রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যার দায় স্বীকার করেছে কথিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২। কিন্তু এই নামে ফেসবুক পেজ খোলার নেপথ্যে আসলে কারা তা পাঁচদিনেও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কারণে আবারো হুমকি দিচ্ছে কথিত ওই সংগঠনটি।
বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্ধকারে থাকলেও ভীতিকর নতুন নতুন স্ট্যাটাস দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে ওই ফেসবুক পেজে। সর্বশেষ ‘পরবর্তি টার্গেট’ দিয়ে নতুন স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে ওই পেজে। বুধবার পরবর্তী টার্গেট বগুড়া সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষক। এছাড়াও সোমবার সন্ধ্যায় তাদের পেজে হুমকি দিয়ে নতুন স্ট্যাস্টাস দিলেও মঙ্গলবার দুপুরে তাদের ওই পেজটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নতুন নতুন এসব স্ট্যাটাসে এবার রীতিমত শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, গবেষক, গ্রামের মোড়ল মাতবর, চিকিৎসক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, বুদ্ধিজীবী ও অভিনয় শিল্পীদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার সকালে বগুড়া সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষককে নিয়ে নতুন স্ট্যাটাসটি পোস্ট করা হয় ওই পেজ থেকে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘নেক্সট টার্গেট…, বগুড়া সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষক, অপরাধ: বোরখা পরা নিষিদ্ধ, অপরাধ: সেপ্টেম্বর ২০১৪, শাস্তি: মৃত্যুদণ্ড, সুযোগ: আছে, ইসলাম বিরোধী সকল নাস্তিক মুরতাদ সাবধান।’
এ ছাড়াও ওই পেজে আরো উল্লেখ আছে, ‘নাস্তিক-মুরতাদদের ফাঁসি বা তাদের অপরাধের জন্য তাগুত সরকারের কাছে বিচার চেয়ে কোন লাভ হবে না। কারণ এই তাগুত সরকারই এদের গডফাদার। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তার জীবনে দেখিয়ে গিয়েছেন কিভাবে এইসব নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলাম বিদ্বেষী, রাসুলের অপমান কারীদের কিভাবে শাস্তি দিতে হবে। আর তা হল তাদের মৃত্যুদণ্ড! মুজাহিদীনরা রাজশাহীতে এক মুরতাদকে কতল করেছেন, যে তার ডিপার্টমেন্টে ও ক্লাসে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছিল। আল্লাহর ইচ্ছায়, আল্লাহর শক্তিতে ও আল্লাহর অনুমতিতে মুজাহিদীনরা এই মুরতাদকে কতল করেছেন। ইসলাম বিরোধী সকল নাস্তিক-মুরতাদ সাবধান !!! Stay Tuned for Next down…’
আরো উল্লেখ আছে, ব্যক্তি জীবনে কেউ আউল-বাউল-লালনভক্ত কিংবা পাগল হলে, তাতে কার কি? কিন্তু ইসলামী শরীয়তের কোনো আহকাম নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে কিংবা শরীয়ত পালনে বাধা দিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। (ইনশাআল্লাহ)
অন্য স্ট্যাটাসের এক প্যারায় বলা হয়, কোনো সাধারণ মুসলমান, সাধারণ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কিংবা যারা আল্লাহর দ্বীনের সঙ্গে শত্রুতা করছে না, তারা কখনোই আমাদের টার্গেট নয়। যদিও ‘হলুদ আলো’ (প্রথম আলো) ধরনের কুফরীপন্থী পত্রিকাগুলো হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেনো মুজাহিদীনদের হাতে তাঁর শত্রুদেরকে শাস্তি প্রদান করেন এবং মুমিনদের অন্তরকে প্রশান্ত করেন।
এদিকে সরাসরি হুমকি দিয়ে একের পর এক স্ট্যাটাস দিলেও তাদের সম্পর্কে এখনো অন্ধকারে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোথা থেকে কারা কিভাবে এ পেজের সঙ্গে যুক্ত তার লেশমাত্র খুঁজে পাচ্ছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। বের করতে পারেনি আইপি ঠিকানাও। তবে পুলিশের এক কর্মকর্তা মনে করেন, ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামে খোলা ফেসবুক পেজটি ফেক।
বিশিষ্ট্য নাট্য ব্যাক্তিত্ব ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, মূলত: স্বাধীনতা বিরোধীরাই এ কাজ করছে। এর আগেও একাধিকবার চিঠি দিয়ে ও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে তারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা করছে। তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষের চেতনা লালনকারীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মলয় ভৌমিক বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চকেও এভবে নানা প্রকার হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে। বারবার তারা সুযোগ নিচ্ছে এবং নেবে এটাই বাস্তবতা। তবে এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষকে এক হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন জানান, প্রথমদিন থেকেই ফেসবুকের ওই পেজটি তারা দেখেছেন। কারা এটি করছে তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। দ্রুত হয়তো তাদের শনাক্ত করা যাবে। তখন বোঝা যাবে এটি প্রকৃতপক্ষে কারা চলাচ্ছে। ওই পেজটি আসল নাকি ফেক।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম খুনের সাড়ে ৩ঘন্টার মধ্যে কথিত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ ফেইসবুকে তাৎক্ষণিক স্ট্যাটাস দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে।