সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেটে পাহাড়-টিলা কাটায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বে সিলেটের উপকণ্ঠ বালুচরে টিলা কেটে স্থাপনা নির্মান করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। প্রায় দুই মাস ধরে বালুচরে টিলা কেটে স্থাপনা নির্মানের কাজ চললেও এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
সোমবার অনুমতির জন্য আবেদন করলে টিলা কাটায় আপত্তি জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। স্থাপনা নির্মান বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানা যায়, নগরীর বালুচরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টোপাশেই বিশাল টিলা। স্থানীয়ভাবে এটি মদন টিলা নামে পরিচিত।
জেলা দুগ্ধ খামারের নিয়ন্ত্রাধিন এই টিলার আট একর ভূমিতে ব্রিডিং স্টেশন ও গবেষণাগার নির্মান করছে পাণিসম্পদ অধিদপ্তর। গরুর কৃত্রিম প্রজনন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনের জন্য এই ব্রিডিং স্টেশন নির্মান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা। এই প্রকল্পের আওতায় ছয়টি শেড, অফিস কক্ষ, স্টোরেজ ও গবেষাণাগার নির্মান করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে থেকে মদন টিলা কেটে স্থাপনা নির্মান শুরু করা হয়। তখন সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থাপনা নির্মান করা হলেও টিলা কাটা হবে না। টিলার ফাঁকে ফাঁকে ফাঁকে স্থাপনাগুলো নির্মান করা হবে ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে টিলা কিছুটা ড্রেসিং করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে জানান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কাজে পাহাড়-টিলা কাটা বা অন্য কোনো উপায়ে ভূমিরূপ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ঝুঁকিপূর্ণ টিলা-পাহাড়ের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন সাপেক্ষে ঝুঁকি হ্রাস করতে ড্রেসিং (ঝুঁকিপূর্ণ অংশ কেটে সমান্তরাল করা) করা যাবে।
এছাড়া টিলার উপরে স্থাপনা নির্মান করতে গেলেও আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বালুচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিলার উপরে বড় বড় গর্ত করছেন শ্রমিকরা। প্রায় ১০ জন শ্রমিক গর্ত করার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া টিলার পাদদেশ কেটে নির্মান করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। টিলা কেটে স্থাপনা নির্মানের ব্যপারে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের একেকজন একেক তথ্য দিয়েছেন।
জেলা দুগ্ধ খামারের জমিতে কাজ হওয়ায় প্রকল্পের কাজ তদারকি করেন জেলা দুগ্ধ খামারের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। তবে টিলা কাটা হবো না, হালকা-পাতলা ছাটাই হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো নুরুল ইসলাম রোববার বলেন, ‘কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রুত স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) নামের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে মাসখানেক আগে। এখানে গরুর জাত উন্নয়নের জন্য গবেষণা হবে। কৃত্রিম প্রজননের জন্য সিমেন সংগ্রহ করা হবে। এগুলো সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় বিতরণ করা হবে।
এখনো পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে দেওয়া জন্য একটি আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের অনুমতি পেলেই টিলা ড্রেসিং করা হবে। টিলার মাটি ৩ ফুট পর্যন্ত কাটা হবে। প্রকল্প পরিচালক বিদেশে থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করতে দেরী হয়েছে বলে জানান তিনি।
আর প্রকল্প পরিচালক ডা. বেলাল হোসেন বলেন, আমরা কোনো টিলা কাটবো না। টিলার ফাঁকে ফাঁকে স্থাপনা নির্মান নির্মান করবো। তিনি আরো বলেন, সিলেটে কোনো কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র নেই। সিমন সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে ষাড় পালন করে সিমেন সংগ্রহ ও জাত উন্নয়ন করা হবে।
তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, প্রকল্পের জন্য টিলাভূমির জায়গা নির্বাচনের পরই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুযমোদন নেওয়া উচিত। সেটা না করেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর টিলা কেটে স্থাপনা নির্মান করছে। এটা পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন।
সোমবার পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, সোমবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বালুচর এলাকার টিলা ড্রেসিং করে স্থাপনা নির্মানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে হয়েছে। আমরা মৌখিকভাবে তাদের না করে দিয়েছি। স্থাপনা নির্মান বন্ধ রাখতেও বলেছি। এ ব্যাপারে তাদের লিখিতভাবে জানাবো।
মাসখানেক আগে থেকেই টিলা কেটে স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।