নৌ-পরিবহন মন্ত্রী এম. শাজাহান খান বলেছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌ পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি ঈদুল ফিতরের সময় যাতে লঞ্চ ও জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা না হয় এবং বেশি ভাড়া আদায় ও চাঁদাবাজি বন্ধ রাখার জন্য মালিক ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথের যাত্রীদের নিরাপদ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করণীয় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
শাজাহান খান বলেন, ঢাকার সদরঘাটে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা এবং সদরঘাট থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত রাস্তা হকারমুক্ত রাখা হবে। সদরঘাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্টীলের ডাষ্টবিন স্থাপন, জনগণকে ডাষ্টবিন ব্যতীত নদীতে কিংবা পন্টুন/গ্যাংওয়েতে ময়লা আবর্জনা ফেলতে নিরুৎসাহিত করা এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিতকরণ পর্যায়ক্রমে সকল ঘাটে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে। টার্মিনালসমূহে সতর্কমূলক বাণী মাইকে ও মনিটরে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, ঈদের পূর্বে ৩ দিন ও ঈদের পরে ৩ দিন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ব্যতীত সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হবে। লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিতকল্পে নৌপথে সকল মাছ ধরার জাল পাতা বন্ধ রাখা। নৌযানে পর্যাপ্ত বয়া এবং নৌপথে বাতি ও মার্কিং এর ব্যবস্থা করণ। মাওয়া-চরজানাজাত এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ অন্যান্য সকল নৌ-চ্যানেলে প্রয়োজনীয় ড্রাফট নিশ্চিতকরণ। ফেরীঘাট ব্যবস্থাপনা কমিটি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা নিয়ে ঘাটে নির্বিঘ্নে সিরিয়াল প্রদানের ব্যবস্থা করবে।
মন্ত্রী বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লঞ্চে যাত্রী ওঠার সময় থেকে লঞ্চের চালক, মাস্টার ও অন্যান্য কর্মচারীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। লঞ্চের অনুমোদিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ে এবং নদীর মাঝপথে নৌকাযোগে যাত্রী উঠালে সংশ্লিষ্ট লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দৌলতদিয়া ঘাটে পার্কিং বে ও বাইপাস জরুরী ভিত্তিতে চালু করা হবে। স্পীডবোটে চলাচলের সময় যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরিধান নিশ্চিতকরতে হবে।
আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রাতের বেলায় সকল প্রকার মালবাহী জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। ২১ জুন হতে ৩০ জুন পর্যন্ত দিনের বেলায়ও সকল বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সদরঘাট, নদীর মাঝপথ থেকে নৌকা দিয়ে যাত্রী লঞ্চে/নৌযানে উঠতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে নিয়োজিত করতে হবে। কেবিনের যাত্রীদের ছবি/মোবাইল নম্বর/জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, ঢাকা, পুলিশ বিভাগ, লঞ্চ মালিক শ্রমিক কর্তৃপক্ষ, কোস্টগার্ডসহ লঞ্চ, স্টীমার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠান এবং সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, শ্রমিক, যাত্রীদের হয়রানি ও ভীতিমূলক অবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য রাতে পুলিশের টহলের ব্যবস্থা এবং নদীতে এলোমেলোভাবে ট্যাংকার, লঞ্চ, কোষ্টার বার্জ ইত্যাদি চলাচল নিয়ন্ত্রণ। কোন ক্রমেই লঞ্চের যাত্রী ও মালামাল ওভারলোড করা যাবে না। প্রত্যেক লঞ্চের সিড়িতে দুই পার্শ্বে প্রশস্ত রেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, লঞ্চ মালিক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সভা করে ব্যবস্থাপনার দিকসমূহ নির্ধারণ করা। সার্বিক অবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে।
সভায় আরো জানানো হয়, ফেরীঘাট ও লঞ্চঘাটসমূহে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নিয়ন্ত্রণের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা। গার্মেন্টস ও নিটওয়্যর সেক্টরে ঈদের ছুটি পুনঃবিন্যাস করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, বিজেএমইএ, বিকেএমইএ এর সঙ্গে সভা করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলার নৌযান, নৌপথ, পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত সকলের সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক সভা করা হবে।