ঢাকা; আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতির উদ্দেশে ‘ভিশন ২০৩০’ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তা উপস্থাপন করেন দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ৪১ পৃষ্ঠার লিখিত এ রূপকল্পে ৩৭টি অধ্যায়ে ২৫৬টি ধারায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সংবিধানের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার পরীক্ষা চালাবে। সেই সঙ্গে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনবে। রূপকল্প দেশের গণতন্ত্র, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, মানবসম্পদ, তথ্য-প্রযুক্তি, প্রবাসী কল্যাণ, গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার, নগরায়ন ও আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। রূপকল্পে বলা হয়েছে, বিএনপি বাংলাদেশকে একটি রংধনু জাতিতে পরিণত করতে চায়। এ জন্য প্রয়োজনে একটি সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে। সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকারের সমন্বয় ঘটাবে। দুর্নীতির সঙ্গে আপস করবে না। বিশেষ ক্ষমতা আইন, ৫৭ ধারাসহ সকল কালাকানুন বাতিল করবে। প্রশাসনে নিয়োগ ও পদোন্নতির যোগ্যতা হবে মেধা। দরিদ্র জনগণের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করবে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য চালু করবে পেনশন ফান্ড। মুক্তিযোদ্ধাদের ঘোষণা করবে রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ডলার। জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনই হবে বিএনপির অন্যতম অঙ্গীকার। বিএনপির শিক্ষানীতি হবে জীবনমুখী। চালু করা হবে শিক্ষা চ্যানেল। তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ভিওআইপি। প্রতি জেলায় প্রতিষ্ঠা করা হবে একটি স্মার্ট স্কুল। খেলাধুলায় চালু করা হবে ট্যালেন্ট হান্ট স্কিম। ভোটার ও ভোট প্রয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে প্রবাসীদের। স্থানীয় সরকারকে গুরুত্ব দিতে নেয়া হবে- ‘স্থানীয় নেতৃত্বেই টেকসই সমাধান সম্ভব’ নীতি। পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে স্বাস্থ্য বীমা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রয়োজনে আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলা হবে। শিল্পখাতে নেয়া হবে থ্রি আই নীতি। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে নৌ ও রেলপথে। দেশের বড় নদীগুলোতে বেশ কয়েকটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে। গণচীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালু করা হবে এথনিক ট্যুরিজম ও ওয়াটার ট্যুরিজম।
খালেদা জিয়া বলেন, যেকোনো দেশের জনগণ বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়া এগুতে পারে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের। পরিকল্পনা দ্বারা জাতি পায় কর্মস্পৃহা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রচনা করতে পারে একটি সুখ ও শান্তির নীড়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো জনগণের আশাআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে জাতিকে উন্নত সোপানের পথে পরিচালিত করা। এ পথ বাধা-বিঘ্ন মুক্ত নয়। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ওয়ান ডে গণতন্ত্র নয়: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করে। যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। বিএনপি ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নয়। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না বিএনপি। জন-আকাঙক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে ও তাদের সমপৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে বিএনপি। কর্তৃত্ববাদী শাসন ও ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করবে বিএনপি। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। বিধানসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে। বিএনপি এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলী পর্যালোচনা ও পুনঃপরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে। সংবিধানে ‘গণ-ভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করবে। খালেদা জিয়া বলেন, জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ সমপর্কিত বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর অর্পণ করা হবে। বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়। জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলাই হচ্ছে বিএনপির নীতি। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে।
সুশাসন নিশ্চিত করবে: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থপরতা ও দলীয়তার কালিমা মুক্ত করে এগুলোর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য আইনি ও প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নেবে বিএনপি। প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, সততা, মেধার উৎকর্ষ এবং সৃজনশীলতাকে বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস করবে না। সমাজের সর্বস্তরে দুষ্টক্ষতের মতো ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ এর অফিস কার্যকর করা হবে।
সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে: খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ ও কারাগার এ চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। সকল প্রকার কালা-কানুন বাতিল করা হবে। সকল প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে। মানবাধিকার সমপর্কিত জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে। বিচার-বোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করে সকল আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সম্বলিত আইন প্রণয়ন করে বাছাই কমিটি ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত/সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদ বিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার জট কমিয়ে আনা হবে। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া স্থানীয়ভাবে পাইলট ভিত্তিতে ‘জুরি’ ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, স্থানীয় বিচার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি উৎসাহিত করতে গ্রাম-আদালত সংস্কার, বিদ্যমান ইউনিয়ন কাউন্সিল ব্যবস্থায় গ্রাম-আদালতের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী অনানুষ্ঠানিক সালিশি আদালত পুনঃপ্রবর্তন করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী থানাগুলোতে অন-লাইন পদ্ধতি ও মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করে ফৌজদারি বিচার প্রার্থীদের আইনের নিরাপত্তা পাওয়ার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা: খালেদা জিয়া বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ করা হবে। জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, পুলিশের মোটিভেশন, ট্রেইনিং ও নৈতিক উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী পুলিশের ওপর বিচার বিভাগীয় তদারকি নিশ্চিত করে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুলিশ বাহিনীকে দক্ষতাসম্পন্ন যুগোপযোগী সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। তিনি বলেন, পুলিশের আবাসন ব্যবস্থা, ৮ ঘণ্টার ডিউটি, ঝুঁকিভাতা, যুক্তিসংগত ওভার-টাইমের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ ও প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে দেয়া হবে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী, জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সংস্কার করা হবে। বিশ্বায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধানের আলোকে একটি যথোপযুক্ত সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে। সকল পর্যায়ে ই-গভর্ন্যান্স চালু ও বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
পররাষ্ট্রনীতি: খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপির দৃঢ় অঙ্গীকার অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বিশেষ সমপর্ক গড়ে তোলা হবে।
পেনশন ফান্ড গঠন: খালেদা জিয়া বলেন, দারিদ্র্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ধর্ম বর্ণ-নির্বিশেষে সুবিধাবঞ্চিত হত-দরিদ্র মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরো সমপ্রসারিত করা হবে। অতি স্বল্প আয়ের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি প্রদানে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধক্যের দুর্দশা লাঘবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি ‘পেনশন ফান্ড’ গঠন করা হবে। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত প্রত্যেকের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ এই ফান্ডে জমার ভিত্তিতে পেনশন ফান্ডটি গড়ে তোলা হবে এবং ন্যায্য হারে মুনাফা প্রদান করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিত নাগরিক ঘোষণা: খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক‘ ঘোষণা করবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি ও ভাতা ব্যবস্থাপনাকে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ মুক্তিযোদ্ধা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হবে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি ও মুক্তিযোদ্ধাদের বাস-ট্রেন-লঞ্চে যাতায়াতে অর্ধেক ভাড়ার বিধান করা হবে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ জাতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারে অন্যতম কারণ। বিএনপি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিএনপি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনোরকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না এবং সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণে এসব গণবিরোধী চক্র নির্মূল করা হবে।
মাথাপিছু আয় হবে ৫০০০ ডলার: খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করে এবং এর সুফলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বিএনপি ধনী দরিদ্রের বৈষম্যের সমস্যাকে মোকাবিলা করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্ত্বশাসন, ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। শেয়ারমার্কেট ও ব্যাংক লুট বন্ধে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে। আধুনিক সেবাখাত যেমন- ব্যাংক, ইন্সিওরেন্স ও ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আইটি ইন্ডাস্ট্রি, বিনোদন শিল্প, পর্যটন শিল্প, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, দূর-শিক্ষণ, এয়ার-হাব, ওয়াটার হাব, সিকিউরিটি সার্ভিস, বন্দর ও জাহাজ, টেলি-মেডিসিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ করার উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে। যে কোনো আধুনিক ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ খাতে ব্যক্তি-খাত সহায়ক বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জলের সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পুলিশি সেবা, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশাসনিক সেবাসহ সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহের সেবার মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করা হবে।
জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনই হবে অন্যতম অঙ্গীকার: খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী কর্মক্ষম বয়সের মধ্যে পড়ে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ লাখ মানুষ কর্ম-বাজারে প্রবেশ করে, এর মধ্যে মাত্র ১০ লাখ মানুষ কাজ পায়। বাকিরা থাকে বেকার। এ সব কর্মক্ষম বেকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনই হবে বিএনপির অন্যতম অগ্রাধিকার।
একটি শিক্ষা চ্যানেল চালু করা হবে: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শিক্ষাকে কর্মমুখী ও ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। বিএনপি শিক্ষার প্রতিটি স্তরে গুণগত মান নিশ্চিত করবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় অনগ্রসরতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। শিক্ষা ধনিক শ্রেণির একচেটিয়া অধিকার নয়। বিএনপি ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করবে। এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫% অর্থ ব্যয় করা হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সমপ্রসারণের জন্য জাতীয় টিভিতে একটি পৃথক শিক্ষা চ্যানেল চালু করা হবে। বিশ্বের মেধাজগৎ ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে নতুন মাত্রা যোগ করতে বিদেশি ভাষা শেখার জন্য অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। সরকারি উদ্যোগে বিদেশি ভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন ভাতাদি বাড়ানো হবে। বিএনপ্থির শিক্ষানীতি হবে জীবনমুখী, ডিগ্রীমুখী নয়। সর্বপর্যায়ে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জেন্ডার ও অর্থনৈতিক বাধাসমূহ দূর করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করে ছাত্রদের মধ্য হতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিকাশের পথ সুগম করা হবে। মাদরাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। তাদের কারিকুলামে পেশাভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রতি জেলায় স্মার্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তি খাত হবে বিএনপির বিশেষ অগ্রাধিকার খাত। বর্তমানে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম। যা মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানেরও নিচে। বিএনপি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলায় সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেবাখাত-নির্ভর উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সংগতি রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে রূপান্তর করা হবে। আউটসোর্সিং এবং সফটওয়্যার খাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিদেশ হতে অর্জিত অর্থ দেশে আনয়নের ক্ষেত্রে সকল প্রকার অযৌক্তিক বাধা দূর করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, ভিওআইপি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ইন্টারনেটের ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা হবে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে বিশেষ করে মফঃস্বলে উচ্চ গতির ফোর-জি কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। উচ্চ গতির ইন্টারনেট কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার শিল্পে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়া হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল উপাদানগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে দেশে উৎপাদন উৎসাহিত করা হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্ক, এডুকেশন পার্ক, কম্পিউটার ভিলেজ, আইটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞান বিকাশ ও দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার সমর্থিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, প্রত্যেক জেলায় একটি করে ‘স্মার্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং এসব স্কুল অন্যান্য স্কুলের জন্য মডেল প্রযুক্তি প্রদর্শকের কাজ করবে। প্রতি জেলায় একটি করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ প্রাথমিক স্তরে প্রশিক্ষিত শিক্ষক, হার্ড-ওয়্যার, ল্যাবরেটরিসহ সব দিক থেকে উন্নততর আইটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিএনপি জনগণের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলে তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সকল আইনের অগণতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রনমূলক ধারাসমূহ সংশোধন করবে।
খেলাধুলায় ট্যালেন্ট হান্ট স্কিম চাল হবে: খালেদা জিয়া বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে খেলাধুলার কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ যাতে একটি গ্রহণযোগ্য স্থান করে নিতে পারে সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতি জেলায় একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ক্রীড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। আধুনিক জাতীয় অলিম্পিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ক্রীড়া ও খেলাধুলার উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষক, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও ক্রীড়া সরঞ্জামাদি সংগ্রহের জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হবে। ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রীড়া ও খেলাধুলার মান উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্ত করতে আরও উৎসাহিত করা হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ স্কিম চালু করা হবে।
প্রবাসীদের ভোটার করা হবে: খালেদা জিয়া বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত অভিবাসন নিশ্চিতকরণ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সুচিন্তিুত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রণোদনাসহ সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা সমাধানে দ্বিপাক্ষিক-চুক্তি বা সমঝোতা স্বারকের আলোকে সংশ্লিষ্ট সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিশ্বের যে সব দেশে ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে, ঐসব দূতাবাসে কনসুলার সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
৫৭ ধারা বাতিল করা হবে: খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাকে সব সময় স্বাগত জানায়। তথ্য প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য মুক্ত চিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি নীতিমালা থাকা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করবে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অন-লাইন মিডিয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। বিএনপি সৎ সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করবে এবং চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত করবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রুজুকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
স্থানীয় সরকার: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। দেশ চলবে তৃণমূলের জনগণের ইচ্ছায় ও মতামতের ভিত্তিতে। ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে অধিকতর শক্তিশালী করা হবে যাতে এ সংস্থাগুলো উন্নয়ন কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রমসহ জনগণের জন্য পরিষেবা প্রদানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষমতা ও উন্নয়নের ভরকেন্দ্র হবে গ্রামমুখী। আইনের মাধ্যমে গঠিত একটি স্বাধীন কমিশন সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা করবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আদালতের দণ্ড ছাড়া বরখাস্ত ও অপসারণ করা হবে না।
কৃষি ও কৃষক: খালেদা জিয়া বলেন, রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি যৌক্তিক অংশ কৃষি গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হবে। এই ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্যবীমা, পশুবীমা, মৎস্যবীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হবে। কৃষি-পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পখাতকে প্রণোদনা দেয়া হবে।
শ্রমিক কল্যাণ: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি শ্রমিক শ্রেণির ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথ দরকষাকষি করার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করবে। বাজারমূল্য ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সকল সেক্টরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর রিভিউ ব্যবস্থা চালু করা হবে। যৌক্তিক শ্রমিক স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিখাতের দায়িত্ব সমপর্কে আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করবে। এই আইন ও বিধি হবে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই ধরনের ব্যবস্থা থাকবে রাষ্ট্রীয় খাতের জন্যও।
নগরায়ন ও আবাসন: খালেদা জিয়া বলেন, দেশের দ্রুত বর্ধনশীল এবং নৈরাজ্যপূর্ণ নগরায়নকে সুশৃঙ্খল করতে একটি জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ, জেলা ও উপজেলা শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীগুলোতে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় সাশ্রয়ী মূল্যে পরিকল্পিত আবাসন সুবিধা প্রদানের প্রয়াস নিবে।
‘নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ শ্রেয়’: এই নীতির ভিত্তিতে বিএনপি সংক্রামক, অসংক্রামক ও নতুন উদ্ভূত রোগসমূহের বিস্তার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। খালেদা জিয়া বলেন, জিডিপির ৫% অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে। বিশিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতীয় এক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উন্নত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণে উৎসাহ প্রদান করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি সমস্যার সমাধান: খালেদা জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিএনপি আঞ্চলিক ও পারসপরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে কার্যকর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, কাঙিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির চাহিদা পূরণের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ আনুমানিক ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্যোগ নেবে। অদক্ষ পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ অতি জরুরিভিত্তিতে আধুনিকায়ন এবং পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি উৎস বহুমুখী করা হবে। উপযুক্ত স্থানে ৫০ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন রিফাইনারী নির্মাণ করা হবে। দেশের স্থলভাগ এবং বঙ্গোপসাগরে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র, তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা সমপ্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক পানি-ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে স্বল্প খরচে পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন, আন্ত:দেশীয় বিতরণ সিস্টেম উন্নয়ন ও আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, সমুদ্রের নিঃশেষযোগ্য সমপদ যেমন- গ্যাস, তেল ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হবে। জরিপের ভিত্তিতে এসব সমপদ উত্তোলন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণে নির্ভরযোগ্য নীতিকৌশল প্রণয়ন করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা, গোমতী, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে আন্ডারগ্রাউন্ড-টানেল নির্মাণ করা হবে। গত বিএনপি সরকারের সময়ে ঢাকার পানগাঁয়ে নির্মিত কন্টেইনার টার্মিনালের মতো ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের নিকটস্থ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এশিয়ান হাইওয়ে এবং ঢাকা-কুনমিং রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নকল্পে দ্বিতীয় যমুনা সেতু, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু ও ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, গোমতী ও কর্ণফুলী নদীর উপর আরো সেতু নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন ছোট-বড় নদীর উপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের দ্রুত যোগাযোগের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে। গণচীনের ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। খালেদা জিয়া বলেন, পর্যটন শিল্পকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রবেশ-পথগুলোকে অধিকতর পরিচ্ছন্ন, ঝামেলামুক্ত এবং সেবামুখী প্রবেশ-পথ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি: খালেদা জিয়া বলেন, দল-মত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মকর্মের অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সমপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের সকল অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম তা অর্জন কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। আশা করি, এই ভিশন বাস্তবায়নে আমরা দেশবাসীর সক্রিয় সমর্থনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহেরও সহযোগিতা পাবো। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক এই ভিশন বাস্তবায়নে আমাদের সক্রিয় সমর্থন জানাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। রূপকল্প উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, গণমাধ্যম সম্পাদক, বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, যেকোনো দেশের জনগণ বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়া এগুতে পারে না। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের। পরিকল্পনা দ্বারা জাতি পায় কর্মস্পৃহা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রচনা করতে পারে একটি সুখ ও শান্তির নীড়। রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো জনগণের আশাআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে জাতিকে উন্নত সোপানের পথে পরিচালিত করা। এ পথ বাধা-বিঘ্ন মুক্ত নয়। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ওয়ান ডে গণতন্ত্র নয়: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাস করে। যেখানে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত হবে। বিএনপি ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নয়। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না বিএনপি। জন-আকাঙক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে ও তাদের সমপৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে বিএনপি। কর্তৃত্ববাদী শাসন ও ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করবে বিএনপি। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। বিধানসহ কয়েকটি অগণতান্ত্রিক বিধান প্রণয়ন করেছে। বিএনপি এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলী পর্যালোচনা ও পুনঃপরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে। সংবিধানে ‘গণ-ভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করবে। খালেদা জিয়া বলেন, জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। জাতীয় স্বার্থ সমপর্কিত বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর অর্পণ করা হবে। বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়। জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলাই হচ্ছে বিএনপির নীতি। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে।
সুশাসন নিশ্চিত করবে: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো স্বার্থপরতা ও দলীয়তার কালিমা মুক্ত করে এগুলোর দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য আইনি ও প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নেবে বিএনপি। প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, সততা, মেধার উৎকর্ষ এবং সৃজনশীলতাকে বেসামরিক ও সামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস করবে না। সমাজের সর্বস্তরে দুষ্টক্ষতের মতো ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ এর অফিস কার্যকর করা হবে।
সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে: খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ ও কারাগার এ চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। সকল প্রকার কালা-কানুন বাতিল করা হবে। সকল প্রকার নিষ্ঠুর আচরণ থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে। মানবাধিকার সমপর্কিত জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে। বিচার-বোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করে সকল আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে। সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ড সম্বলিত আইন প্রণয়ন করে বাছাই কমিটি ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত/সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদ বিবরণী জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার জট কমিয়ে আনা হবে। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া স্থানীয়ভাবে পাইলট ভিত্তিতে ‘জুরি’ ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, স্থানীয় বিচার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি উৎসাহিত করতে গ্রাম-আদালত সংস্কার, বিদ্যমান ইউনিয়ন কাউন্সিল ব্যবস্থায় গ্রাম-আদালতের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী অনানুষ্ঠানিক সালিশি আদালত পুনঃপ্রবর্তন করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে। তিনি বলেন, দেশব্যাপী থানাগুলোতে অন-লাইন পদ্ধতি ও মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করে ফৌজদারি বিচার প্রার্থীদের আইনের নিরাপত্তা পাওয়ার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা: খালেদা জিয়া বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী এবং সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে। সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ভিত্তি ও বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ করা হবে। জাতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হবে। তিনি বলেন, পুলিশের মোটিভেশন, ট্রেইনিং ও নৈতিক উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী পুলিশের ওপর বিচার বিভাগীয় তদারকি নিশ্চিত করে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুলিশ বাহিনীকে দক্ষতাসম্পন্ন যুগোপযোগী সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। তিনি বলেন, পুলিশের আবাসন ব্যবস্থা, ৮ ঘণ্টার ডিউটি, ঝুঁকিভাতা, যুক্তিসংগত ওভার-টাইমের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ ও প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি হাতে দেয়া হবে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী, জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সংস্কার করা হবে। বিশ্বায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধানের আলোকে একটি যথোপযুক্ত সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে। সকল পর্যায়ে ই-গভর্ন্যান্স চালু ও বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
পররাষ্ট্রনীতি: খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপির দৃঢ় অঙ্গীকার অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া হবে। মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বিশেষ সমপর্ক গড়ে তোলা হবে।
পেনশন ফান্ড গঠন: খালেদা জিয়া বলেন, দারিদ্র্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত ধর্ম বর্ণ-নির্বিশেষে সুবিধাবঞ্চিত হত-দরিদ্র মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরো সমপ্রসারিত করা হবে। অতি স্বল্প আয়ের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি প্রদানে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধক্যের দুর্দশা লাঘবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি ‘পেনশন ফান্ড’ গঠন করা হবে। বেসরকারি খাতে নিয়োজিত প্রত্যেকের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ এই ফান্ডে জমার ভিত্তিতে পেনশন ফান্ডটি গড়ে তোলা হবে এবং ন্যায্য হারে মুনাফা প্রদান করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিত নাগরিক ঘোষণা: খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক‘ ঘোষণা করবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি ও ভাতা ব্যবস্থাপনাকে দুর্নীতি ও ত্রুটিমুক্ত করা হবে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ মুক্তিযোদ্ধা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হবে এবং সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি ও মুক্তিযোদ্ধাদের বাস-ট্রেন-লঞ্চে যাতায়াতে অর্ধেক ভাড়ার বিধান করা হবে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ জাতির জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারে অন্যতম কারণ। বিএনপি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিএনপি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনোরকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না এবং সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং জনগণের অংশগ্রহণে এসব গণবিরোধী চক্র নির্মূল করা হবে।
মাথাপিছু আয় হবে ৫০০০ ডলার: খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রবৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করে এবং এর সুফলের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে বিএনপি ধনী দরিদ্রের বৈষম্যের সমস্যাকে মোকাবিলা করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্ত্বশাসন, ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। শেয়ারমার্কেট ও ব্যাংক লুট বন্ধে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহ পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে। আধুনিক সেবাখাত যেমন- ব্যাংক, ইন্সিওরেন্স ও ফিনান্সিয়াল সার্ভিস, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আইটি ইন্ডাস্ট্রি, বিনোদন শিল্প, পর্যটন শিল্প, পরিবহন, টেলিকমিউনিকেশন, দূর-শিক্ষণ, এয়ার-হাব, ওয়াটার হাব, সিকিউরিটি সার্ভিস, বন্দর ও জাহাজ, টেলি-মেডিসিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ করার উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করা হবে। যে কোনো আধুনিক ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ খাতে ব্যক্তি-খাত সহায়ক বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জলের সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পুলিশি সেবা, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশাসনিক সেবাসহ সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসমূহের সেবার মান ক্রমান্বয়ে উন্নত করা হবে।
জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনই হবে অন্যতম অঙ্গীকার: খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী কর্মক্ষম বয়সের মধ্যে পড়ে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ লাখ মানুষ কর্ম-বাজারে প্রবেশ করে, এর মধ্যে মাত্র ১০ লাখ মানুষ কাজ পায়। বাকিরা থাকে বেকার। এ সব কর্মক্ষম বেকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনই হবে বিএনপির অন্যতম অগ্রাধিকার।
একটি শিক্ষা চ্যানেল চালু করা হবে: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শিক্ষাকে কর্মমুখী ও ব্যবহারিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। বিএনপি শিক্ষার প্রতিটি স্তরে গুণগত মান নিশ্চিত করবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় অনগ্রসরতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। শিক্ষা ধনিক শ্রেণির একচেটিয়া অধিকার নয়। বিএনপি ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করবে। এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫% অর্থ ব্যয় করা হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সমপ্রসারণের জন্য জাতীয় টিভিতে একটি পৃথক শিক্ষা চ্যানেল চালু করা হবে। বিশ্বের মেধাজগৎ ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে নতুন মাত্রা যোগ করতে বিদেশি ভাষা শেখার জন্য অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। সরকারি উদ্যোগে বিদেশি ভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন ভাতাদি বাড়ানো হবে। বিএনপ্থির শিক্ষানীতি হবে জীবনমুখী, ডিগ্রীমুখী নয়। সর্বপর্যায়ে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জেন্ডার ও অর্থনৈতিক বাধাসমূহ দূর করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করে ছাত্রদের মধ্য হতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিকাশের পথ সুগম করা হবে। মাদরাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। তাদের কারিকুলামে পেশাভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রতি জেলায় স্মার্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তি খাত হবে বিএনপির বিশেষ অগ্রাধিকার খাত। বর্তমানে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম। যা মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানেরও নিচে। বিএনপি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলায় সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেবাখাত-নির্ভর উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সংগতি রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে রূপান্তর করা হবে। আউটসোর্সিং এবং সফটওয়্যার খাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিদেশ হতে অর্জিত অর্থ দেশে আনয়নের ক্ষেত্রে সকল প্রকার অযৌক্তিক বাধা দূর করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, ভিওআইপি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ইন্টারনেটের ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা হবে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে বিশেষ করে মফঃস্বলে উচ্চ গতির ফোর-জি কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। উচ্চ গতির ইন্টারনেট কভারেজ নিশ্চিত করা হবে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার শিল্পে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়া হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মূল উপাদানগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে দেশে উৎপাদন উৎসাহিত করা হবে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, হাইটেক পার্ক, এডুকেশন পার্ক, কম্পিউটার ভিলেজ, আইটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞান বিকাশ ও দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার সমর্থিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, প্রত্যেক জেলায় একটি করে ‘স্মার্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং এসব স্কুল অন্যান্য স্কুলের জন্য মডেল প্রযুক্তি প্রদর্শকের কাজ করবে। প্রতি জেলায় একটি করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ প্রাথমিক স্তরে প্রশিক্ষিত শিক্ষক, হার্ড-ওয়্যার, ল্যাবরেটরিসহ সব দিক থেকে উন্নততর আইটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিএনপি জনগণের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে বলে তথ্য প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সকল আইনের অগণতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রনমূলক ধারাসমূহ সংশোধন করবে।
খেলাধুলায় ট্যালেন্ট হান্ট স্কিম চাল হবে: খালেদা জিয়া বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে খেলাধুলার কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ যাতে একটি গ্রহণযোগ্য স্থান করে নিতে পারে সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতি জেলায় একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ক্রীড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। আধুনিক জাতীয় অলিম্পিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ক্রীড়া ও খেলাধুলার উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষক, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও ক্রীড়া সরঞ্জামাদি সংগ্রহের জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হবে। ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রীড়া ও খেলাধুলার মান উন্নয়নকে অন্তর্ভুক্ত করতে আরও উৎসাহিত করা হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ স্কিম চালু করা হবে।
প্রবাসীদের ভোটার করা হবে: খালেদা জিয়া বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত অভিবাসন নিশ্চিতকরণ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সুচিন্তিুত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। অভিবাসন ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রণোদনাসহ সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা সমাধানে দ্বিপাক্ষিক-চুক্তি বা সমঝোতা স্বারকের আলোকে সংশ্লিষ্ট সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিশ্বের যে সব দেশে ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে, ঐসব দূতাবাসে কনসুলার সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
৫৭ ধারা বাতিল করা হবে: খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাকে সব সময় স্বাগত জানায়। তথ্য প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য মুক্ত চিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি নীতিমালা থাকা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করবে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অন-লাইন মিডিয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। বিএনপি সৎ সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার করবে এবং চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত করবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রুজুকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
স্থানীয় সরকার: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। দেশ চলবে তৃণমূলের জনগণের ইচ্ছায় ও মতামতের ভিত্তিতে। ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে অধিকতর শক্তিশালী করা হবে যাতে এ সংস্থাগুলো উন্নয়ন কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রমসহ জনগণের জন্য পরিষেবা প্রদানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ক্ষমতা ও উন্নয়নের ভরকেন্দ্র হবে গ্রামমুখী। আইনের মাধ্যমে গঠিত একটি স্বাধীন কমিশন সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ বণ্টনের ব্যবস্থা করবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আদালতের দণ্ড ছাড়া বরখাস্ত ও অপসারণ করা হবে না।
কৃষি ও কৃষক: খালেদা জিয়া বলেন, রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি যৌক্তিক অংশ কৃষি গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হবে। এই ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্যবীমা, পশুবীমা, মৎস্যবীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হবে। কৃষি-পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পখাতকে প্রণোদনা দেয়া হবে।
শ্রমিক কল্যাণ: বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি শ্রমিক শ্রেণির ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথ দরকষাকষি করার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করবে। বাজারমূল্য ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সকল সেক্টরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর রিভিউ ব্যবস্থা চালু করা হবে। যৌক্তিক শ্রমিক স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিখাতের দায়িত্ব সমপর্কে আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করবে। এই আইন ও বিধি হবে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একই ধরনের ব্যবস্থা থাকবে রাষ্ট্রীয় খাতের জন্যও।
নগরায়ন ও আবাসন: খালেদা জিয়া বলেন, দেশের দ্রুত বর্ধনশীল এবং নৈরাজ্যপূর্ণ নগরায়নকে সুশৃঙ্খল করতে একটি জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ, জেলা ও উপজেলা শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীগুলোতে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় সাশ্রয়ী মূল্যে পরিকল্পিত আবাসন সুবিধা প্রদানের প্রয়াস নিবে।
‘নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ শ্রেয়’: এই নীতির ভিত্তিতে বিএনপি সংক্রামক, অসংক্রামক ও নতুন উদ্ভূত রোগসমূহের বিস্তার প্রতিরোধ ও প্রতিকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। খালেদা জিয়া বলেন, জিডিপির ৫% অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে। বিশিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতীয় এক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উন্নত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণে উৎসাহ প্রদান করা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি সমস্যার সমাধান: খালেদা জিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিএনপি আঞ্চলিক ও পারসপরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে কার্যকর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগও গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, কাঙিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির চাহিদা পূরণের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ আনুমানিক ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্যোগ নেবে। অদক্ষ পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ অতি জরুরিভিত্তিতে আধুনিকায়ন এবং পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হবে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি উৎস বহুমুখী করা হবে। উপযুক্ত স্থানে ৫০ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন রিফাইনারী নির্মাণ করা হবে। দেশের স্থলভাগ এবং বঙ্গোপসাগরে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র, তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা সমপ্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক পানি-ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে স্বল্প খরচে পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন, আন্ত:দেশীয় বিতরণ সিস্টেম উন্নয়ন ও আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, সমুদ্রের নিঃশেষযোগ্য সমপদ যেমন- গ্যাস, তেল ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করা হবে। জরিপের ভিত্তিতে এসব সমপদ উত্তোলন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণে নির্ভরযোগ্য নীতিকৌশল প্রণয়ন করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা, গোমতী, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে আন্ডারগ্রাউন্ড-টানেল নির্মাণ করা হবে। গত বিএনপি সরকারের সময়ে ঢাকার পানগাঁয়ে নির্মিত কন্টেইনার টার্মিনালের মতো ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের নিকটস্থ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এশিয়ান হাইওয়ে এবং ঢাকা-কুনমিং রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নকল্পে দ্বিতীয় যমুনা সেতু, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু ও ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, গোমতী ও কর্ণফুলী নদীর উপর আরো সেতু নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন ছোট-বড় নদীর উপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের দ্রুত যোগাযোগের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ করা হবে। গণচীনের ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে। খালেদা জিয়া বলেন, পর্যটন শিল্পকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রবেশ-পথগুলোকে অধিকতর পরিচ্ছন্ন, ঝামেলামুক্ত এবং সেবামুখী প্রবেশ-পথ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি: খালেদা জিয়া বলেন, দল-মত ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল জাতি গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মকর্মের অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সমপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের সকল অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম তা অর্জন কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। আশা করি, এই ভিশন বাস্তবায়নে আমরা দেশবাসীর সক্রিয় সমর্থনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহেরও সহযোগিতা পাবো। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক এই ভিশন বাস্তবায়নে আমাদের সক্রিয় সমর্থন জানাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। রূপকল্প উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় নেতা, বিদেশি কূটনীতিক, গণমাধ্যম সম্পাদক, বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।