৩৯ বছর বয়সে ফ্রান্সের সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপ বিরোধী লে পেনকে পরাজিত করে এ জয় পেয়েছেন তিনি। মাত্র এক বছর ব্যবধানে পরিচিত হওয়া এই রাজনীতিক হুট করে আলোচনায় আসেন। এমনকি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে ছিলেন না কোনো রাজনৈতিক পদে।
তবে ফ্রান্সের এই সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্টের জীবনের গল্প অনেক দীর্ঘ, অনেক মজার ঘটনা রয়েছে তার, যেগুলো এখন প্রকাশ পাচ্ছে। এই যেমন ম্যাখোঁ বিয়ে করেছেন তার চেয়ে ২৫ বছরের বড় তারই স্কুলশিক্ষিকা ব্রিজিত ট্রেগনেউক্স’কে। ম্যাখোঁর বয়স এখন ৩৯ বছর, আর ব্রিজিতের বয়স ৬৪ বছর।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ব্রিজিতের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। টিনেজ ম্যাখোঁকে তখন স্কুলে পড়াতেন ব্রিজিত। সেখানে ইমানুয়েল ম্যাখোঁর নাটকের কোচও ছিলেন ব্রিজিত। তখন থেকেই তিনি ব্রিজিতকে তার স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার বাসনা পোষণ করেছিলেন। তার মনে জেগে উঠেছিল বাঁধভাঙা প্রেমের জোয়ার।
ম্যাখোঁ সম্পর্কে সেই ব্রিজিত বলেছেন, ম্যাখোঁর বয়স যখন ১৭ বছর তখনই সে আমাকে কথা দিয়েছিল- আমাকে বিয়ে করবে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ৬৪ বছর বয়সী ব্রিজিত হচ্ছেন ফ্রান্সের পরবর্তী ফার্স্টলেডি।
দ্য ডেইলি মেইল বলছে, ব্রিজিত বর্তমানে সাত নাতিপুতির নানি-দাদি। এই বয়সে এসে তার ললাটে লেখা হতে পারে ফ্রান্সের ফার্স্টলেডি। এমন ঘটনা বিরল।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে জয়লাভ করে আধুনিক ইতিহাসে ফ্রান্সের সবচেয়ে তরুণ বা কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন ম্যাখোঁ। এই স্বামীর সঙ্গে কিভাবে ভালোবাসা গড়ে ওঠে সে বর্ণনা দিয়েছেন ব্রিজিত।
তিনি বলেন, ম্যাখোঁর বয়স যখন ১৫ বছর তখনই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে সে আমার কাছে বিস্ময়কর এক প্রতিশ্রুতি দেয়। ১৭ বছর বয়সে ম্যাখোঁ আমাকে বলে যে, তুমি যা-ই করো আমি তোমাকে বিয়ে করব। উত্তর ফ্রান্সের অ্যামিয়েনসে বেসরকারি জেসুট স্কুলে গড়ে ওঠে আমাদের এ সম্পর্ক। আমি থিয়েটারের কোচ ছিলাম। সেখানে অভিনয় করত ম্যাখোঁ। তখন আমি পরিচিত ছিলাম ব্রিজিত আউজিয়েরে নামে। আমার ছিল তিন সন্তান। ওই সময় আমি নাটকের ক্লাবটি তদারকি করতাম। স্কুলের শেষ বছরে ম্যাখোঁ চলে যায় প্যারিসে। ওই সময় আমাদের একে অন্যের সঙ্গে সব সময়ই কথা হতো। ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত।
ব্রিজিত আরো বলেছেন, ১৮ বছর বয়সে একটু একটু করে আমার ভেতরকার সব বাধা সে কাটিয়ে ওঠে এক অবিশ্বাস্য পথে, ভীষণ ধৈর্যর পরীক্ষা দিয়ে। আসলে মননে সে একজন টিনএজ ছিল না। অন্য সব পূর্ণবয়স্কদের সঙ্গে তার সম-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তার সঙ্গে যোগ দিতে আমিও ছুটে যাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাই। তারপর যা হবার তা-ই হলো। ২০০৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলাম। কিন্তু আমি আমার নতুন এ স্বামীর নাম আমার সঙ্গে যোগ করলাম না। আমি রয়ে গেলাম ব্রিজিত ট্রেগনেউক্স।
স্ত্রী ব্রিজিত সম্পর্কে ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, আমার স্ত্রীকে আমি লুকিয়ে রাখিনি। সে আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সব সময়ই থাকবে। গত মাসে সমর্থকদের সামনে তাদের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে এক মঞ্চে এই যুগল একে অন্যকে চুমু দেন। ম্যাখোঁ বলেন, এই নারীর কাছে আমি ভীষণভাবে ঋণী। কারণ, আজকের এই আমাকে গড়ে তোলার জন্য তার অবদান অনেক বেশি।
উল্লেখ্য, ম্যাখোঁ দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন প্যারিস নানটেরে ইউনিভার্সিটিতে। যোগ দিয়েছিলেন ফ্রান্সের অভিজাতদের জন্য নির্ধারিত ইকোলে ন্যাশনালে ডি’অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে। কয়েক বছর সরকারি চাকরি করার পর তিনি রোটচাইল্ড এ একজন বিনিয়োগকারী ব্যাংকারে পরিণত হন। এরপর তিনি দ্রুত ক্যারিয়ারের শিখরে উঠে যেতে থাকেন। এরপর তিনি ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলন্দর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুই বছর পরে দায়িত্ব পান অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে।