লড়াই করবেন না। এমনকি মন্ত্রিত্ব ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন। বয়স হয়ে গেছে ৮৫ বছর। সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত তিন বছর ধরে অবসরের কথা বলে যাচ্ছেন। তিনি সেটি প্রায় সময় প্রকাশ্য সভা-সমাবেশেও বলেন। এ কারণে সিলেট-১ আসনে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ বিকল্প প্রার্থী খুঁজতে শুরু করেছে। আর অর্থমন্ত্রীর পরিবার থেকে তারই ছোটো ভাই জাতিসংঘ মিশনের সাবেক স্থানীয় প্রতিনিধি একে আবদুল মোমেনের নাম ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সমর্থকরাও সিলেটের এ আসনে অর্থমন্ত্রীর বিকল্প প্রার্থী হিসেবে ড. একে আবদুল মোমেনকে ভাবতে শুরু করেছেন। ড. মোমেন ছাড়াও সিলেট-১ আসনে দলের সমর্থন চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি ইতিমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন ফোরামে সিলেট সদর থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন- দল থেকে তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি এ আসনে প্রার্থী হবেন। তবে সিলেটে ভোটের মাঠে বরাবরই ফ্যাক্টর সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কামরানের বৃহস্পতি ছিল তুঙ্গে। ফলে ওই সময় কামরান নগরের মেয়রের পাশাপাশি সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার খায়েস জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর অনেকটা চুপসে গেছেন তিনি। অন্যদিকে- মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে প্রার্থী সংকটে ভুগছে বিএনপিও। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান মারা যাওয়ার পর এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শমসের মবিন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপি ত্যাগের মধ্য দিয়ে সেই জল্পনারও অবসান হয়েছে। এরপর এ আসনে নতুনদের মধ্যে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে সিলেট সদরের দুই বারের সাবেক এমপি খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের নাম শোনা যাচ্ছে। মুক্তাদির ইতিমধ্যে সিলেটের ভোটের মাঠে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সম্প্রতি সিলেট বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা সিলেট-১ আসনকে মর্যাদাপূর্ণ আখ্যা দিয়ে এখান থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ জানিয়েছেন। দলের চেয়ারপারসনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন- বিএনপি আগামীতে নির্বাচনে যাবে কী না সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। এ কারণে কে কোথায় প্রার্থী হবেন সেটিও চূড়ান্ত হয়নি। চেয়ারপারসন ইচ্ছে করলে যে কোনো জায়গা থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানান তারা। সিলেট-১ আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া প্রার্থী হবেন এমনটি উচ্চারিত হওয়ার পরও অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে জবাব এসেছে। তিনিও ঢাকায় সাংবাদিক সহ নিজ জেলার নেতাদের কাছে বলেছেন-২০১৮ সালে বয়স ৮৫ পূর্ণ হবে। এটি তার জন্য ভালো সময়। অবসরের চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। তবে খালেদা জিয়া সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করলে তিনি শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেন। তাঁর এমন ঘোষণায় সিলেটের আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।