ফেসবুক প্রেম থাই তরুণী নাটোরে

Slider টপ নিউজ

65979_b5

নাটোর; সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন সুদূর থাইল্যান্ড থেকে সুপুত্তো ওরফে ওম (৩৬)। ভালোবেসে বিয়েও করেছেন বাংলাদেশের মুঠোফোন মেরামতকারী অনিক খান (২২) নামের এক যুবককে।

বুধবার বিকেলে নাটোর আদালত চত্বরে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এ সময় আদালত চত্বরে থাইকন্যা এবং বাংলাদেশি যুবকের বিবাহ দেখতে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। অনিক খানের বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার আমজাদ খানের ছেলে। ওম নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন সুফিয়া খাতুন।
আদালত চত্বরে হাসিমুখে সুপুত্তো ওরফে ওম  (৩৬) ‘আমাদের সমাজে বহু বিবাহ একটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এটা পচ্ছন্দ করি না। তাই বিয়ে করছিলাম না। হঠাৎ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের অনিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওর সরলতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। ধীরে ধীরে ওর প্রতি আমার আস্থা জন্মেছে। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে শুধু আমার করে নেয়ার জন্য বারবার এ দেশে ছুটে এসেছি। এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি এখন দারুণ সুখী।
 ওম জানান, তার বাড়ি থাইল্যান্ডের চো-অম জেলার পিচচোবড়ি এলাকায়। বাবা উইছাই ও মা নট্টাফ্রন। দু’জনই আলাদা থাকেন ভিন্ন ভিন্ন দেশে। তিনি পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে ব্যাংকে চাকরি করতেন। বর্তমানে ফাস্টফুডের ব্যবসা করেন। বন্ধুবান্ধবরা সবাই বিয়ে করেছেন। তারা বহুবিবাহে আসক্ত হয়েছেন। এটা তার ভালো লাগছিল না। তিনি বিয়ে করেন না। বয়স প্রায় ৩৬। দোকানে বসে ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের ২২ বছরের তরুণ অনিক খানকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠান। অনিক প্রস্তাব সমর্থন করলে তাদের মধ্যে চেনাজানা শুরু হয়। ফোনে কথাবার্তাও চলতে থাকে। তারা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেন। শুধু কথা বলার সীমাবদ্ধতা তাদের অস্থির করে তোলে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবা-মার অনুমতি নিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে বন্ধুর টানে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। বিমানবন্দরে অনিককে দেখে তাকে ওঁর আরো ভালো লাগে। অনিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অনিকের পরিবার তাতে সাড়া দেয় না। তবে অনিক ও তার পরিবারের সদস্যদের আদর আপ্যায়নে সে মুগ্ধ হয়। মাত্র পাঁচ দিনের ভিসা নিয়ে আসায় তড়িঘড়ি করে পুনরায় দেশে ফিরে যান। বলে যান, ছয় মাস পর আবার আসবেন। কিন্তু ছয় মাস অপেক্ষা করতে পারেননি। এ মাসের প্রথম দিকে তিনি আবারও অনিকের কাছে ছুটে এসেছেন। বিয়ে করার জন্য অনিকের পরিবারের সদস্যদের হাতে-পায়ে ধরেছেন। দিনের পর দিন কান্নাকাটি করেছেন। না খেয়ে অনশন পর্যন্ত করেছেন। অবশেষে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে বুধবার তারা ধর্মীয় ও হলফনামামুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তার নাম সুফিয়া খাতুন। বর্তমানে তারা লালপুর উপজেলার গোপালপুরের চামটা গ্রামে অনিক খানের এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করছেন।
সুফিয়া ওরফে ওম বলেন, ‘মানুষের জীবন একটা। জীবনের সঙ্গীও একটা হওয়া উচিত। যেটা আমার সমাজে নেই। আমি বিশ্বাস করি অনিক আমার জীবনে একমাত্র সঙ্গী হয়ে থাকবে। ওকে পেয়ে আমি দারুণ খুশি।’
অনিক খান জানান, তার বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায়। পড়ালেখা তেমন একটা করেননি। তবে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন। সেখানে তার একটা মুঠোফোন মেরামতের দোকান রয়েছে। দোকানে বসে অলস সময় কাটাতে গিয়ে ফেসবুকে ওমের সঙ্গে পরিচয়। এখন তারা একে অপরের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ না রেখে থাকতে পারেন না। ওম তাকে একটা ভালো মোবাইল ফোন সেট উপহার দিয়েছেন। তাদের উভয়ের ফোনে সব সময় ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। তারা ভিডিও কল করে দীর্ঘসময় কথা বলেন। এভাবেই তারা পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছেন। তারা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। অনিক বলেন, ‘সুফিয়া আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি ওর সঙ্গে সারা জীবন থাকতে চাই।’
অনিকের বাবা আজাদ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি খুব ভালো। মাত্র ক’দিনে সে আমাদের আপন করে নিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, শিক্ষিতও না। তাতে ওর কষ্ট নেই। আমাদের ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভেবে সে সারাক্ষণ মন খারাপ করে আছে। ওর জন্য আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *