ঢাকা; ২৯শে এপ্রিল ২০১৭। জাতির জন্য এক লজ্জাজনক দিন। যদিও সে লজ্জা যে বেশি মানুষকে স্পর্শ করতে পারেনি তা এখন অনেকটাই জ্বলজ্বলে। হয়তোবা মানুষ বলতে আমরা যাদের চিনি তাদের কারো কাছেই এটা লজ্জা মনে হয়নি। মনে হয়নি, মানবতা আত্মহত্যা করেছে। আমরা হয়তো ভুলতে বসেছি, এ দিনে গাজীপুর শ্রীপুরের হজরত আলী তার কন্যাকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
সমাজ ব্যবস্থার প্রতি এক নিদারুণ প্রতিবাদে হতাশাগ্রস্ত এক পিতা কন্যাসমেত মৃত্যুর পথ বেছে নেন। কন্যার শ্লীলতাহানির বিচার চেয়েছিলেন তিনি। বিচার দাবি করেছিলেন, সমাজপতিদের কাছে, শৃঙ্খলাপতিদের কাছে। বিচার পাননি। উল্টো নিজের সহায়-সম্পত্তি নিয়েও পড়েছিলেন হয়রানির মুখে। সিরিয়ার সেই ছোট্ট শিশুটির কথাও হয়তো আমরা ভুলে গেছি। বোমায় আক্রান্ত হওয়ার পর যে বলেছিল, আল্লাহকে আমি সবকিছু বলে দেবো। হজরত আলী তার কন্যাকে নিয়েও হয়তো সৃষ্টিকর্তার কাছে সব কিছু বলে দিতে চলে গেছেন।
তবে এই রাষ্ট্র, সমাজ আর মানুষের যে হজরত আলীর আত্মাহুতিতে তেমন কিছু আসে যায়নি তা পরিষ্কার বুঝা যায়। না তার জন্য কোথাও মিছিল বের হয়নি। কোনো মাতম হয়নি। কোথাও পাস হয়নি কোনো শোক প্রস্তাব। সোশ্যাল মিডিয়াতে তেমন শোরগোলও হয়নি। হয়নি ক্রন্দনের মাহফিল। সংবাদপত্রে এ খবর বের হওয়ার পর কিছু শোরগোল অবশ্য হয়েছে। একেবারেই মৃদু। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক হজরত আলীর বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন। সব হারানো আলীর স্ত্রী হালিমা বেগমকে স্বান্ত্বনা দিয়েছিলেন। আশ্বস্ত করেছিলেন, অপরাধীরা ধরা পড়বে। পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। থানায় মামলাও হয়। কিন্তু যার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ সেই ফারুক গ্রেপ্তারের খবর এখনো আমাদের কানে এসে পৌঁছায়নি। এ খবর কী আমরা পাবো কোনোদিন? হালিমা কী দেখে যেতে পারবেন, তার স্বামী যে বিচারহীনতার কারণে মৃত্যুর পথ বেঁচে নিয়েছিলেন, সে বিচারহীনতা থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে।
বাড়ির পাশেই দুটি কবর। একটিতে স্বামী, অন্যটিতে কন্যা শুয়ে আছেন। হালিমা বেগম সেদিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। হয়তো তিনি বিচার বুঝেন। হয়তো বুঝেন না। তার স্বামী আর কন্যা জীবনের বিনিময়ে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন ‘বিচারহীনতা’ কি জিনিস। হালিমার অভিশাপ আমাদের বুকে এসে বাজে। একটি দেশের জন্য, একটি জাতির জন্য এ এক অসামান্য ক্ষতি। স্বামী-কন্যার কবরের দিকে তাকিয়ে থাকা এ কষ্ট লিখে বুঝাবার নয়। এটা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। ভোগবাদের যুগও। প্রতিবাদ বলতে এখন আর মিছিল-মিটিং বুঝায় না। অবশ্য ভোগবাদ বললে ভোগবাদকেও ছোট করা হয়। পশ্চিমা দুনিয়াতেও আমরা নানা সামাজিক ইস্যুতে লাখ লাখ মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখি। প্রতিবাদে মুখর হতে দেখি জনগণকে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়াতেই এখন তারা সবকিছু সেরে ফেলতে চান। এমনকি কারো মৃত্যুর পর, শোক জানানোর কাজটাও তারা শেষ করেন ফেসবুকে। জানাজায় অংশ নেয়া, মৃতদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এ নিয়ে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। যেন উন্নাসিক এক প্রজন্ম।
এতো কিছুর পর সীমিত মানুষ হলেও প্রতিবাদী হন। কোনো না কোনো অন্যায়ের বিচারও হয়। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা কোনোদিন ধরা পড়বেন না বলে মনে করা হয়, তারা ধরা পড়েন। আইনের লম্বা হাত থেকে তাদের রেহাই মেলে না। বছরের পর বছর দায়মুক্তি ভোগ করা অপরাধীরাও দণ্ডিত হন মৃত্যুদণ্ডে।
সময় বড় অদ্ভুত। কখনো কখনো এমন হয়, প্রার্থনায় নত হতে হয়। আমরা নত হই। দোয়া করি হজরত আলীকে যারা ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন, তারা ধরা পড়বেন। আইনের লম্বা হাত থেকে তারা রেহাই পাবেন না।
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ঘটনার ১৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় প্রধান আসামি ফারুক সহ অন্যদের আটক করে বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি শ্রীপুর থানা পুলিশ।
ঘটনার পর গাজীপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুরকে প্রধান করে একটি ও ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলীকে প্রধান করে অন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রথম দফা সময় শেষ হলেও দ্বিতীয় দফায় আবারো তদন্তের সময় বাড়ানো হয়।
এ ঘটনায় পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য হালিমা বাদী হয়ে ৩০শে এপ্রিল কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা করলেও কোনো ধরনের আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। দফায় দফায় তদন্ত কমিটির তদন্তের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার সপ্তম আসামি গোসিঙ্গা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন ঘটনার দিন থেকে আটক আছেন।
মামলার আসামিরা আটক না হওয়ায় হালিমার আতঙ্ক কাটেনি, চোখের জল শুকিয়ে গেলেও মনের আক্ষেপ যায়নি। সুবিচার নিয়ে এখন নতুন করে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে এ আত্মহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাস্থলের পাশের নূরুন্নাহার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা জুয়েনা আক্তারকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
এতো কিছুর পর সীমিত মানুষ হলেও প্রতিবাদী হন। কোনো না কোনো অন্যায়ের বিচারও হয়। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা কোনোদিন ধরা পড়বেন না বলে মনে করা হয়, তারা ধরা পড়েন। আইনের লম্বা হাত থেকে তাদের রেহাই মেলে না। বছরের পর বছর দায়মুক্তি ভোগ করা অপরাধীরাও দণ্ডিত হন মৃত্যুদণ্ডে।
সময় বড় অদ্ভুত। কখনো কখনো এমন হয়, প্রার্থনায় নত হতে হয়। আমরা নত হই। দোয়া করি হজরত আলীকে যারা ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন, তারা ধরা পড়বেন। আইনের লম্বা হাত থেকে তারা রেহাই পাবেন না।
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ঘটনার ১৫ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় প্রধান আসামি ফারুক সহ অন্যদের আটক করে বিচারের মুখোমুখি করতে পারেনি শ্রীপুর থানা পুলিশ।
ঘটনার পর গাজীপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুরকে প্রধান করে একটি ও ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলীকে প্রধান করে অন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রথম দফা সময় শেষ হলেও দ্বিতীয় দফায় আবারো তদন্তের সময় বাড়ানো হয়।
এ ঘটনায় পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য হালিমা বাদী হয়ে ৩০শে এপ্রিল কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা করলেও কোনো ধরনের আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। দফায় দফায় তদন্ত কমিটির তদন্তের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার সপ্তম আসামি গোসিঙ্গা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন ঘটনার দিন থেকে আটক আছেন।
মামলার আসামিরা আটক না হওয়ায় হালিমার আতঙ্ক কাটেনি, চোখের জল শুকিয়ে গেলেও মনের আক্ষেপ যায়নি। সুবিচার নিয়ে এখন নতুন করে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে এ আত্মহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাস্থলের পাশের নূরুন্নাহার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা জুয়েনা আক্তারকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।