অভিযানে মিলেছে গ্রেনেড, ভেস্ট, গানপাউডারসহ প্রচুর সরঞ্জাম

Slider ঢাকা

192221Savar-Jongi--Police-Ovijan

 

 

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ;  রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারের মধ্যগেন্ডা মহল্লায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা থেকে ৭টি গ্রেনেড ও ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ৬তলা ভবনের দোতলার ওই আস্তানায় আজ শনিবার অভিযান চলাকালে বেলা পৌনে ১টার দিকে এই গ্রেনেড ও সুইসাইডাল ভেস্ট পাওয়া যায়। এগুলো সব নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তখন দফায় দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে এ আস্তানায় কোনো জঙ্গি সদস্যকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপ-কমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম খান জানান, জঙ্গি আয়নায় আজ সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান চালিয়ে কোনো জঙ্গি সদস্যকে পাওয়া যায়নি।
সাভার পৌর এলাকার মধ্যগেন্ডা মহল্লায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে শুক্রবার রাতে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের দুটি দলসহ ঢাকা জেলা পুলিশের সদস্যরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। পরে সেখান থেকে রাতেই বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, জিহাদি বই ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া একটি কক্ষে পরিত্যক্ত ব্যাগ এবং অপর একটি কক্ষ বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত ব্যাগটির ভেতরে বোমা থাকতে পারে ধারণা করে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলকে খবর দেওয়া হয় বলে জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম।

পরে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ১০টি বিকট বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে অভিযান শেষ হয়। তিনি জানান, নির্মাণাধীন এই ৬তলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে এ অভিযানে সাতটি গ্রেনেড, তিনটি সুইসাইড ভেস্ট, গ্রেনেড তৈরির কয়েক হাজার ব্যাটারি, সালফিউরিক অ্যাসিড, গানপাউডার, বোমা তৈরির সার্কিটসহ নানা মালামাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

শুক্রবার গভীর রাতে অভিযান বন্ধ রেখে রাতভর বাড়িটি ঘিরে রাখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজ সকাল পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ওই জঙ্গি আস্তানায় যায়। এরপরই প্রস্তুতি শেষে ওই বাড়িতে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান পরিচালিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দ্বিতীয় দিনের অভিযানের শুরুতে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মাধ্যমে বাড়িটিতে পানি ছোড়া হয়। এ ছাড়া ওই বাড়িটির আশপাশ থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়। অভিযান চলাকালে দুপুর সোয়া ১২টায় ওই বাড়িতে প্রথম ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরপর একটু পরপর বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।

এর আগে সাভার পৌরসভার গেন্ডা এলাকায় আনোয়ার হোসেন মোল্লা নামে এক ব্যক্তির পাঁচতলা একটি বাড়ি শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘিরে অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ওই বাড়ির সন্দেহভাজন ভাড়াটিয়ারা শুক্রবার সকালেই বাসা ছেড়ে চলে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে আই শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে আনোয় হোসেন মোল্লার বাড়ির অদূরে মধ্য গেন্ডা এলাকার নির্মাণাধীন ওই ছয়তলা বাড়িতে অভিযান শুরু করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও ঢাকা জেলা পুলিশের সদস্যরা। মধ্য রাতে অভিযান বন্ধ রেখে শনিবার ছয়তলা এই বাড়িতে পুনরায় অভিযানের সময় পাশের একটি টিনশেড বাড়িতেও অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঘরটির তালা ভেঙে সেখানে ঢোকে পুলিশ। অভিযানের পর ওই টিনশেড ঘরটিতে ঢুকে সেখানে ক্রিম তৈরির যন্ত্রপাতি, জেল ইত্যাদি ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। টিনশেড ঘরটির মালিক আবদুল হালিম নামের এক ব্যক্তি।

বেলা ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকা-১৯ (সাভার) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মো. এনামুর রহমান। তিনিও প্রথম বিস্ফোরণের পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, গত ১৫ দিন আগে তিনি এ এলাকায় সমাবেশ করে গেছেন।

ছয়তলা ওইবাড়িটির আশপাশের লোকজন জানান, বাড়িটি নির্মাণ করছেন  সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি এবং তার ভাই প্রকৌশলী সাকিব আহমেদ অলক। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায়। সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম নবী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাকিব আহমেদকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে সাকিব আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মাসেই মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় এক দম্পতি পরিচয়ে নির্মাণাধীন ছয়তলা এ বাড়ির দ্বিতীয় তলার এ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন মোসলেম নামের এক ব্যক্তি। মোসলেম বলেছিলেন, তার বাড়ি নোয়াখালীতে। ৮ মে মোসলেম বাসায় ওঠেন। তার সস্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন। ব্যস্ততার কারণে মোসলেমের কাছ থেকে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে পারেননি। এ বাড়ির কেয়ারটেকার হচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম।

শুক্রবার রাতে এখানে অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ আগেই তারা পালিয়ে গেছে বলে পুলিশের ধারণা। ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি উত্তর) পরিদর্শক এ এস এম সায়েদ বলেন, অভিযানের সময় তাদের ঘরে চুলায় গরম ভাত দেখা গেছে। তাতে মনে হচ্ছে অভিযান শুরুর ঠিক আগেই তারা পালিয়েছে।

নির্মাণাধীন এ ছয়তলা বাড়িটির দুইতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ এখনও চলছে। ছয়তলা বাড়িটির নিচ তলার একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া হলেন মিলি আক্তার। তিনি বলেন, দোতলার ফ্ল্যাটের একটিতে পাঁচ-ছয়জন তরুণ থাকতেন। আরেক ফ্ল্যাটে থাকতেন এক যুবক ও দুই নারী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দুই নারীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। বাসায় জড়ো করে রাখা কার্টন দেখে তিনি এর ভেতরে কী আছে জানতে চাইলে দুই নারী জানান, তারা কাচের চুড়ির ব্যবসা করেন। চুড়ি দেখতে চাইলে তারা খুব বিরক্তি প্রকাশ করে অন্য কক্ষে চলে যান। তবে তারা শুক্রবার কখন চলে গেছে তা তিনি জানেন না বলে জানান।

একই সময় পাশের আরেকটি বাড়ি থেকে কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নিয়ে যায়। এ সময় কবির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কামাল ছয়তলা বাড়ির কাছেই আবদুল হালিম নামের এক ব্যক্তির একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে ক্রিম বানাতেন। কামাল বলেছিলেন তিনি এখানে রং ফর্সাকারী ক্রিম ও হেয়ার জৈল তৈরি করবেন। তবে আসলে তিনি কী করতেন তা তিনি জানেন না।
কবির হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পরির্শেক (তদন্ত্ম) গোলাম নবী বলেন, কামালের সঙ্গে কবিরকে কথা বলতে দেখা গেছে বলে খবর থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *