ডেস্ক; ইম্যানুয়েল ম্যাক্রনকেই (৩৯) বেছে নিলেন ফরাসীরা। স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মধ্যপন্থী ম্যাক্রন ফ্রান্সের কনিষ্ঠতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। সর্বশেষ খবর মোতাবেক, ম্যাক্রন আনুমানিক ৬৫.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কট্টরপন্থী ম্যারিন লা পেন পেয়েছেন ৩৪.২ শতাংশ ভোট। বিপুল ব্যাবধানে ম্যাক্রনের ঐতিহাসিক এই জয়ের খবরে তার উচ্ছসিত সমর্থকদের ঢল নামে প্যারিসের লুভর মিউজিয়াম চত্তরে। আগে থেকেই ম্যাক্রন জানিয়েছিলেন বিজয় উযদাপন করবেন সেখানে। নির্বাচনী ফলাফল আসতে শুরু করার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনই হচ্ছেন। দ্রুতই পরাজয় মেনে নিয়ে ম্যাক্রনকে অভিনন্দন জানান লা পেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি ও ফ্রান্স ২৪।
লুভরের সামনে প্রস্তুত মঞ্চের দিকে ম্যাক্রন যখন বিজয়ভাষণ দিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন লাউডিস্পিকারে বাজছিল ইউরোপিয়ান অ্যানথেম বিটোভেনের ‘ওড টু জয়’। নিজের সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ম্যাক্রন। তিনি বলেন, ‘সবাই আমাদের বলেছে এটা অসম্ভব কিন্তু তারা ফ্রান্সকে চেনেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা লা পেনের জন্য ভোট দিয়েছেন তাদের জন্য আমি কিছু বলতে চাই।’ নিজের সমর্থকদের দুয়োধ্বনি দিতে বারন করে ম্যাক্রন লা পেন ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তারা আজ ক্ষোভ, হতাশা প্রকাশ করেছেন। কখনও কখনও প্রকাশ করেছেন জোরলো বিশ্বাস। আমি তাদের সম্মান করি। তবে আগামী ৫ বছরে আমি এটা নিশ্চিত করার জন্য সবকিছু করবো যে কট্টরপন্থার জন্য ভোট দেয়ার কোন কারণই যেন না থাকে।’ উজ্জীবীত ও আত্মবিশ্বাসী ম্যাক্রন বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আর এজন্য আমাদের অব্যাহতভাবে সাহসী থাকবত হবে।’
এর আগে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাথিয়াস ফেকল আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাক্রনের বিজয়ী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইম্যানুয়েল ম্যাক্রনের বিজয় স্পষ্ট। ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। ফ্রান্সের জনগন আজ স্পষ্ট এক গণতান্ত্রিক রায় দিয়েছে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ম্যাক্রনের দারুণ জয় ফ্রান্সে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর আধিপত্য ভেঙেচুরে দিয়েছে। স্বস্তি এনে দিয়েছে ইউরোপজুড়ে। ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা আরেকটি পপুলিস্ট জোয়ারের শঙ্কা বোধ করছিলেন। সে কারণে ইইউ বিরোধী লা পেনের পরিবর্তে ইইউপন্থী ম্যাক্রনের জয়ে তারা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ম্যাক্রনকে বিজয়ের সাধুবাদ জানাতে দেরি করেন নি। তার মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ত এক বিবৃতিতে জানান, ‘মার্কেল ফোনে ম্যাক্রনকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন।’ মার্কেল নতুন ফরাসী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করতে মুখিয়ে আছেন বলেও জানান তিনি। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও স্বাগত জানিয়েছেন ম্যাক্রনকে।
এপির খবরে বলা হয়, ম্যাক্রনের বিজয়সহ ৬ মাসে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ইউরোপের ভোটাররা কট্টর ডানপন্থী পপুলিস্টদের প্রত্যাখ্যান করলো। সাম্প্রতিক অস্ট্রিয়া ও নেদারল্যান্ডসের ভোটেও ভোটাররা ইইউপন্থী প্রার্থীদের পক্ষেই ভোট দিয়েছে।
ম্যাক্রন শুধু ফ্রান্সের কনিষ্ঠতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তাই নয়, বরং তিনি ক্ষমতাবলয়ের বাইরে থেকে এসে একপ্রকার ইতিহাস গড়ে এলিজি প্রাসাদের বাসিন্দা হতে চলেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আধুনিক ফ্রান্স শাসন করেছে শুধু সোশালিস্ট বা কনজারভেটিরা। প্রথম দফা নির্বাচনে ম্যাক্রনের পাশাপাশি লা পেন দ্বিতীয় দফার শীর্ষ দুই প্রার্থী নিশ্চিত হওয়ার পরই ছেদ ঘটে ফ্রান্সের ওই দীর্ঘদিনের রীতিতে।
এর আগে কখনও পাবলিক অফিসে নির্বাচিত না হওয়া ম্যাক্রন পেয়েছিলেন ‘আউটসাইডার’ তকমা। বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের ক্যাবিনেটে টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে ফ্রান্সের রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন কেউই শোনেন নি তার নাম। কিন্তু সোশালিস্ট ক্যাবিনেটে খুব একটা সাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি তিনি। ইস্তফা দিয়ে মাত্র একবছর আগে শুরু করেন নজিরবিহীন এক রাজনৈতিক আন্দোলন। নাম দেন এন মার্চ। রূপকথার মতোই স্বল্পতম সময়ে জয় করে নেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ফরাসীদের মন।