ঢাকা; বনানীর হোটেলে নির্যাতিত এক তরুণীর বাসায় সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর পুলিশে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু অস্ত্রধারী কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে রাত ৮টার দিকে নির্যাতিত ওই তরুণী জানান, দুই যুবক বাড়িতে গিয়েছিলো। গেইটে গিয়ে
নিরাপত্তাকর্মীকে জানায়, তারা আমাদের বাসায় যেতে চায়। নিরাপত্তাকর্মী তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা কোনো পরিচয় দিতে চায়নি। এসময় নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মী ইন্টারকমে কল দেয়। তখন নির্যাতিত ওই তরুণী কথা বলেন। নির্যাতিত ওই তরুণী জানান, ফোনে যখন কথা বলেছি তখন তাদের একজন উত্তেজিত হয়ে কথা বলেছে। তারা বাসায় ঢুকে কথা বলতে চাইলে আমি রাজি হইনি। এসময় তারা দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছে নির্যাতিত ওই তরুণীর পরিবার। নির্যাতিত ওই তরুণী বলেন, মামলা করার পর থেকে আতঙ্কে বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকি না। নানাভাবে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বনানীর হোটেলে ওই ঘটনা ঘটার পর আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছিলো। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মেরে ফেলা হবে। বাসায় গানম্যান পাঠিয়ে আমাদের তথ্য নেয়া হয়েছে। তারপরও সাহস করে মামলা করেছি। এখন পুরো পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। আসামিরা অনেক প্রভাবশালী। তারা অনেক কিছুই করতে পারে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়ে নির্যাতিত ওই তরুণী বলেন, নাঈম আশরাফ এখনো বাইরে আছে। নাঈম নিজেও অনেক কিছু করতে পারে। তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য নির্যাতিতা বান্ধবীসহ নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, খবর পেয়ে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গেছি। দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলেছি। দুই যুবক মোটরসাইকেলযোগে সেখানে গিয়েছিলো। তারা ডিবি পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চেয়েছে। মেয়েটি কথা বলতে রাজি না হওয়ায় তারা ফিরে গেছে। তবে ওই দুই যুবক কারা, কেন এসেছিলো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উদ্ধার হয়নি সেই ভিডিও ফুটেজ: বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নির্যাতিতা দুই তরুণী অভিযোগ করেছেন, সাফাতের নির্দেশে ধর্ষণের সময় গাড়িচালক বিল্লাল ভিডিও করেছিলো। সেই ভিডিও এখনো জব্দ করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছে, আমি ধর্ষণ করছি সেই ভিডিও আমি করব কেন। এ বিষয়ে তরুণীরা কোনো অভিযোগ করবে না বলেই তাদের আশ্বস্ত করেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে মামলা হওয়ায় অবাক হয় সাফাত। সাফাত আহমেদ জানায়, অনেক মেয়ে স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে চায়। এরকম প্রতিষ্ঠিত অনেক মডেল, অভিনেত্রীর নামও বলেছে সাফাত। বিনিময়ে তাদের নানা উপহার দিয়েছে। ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলের পরিচালক মাহির হারুন রাতে কেক দিয়ে সাফাতকে উইস করেছিলো। ধারণা করা হচ্ছে হোটেল কর্তৃপক্ষের এতে সহযোগিতা রয়েছে। এই হোটেলে এরকম আরো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
পৃথকভাবে গতকাল কয়েক দফা সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে সাকিফ জানিয়েছে, ধর্ষণের বিষয়টি শুরুতে জানতো না। ধারণা করেছিলো স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক করেছে দুই তরুণী। পরবর্তীতে জানার পর এটা সমাধান করার চেষ্টা করেছে সাকিফ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে তারা। তাই পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সব তথ্যই বের হয়ে আসবে বলে আশা করছেন তারা। এছাড়াও গতকাল দুপুরে সাফাতের ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আসমা মিলি বলেন, সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। প্রয়োজনে আরো অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ ও ডিবি’র পৃথক টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।