‘দেশলাই জ্বালিয়ে আমার শরীরে ছ্যাঁকা দিতেন আমার স্বামী’

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

th

 

 

 

 

প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল সামনেই। তরুণী ঠিক করেছিলেন, আনন্দের সঙ্গেই পালন করবেন প্রথম বিবাহবার্ষিকী। কিন্তু তার আগেই সব তছনছ হয়ে গেল। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুযন্ত্রণার সঙ্গে লড়তে লড়তে পুলিশকে তরুণী জানিয়ে গেলেন দাম্পত্যজীবনের মর্মান্তিক সত্য।

ঘটনাস্থল ভারতের উত্তর প্রদেশের ঝাঁসি। এখানকার মুরানিপুরের বাসিন্দা শিবনন্দন পাল ২০১৬ সালের ১২ জুলাই মেয়ে রোশনির বিয়ে দিয়েছিলেন প্রেমনগরের বাসিন্দা পঙ্কজ পালের সঙ্গে। দেখেশুনেই বিয়ে হয়েছিল। পঙ্কজকে দেখে ভাল ছেলে বলেই মনে হয়েছিল শিবনন্দনের। কিন্তু বিয়ের পরে তাঁর ভুল ধারণা ভেঙে যায়। সংবাদমাধ্যমকে শিবনন্দন জানিয়েছেন, ‘ধুমধাম করেই বিয়ে দিয়েছিলাম মেয়ের। পণও নিয়েছিল পাত্রপক্ষ। বিয়ের পর প্রথম কয়েক দিন সব ঠিকঠাকই মনে হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গোলমাল শুরু হয়। ’

শিবনন্দন জানিয়েছেন, মোটা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করলেও বাপের বাড়ি থেকে আরও টাকা এবং অন্যান্য সামগ্রী আদায়ের জন্য রোশনির উপরে চাপ দিত তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই এই উপদ্রব শুরু হয়। ‘পঙ্কজ আর ওর বাবা-মা চাইছিলেন, পঙ্কজকে আমি একটা গাড়ি কিনে দিই। কিন্তু আমি ছাপোষা মানুষ, গাড়ি কেনার টাকা কোথায় পাব?’ বলছেন শিবনন্দন। আর গাড়ি না দেওয়ার কারণেই রোশনির উপর অত্যাচার শুরু করে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।

কী ধরনের অত্যাচার চলত রোশনির উপর? শিবনন্দন জানাচ্ছেন, মারধর তো ছিলই, সেই সঙ্গে জ্বলন্ত দেশলাইয়ের ছ্যাঁকা দেওয়া হতো রোশনির শরীরে। কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে ফোন করতেন রোশনি। কিন্তু বাবাও তখন অসহায়, বুঝে উঠতে পারছেন না, এই অবস্থায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে। ‘মেয়ে প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল’, ধরা গলায় সংবাদমাধ্যমকে জানালেন শিবনন্দন।

গত ৭ মে রোশনির বাড়ি থেকে খবর আসে যে, রোশনি রান্না করতে করতে আগুনে পুড়ে গিয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল জানায়, শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে রোশনির। সেই দিন থেকে শুরু হয় মৃত্যুর সঙ্গে রোশনির লড়াই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে হেরে যান রোশনি। ২৪ মে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর আগে পুলিশকে এমন কিছু কথা তিনি বলে গিয়েছেন যা খুলে দিয়েছে রোশনির শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মুখোশ।

নিজের মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে পুলিশকে কী বলেছেন রোশনি? এসএসপি জেকে শুক্লা দিয়েছেন সেই প্রশ্নের উত্তর। তিনি জানান, মৃত্যুর আগে পুলিশকে রোশনি বলেন, ‘‘রান্নাঘরে দুর্ঘটনার কারণে আমি আহত হইনি। বরং আমার স্বামী পঙ্কজই আমার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়ে আমার পেটে জ্বলন্ত দেশলাই চেপে ধরেছিলেন। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা আমাকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেননি। গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরে আমি নিজেই কোনও রকমে দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে গায়ে জল ঢেলে আগুন নেবাই। কিন্তু তত ক্ষণে শরীরের অনেকখানি পুড়ে গিয়েছিল। আগুন নিবে যাওয়ার পরে যখন আমি যন্ত্রণায় ছটফট করছি তখন আমার স্বামী আমাকে বলেন, ‘যদি তুই মরে যাস, তা হলে তো ল্যাটা চুকেই গেল। আর যদি এ যাত্রা বেঁচে যাস তা হলে বাপের বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে তবে শ্বশুরবাড়িতে পা রাখবি। ’ আমার শ্বাশুড়ি তখন আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কিন্তু এই নিয়ে তো পুলিশ-কাছারি হবে। পুলিশকে কী বলবি?’ আমার স্বামী তখন বলেন, ‘বলব, রান্নাঘরে রান্না করতে করতে গায়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। ’’

পুলিশকে রোশনি আরও বলেন যে, তাঁর উপর যথেচ্ছ অত্যাচার করত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ‘সময়ে সময়ে দেশলাই জ্বালিয়ে আমার শরীরে ছ্যাঁকা দিতেন আমার স্বামী। ’ এসএসপি শুক্লা জানিয়েছেন, মৃতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে পুলিশ। সেই ভিত্তিতেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। গোটা বিষয়টিকেই পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

– ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *