নরসিংদী; রায়পুরায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন নিহত ও দুই পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন।
আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার বাশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল হক পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। এক বছরের ব্যবধানে এ দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এ নিয়ে ছয়জন প্রাণ হারালেন।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের জয়নাল মিয়া (২৩) ও একই ইউনিয়নের সোবহানপুর গ্রামের আরশ আলী (২৪)। তাঁরা হাফিজুর রহমানের পক্ষের লোক।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অন্যদের নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হাফিজুর রহমান বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। হাফিজুর দলীয় প্রার্থী হলেও স্থানীয় সাংসদ রাজিউদ্দিন আহমেদ তাঁর পক্ষে ছিলেন না। সাংসদের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন সিরাজুল হক। নির্বাচনে সিরাজুল জয়ী হন। এরপর থেকে পক্ষ দুটির মধ্যে অন্তত আটবার সংঘর্ষ হয়। এখন পর্যন্ত হাফিজুর পক্ষের চারজন ও সিরাজুল পক্ষের দুজন নিহত হন।
সিরাজুল পক্ষের প্রভাবে এক বছর আগে হাফিজুর পক্ষ কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এতে হাফিজুর পক্ষের কয়েক শ সমর্থক এলাকাছাড়া হয়ে ছিলেন। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল থেকে হাফিজুর পক্ষের লোকজন এলাকায় আসতে শুরু করেন।
হাফিজুর পক্ষের সমর্থকদের প্রবেশ ঠেকাতে তখন সিরাজুল পক্ষ বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। উভয় পক্ষ লাগোয়া গ্রাম থেকে ভাড়ায় অস্ত্রধারীদের এনে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা প্রশাসন অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পক্ষ দুটি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘর্ষে হাফিজ পক্ষের দুজন নিহত হন।
ওই ঘটনায় হত্যা মামলা হওয়ার পর সিরাজুল পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে দেন। এরপর এলাকায় হাফিজুর পক্ষের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।
শক্তি সঞ্চয় করে গতকাল রোববার দুপুরে সিরাজুল হকের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও টেঁটা নিয়ে এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালান। তখন হাফিজুর পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে মাঠে নামে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে জয়নাল ও আরশ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সংঘর্ষে হাফিজুর পক্ষের দশটি এবং সিরাজুল পক্ষের নয়টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
নিহত আরশ আলীর ছোট ভাই মান্নান মিয়ার ভাষ্য, ‘কিছুদিন পরপর মারামারি হয় বলে আমার ভাই মালয়েশিয়া চলে যান। দীর্ঘদিন থাকার পর চার মাস আগে দেশে আসেন। মাত্র তিন মাস আগে আরশকে আমরা বিয়ে করিয়েছিলাম। এলাকার রাজনীতি আমাদের সব শেষ করে দিল।’
সিরাজুল হক বলেন, ‘মারামারির ব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানি না। ঘটনার সময় আমি উপজেলা সম্মেলনকক্ষে চলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ছিলাম।’
সিরাজুলের অভিযোগ, ‘এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হাফিজুর হিংস্র হয়ে উঠেছেন। তাঁর লোকজন আমার ঘরসহ ২০০ ঘর ভেঙে ফেলেন। আগুন দেন অনেক ঘরে।’
পাল্টা অভিযোগ করে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সিরাজুল পক্ষ ভাড়াটে অস্ত্রধারীদের নিয়ে আমার পক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালান। সিরাজুল পক্ষের গুলিতে আমার পক্ষের দুজন নিহত হন।’
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, পক্ষ দুটির মধ্যে সংঘর্ষের মূল কারণ আধিপত্য বিস্তার। সংঘর্ষে দু্জন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রাখা আছে।