আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামের উপকূল থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে চার লাখ লোকের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে চট্টগ্রামের চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি। আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বার তিন চার দিন আগে থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পাওয়া যেত। কিন্তু এবার একেবারে কম সময়ের মধ্যে এই সংবাদ পেয়েছি। হাতে সময় একদম কম। ৭ নম্বর বিপদ সংকেত থাকায় এখনই উপকূলের লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রাজনীতিক, স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সভায় সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে সামনে রেখে চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধও মজুত রাখা হয়েছে।
সভায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ আশ্রয় কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরেন। চট্টগ্রামে ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে মোট চার লাখ ৪৫ হাজার ৮৮০ জন নারী-পুরুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে বলে তিনি জানান। চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে বলে সভা থেকে জানানো হয়।
বরিশাল: বরিশালের অভ্যন্তরীণ পথে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আজ দুপুরে বিষয়টি জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক মো. আজমল হুদা। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব পথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঝ নদীতে থাকা লঞ্চগুলোকে নিরাপদ স্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এটা বলবৎ থাকবে। তবে সন্ধ্যার পর বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে দোতলা লঞ্চগুলো চলাচল করবে কি না তা আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
ভোলা: প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ভোলার সাত উপজেলা পরিষদে দুপুরে দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা ও জেলা পর্যায়ে দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ভোলার সব উপজেলায় মাইকিং করা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র পরিষ্কার, দূরবর্তী নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে। ভোলা জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন এসব তথ্য দেন।
তবে জেলার ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচির উপপরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ভোলায় সব মিলিয়ে ৬৮৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র আছে। আরও ২৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রয়োজন।
সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, উত্তর রাজাপুর ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন। সেখানে কোনো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। তবুও এখানকার সাধারণ মানুষকে মূল ভূখণ্ডে আসার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
টেকনাফ (কক্সবাজার): টেকনাফ উপজেলার দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় আগে থেকে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন। ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানলে তাঁদের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। সে জন্য তাদের নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুপুরে ১২টা থেকে টেকনাফ পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে মাইকিং শুরু হয়েছে।
আজ সকাল আটটা থেকে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের মধ্যে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ আলম ও টেকনাফ বোট মালিক সমিতির সভাপতি দীন মোহাম্মদ জানান, কিছু কিছু নৌযান সাগরে রয়েছে। তাদের চলে আসতে কিংবা নিরাপদ আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
চাঁদপুর: আজ দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সবুর মণ্ডলের সভাপতিত্বে দুর্যোগ প্রস্তুতির সভা হয়। সভায় চাঁদপুরের নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার জন্য মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিটি চরাঞ্চলের জন্য শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের চাঁদপুর না ছাড়ার জন্য বলা হয়।
গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত ট্রলারের খোঁজ মিলছে না
বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা জেলার অন্তত সাড়ে চার শ মাছ ধরার ট্রলার বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু ট্রলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বরগুনা জেলা সমুদ্রগামী মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বেশির ভাগ ট্রলার মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের বাইরে গভীর সমুদ্রে চলে গেছে। তাই চেষ্টা করেও ট্রলারগুলোর মাঝি-মাল্লাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাত হানার আশঙ্কায় সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের উপকূলীয় ও চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদ সরিয়ে নিতে এবং সুন্দরবনে কর্মরত জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালদের লোকালয়ে ফিরে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন।