ষ্টাফ করেসপনডেন্ট
গ্রাম বাংলা নউজ২৪.কম
ঢাকা: জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়ার কোন খবর না থাকলেও জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীতে নজরুল জেগে উঠে। এই দুটি দিবসে নজরুল চর্চা সীমাবদ্ধ বলে দুঃখভরা কণ্ঠে জানিয়েছেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী।
তিনি বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চর্চা শুধু জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকীতেই সীমাবদ্ধ। এই দুটি দিন ছাড়া কবিকে সেইভাবে চর্চা বা স্মরণ করা হয় না।
রোববার সকালে কবির ১১৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে এ দুঃখ প্রকাশ করেন।
খিলখিল কাজী বলেন, যে মনোভাব নিয়ে নজরুল কবিতা, গান ও শিল্প কর্মরচনা করেছেন, তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার লেখায় সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছিল। সেই চেতনাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার গান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
কবির কথা স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ছোট বেলায় আমি নজরুলকে যেভাবে দেখেছি, তা এখনও মনে পড়ে। সব সময় একগাল হাসিমাখা মুখ নিয়ে থাকতেন তিনি। শিক্ষার্থীরা তার কাছে আসলে ভালোবাসা কাকে বলে সেটি দেখিয়েছেন নজরুল।
সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে সমানভাবে ভালোবাসতেন তিনি। তার কবিতায় সেটি ফুটে ওঠে-
গাহি সাম্যের গান–
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
নজরুল চর্চা কেমন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে কবির নাতনি জানা, নজরুলকে শুধু জন্ম, মৃত্যু দিনে স্মরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তার গান, নাটক, উপন্যাস নিয়ে ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় কাজ হচ্ছে কম। তার রচনা নিয়ে আমরা সিনেমা তৈরি করছি না। এমন অনেক কমার্শিয়াল ডিরেক্টর নজরুলে লেখা নাটকও তৈরি করছে না। এটি আমাদের সমগ্র জাতির জন্য দুঃখজনক।
খিলখিল কাজী বলেন, কবি নজরুল প্রেমের ও দ্রোহের কবি ছিলেন। সমাজ থেকে পাপাচার, অন্যায় দূর এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নজরুল ভালোবাসা, সাম্য ও বোধের কথা বলেছেন। আমাদের সবাইকে নজরুলমুখী হতে হবে। তার শিক্ষা ও জ্ঞান ধারণ করে চলতে পারলে সব পাপাচার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
নজরুল ইসলামের লেখায় ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়েছে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলা হয়েছে।
নজরুল চর্চা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সামনে যত দিন যাবে, নজরুল-চর্চা তত বাড়বে। তিনি আমাদের মাঝে নেই এটা বলা যাবে না। তার শিল্পকর্ম আমাদের সামনে জ্বলজ্বল করছে।
এ সময় তিনি বলেন, নজরুল তারুণ্যের কবি। তার লেখায় বিদ্রোহের কারণ সমাজ থেকে অন্যায়, দুর্নীতি, অসত্য দূর করার জন্য তিনি বিদ্রোহ করেছেন। আজ আমাদের সবার উচিত নজরুলকে বেশি বেশি করে চেনা ও জানা।
বিশিষ্ট নজরুল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার যে আদর্শ এটি নজরুলের কাছ থেকে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসেই তিনি, চল চল চল/ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে
মাদল / নিম্নে উতলা ধরণী তল/ অরুণ প্রাতের তরুণ দল/ চল রে চল রে চল কবিতা লিখেছেন।
তিনি বলেন, নজরুলকে সমস্ত রাজনীতির ঊর্ধে রাখতে হবে। তিনি আমাদের জাতীয় কবি; কোনো গোষ্ঠী বিশেষের নয়!