মাশরাফিদের আইরিশ–বিড়ম্বনা

Slider খেলা

th

 ঢাকা; আন্তর্জাতিক ম্যাচ, অথচ ড্রেসিংরুমে কোনো টেলিভিশন নেই! মাঠ থেকে ফিরে ব্যাটসম্যানরা দেখতে পারছেন না আউটের অ্যাকশন রিপ্লে। পরের ব্যাটসম্যানদের জন্যও উইকেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বোঝার উপায় থাকে না কার বোলিং কেমন হচ্ছে, উইকেটই বা কী আচরণ করছে।

আয়ারল্যান্ডে চলমান ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজে দলগুলোর অপ্রতুলসুযোগ-সুবিধার এটি একটি মাত্র নমুনা। ডাবলিনে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের দিনের ওই ঘটনা ছাড়াও বাংলাদেশ দল নিয়মিতই নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। দলের সঙ্গে থাকা বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুসের ভাষায়, ‘বেলফাস্ট তা-ও অনেক ভালো ছিল। ডাবলিনে প্রচুর সমস্যা। কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই। ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের সিইওকে বলেছি, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকদের বলেছি। তাতেও লাভ হয়নি।’

সিরিজের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা নিয়ে আরেক অতিথি দল নিউজিল্যান্ডও মহা বিরক্ত। এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আর কখনো আয়ারল্যান্ডে যাবে না বলেও নাকি হুমকি দিয়েছে কিউইরা।

বাংলাদেশ দল বেলফাস্ট থেকে ডাবলিনে গেছে গত ১১ মে। পরদিনই ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ। একদিন বিশ্রাম নিয়ে কালই প্রথম পুরো অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিল দলটা। কিন্তু অব্যবস্থাপনার কারণে সেটাও ভালোভাবে করা যায়নি।

অনুশীলন ছিল ডাবলিন থেকে সড়কপথে ৩০-৩৫ মিনিট দূরের ব্যালব্রিগান ক্রিকেট ক্লাব মাঠে। কিন্তু বাসচালক ভুল করে দলকে নিয়ে যান একটা ইনডোরে। ভুল বোঝার পর সেখান থেকে বাস ঘুরিয়ে ব্যালব্রিগান মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দুটি অনুশীলন উইকেটের কোনোটিই ব্যাটিং অনুশীলনের উপযোগী নয়।

অনুশীলনের জন্য তাই ব্যাটসম্যানদের ফিরে যেতে হয়েছে সেই ইনডোরে। সঙ্গে যান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবীরা ও সহকারী কোচ রিচার্ড হ্যালসল। তবে কোনো নেট বোলার ছিল না। সম্বল বোলিং মেশিন। বোলারদের নিয়ে কোর্টনি ওয়ালশ ও ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন অনুশীলন করেছেন ব্যালব্রিগান মাঠের অপ্রস্তুত উইকেটে। পরে ফিল্ডিং অনুশীলনে ব্যাটসম্যানরাও যোগ দেন তাঁদের সঙ্গে।

১৭ মে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন আছে শুধু কাল। তবে জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, ‘আজ (গতকাল) যেহেতু ঠিকভাবে অনুশীলন করা যায়নি, আমরা আগামীকাল (আজ) বিশ্রামের দিনেও বাড়তি অনুশীলনের সুযোগ চেয়েছি।’

আয়ারল্যান্ডে সমস্যা হচ্ছে খাওয়াদাওয়া নিয়েও। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানটা কী, সে সম্পর্কেই নাকি ধারণা নেই ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজকদের। ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংসের এক পদ, অনুশীলনের দিনগুলোয় বাংলাদেশ দলের ডাইনিং টেবিলে প্রতিদিন থাকছে এই এক খাবারই। মুঠোফোনে বারবারই অসহায় শোনাচ্ছিল জালাল ইউনুসের কণ্ঠ, ‘লিয়াজোঁ অফিসার একজন দিয়েছে, সে হলো লেভেল-২ কোচ। এসবের কিছুই বোঝে না। আমাদের কোচ, খেলোয়াড় সবাই খুব হতাশ।’

কিন্তু যেকোনো সিরিজের আগেই তো অংশগ্রহণকারী বোর্ডগুলোর মধ্যে একটা চুক্তি (এমওইউ) হয়। সিরিজ বা সফরের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার কথা তাতে উল্লেখ থাকে। আয়ারল্যান্ড কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবে, সেটা তাই আগেই জানার কথা বিসিবির। নাকি প্রতিশ্রুতি দিয়েও এখন সেটি পূরণ করছে না আইরিশরা!

একটি সূত্রে অবশ্য জানা গেছে, মাশরাফিদের চাহিদামতো সব সুযোগ-সুবিধা যে ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড দিতে পারবে না, সেটি আঁচ করা গিয়েছিল এমওইউ নিয়ে দুই বোর্ডের আলোচনার সময়ই। তাদের ক্রিকেট অবকাঠামোই এখনো সে রকম নয়। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা কোচিং স্টাফের এক সদস্য এবং বিসিবির শীর্ষ কর্তারা বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দেননি। জালাল ইউনুস অবশ্য দাবি করলেন, ‘যেসব সুযোগ-সুবিধা আমাদের পাওয়ার কথা, তার ন্যূনতমটা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে ওরা। অথচ এমওইউতে সবই উল্লেখ ছিল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *