দুই শিক্ষার্থীকে হোটেলে আটকে গণধর্ষণ, অবশেষে মামলা নিল পুলি

Slider ঢাকা নারী ও শিশু শিক্ষা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

214914rape_1_kalerkantho_pic

 

 

 

 

রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। গত কয়েকদিন ধরে দুই শিক্ষার্থী থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশ মামলা নিতে তালবাহানা করে।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করা হয়। বনানী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী হয়েছে ভুক্তভোগি এক শিক্ষার্থী। প্রধান আসামি করা হয়েছে, সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফকে। সহযোগিতা করার জন্য সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন, বডিগার্ড (অজ্ঞাত), সাদনান সাকিফকে।

ওসি আব্দুল মতিন বলেন, ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর একজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। রবিবার তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে পরীক্ষা করানো হবে।

অভিযোগকারী দুই তরুণী বলেছেন, ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ মার্চ, বনানীর ২৭ নম্বর রোডের কে ব্লকের ৪৯ নম্বর ‘দি রেইনট্রি’ হোটেলের একটি কক্ষে। ওই হোটেলে সারা রাত আমাদের আটকে রেখে ধর্ষণ করে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। শুরুতে ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারিনি। পরে পুলিশের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

ভুক্তভোগী এক তরুণী বলেন, “আমরা দুজনে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ঘটনার দিন আমাদের পরিচিত সাফাত আহমেদের জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষে সাফাত বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে আমাদের বন্ধু সাদনান সাকিফের দাওয়াত ছিল। সাদনান সাফাত আহমেদের বন্ধু। তারা দুজনে আমাদেরও বন্ধু। সাদনানই আমাদের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ করে। প্রথমে আমরা যোগ দিতে চাইনি। পরে সাফাত নিজেই আমাদের ফোন করে দাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলে। এর পরও আমরা না বললে তারা অন্তত ১৮ বার ফোন করে এমনভাবে অনুরোধ করে যে শেষ পর্যন্ত আমরা রাজি হয়ে যাই। এরপর সাফাত আমাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আমরা তখন গুলশান নিকেতন এলাকার বাসায় ছিলাম। রাত ৮টার দিকে সাফাতের গাড়ির চালক বিল্লাল হোসেন একটি প্রাইভেট কার নিয়ে আমাদের বাসার সামনে আসেন। এরপর আমরা ওই গাড়িতে করে বনানীর হোটেল রেইনট্রির সামনে যাই। তখন সাফাত আমাদের রিসিভ করে হোটেলের ৯ তলার ছাদে নিয়ে যায়। তখন সেখানে সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ ও সাদনান ছিল। ওই সময় আমাদের আরো দুই বন্ু্লও সেখানে ছিল। এ ছাড়া সেখানে আরো ছিল সাফাতের বডিগার্ড ও চালক বিল্লাল। রাত ৯টার দিকে তারা আমাদের ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে হোটেলের তিনটি কক্ষে আটকে রাখে। এর মধ্যে দুটি কক্ষে আমাদের দুজনকে অন্য কক্ষে আমাদের আরো দুই বন্ধুকে আটকে রাখে। এরপর আমাদের দুজনকে নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। আমরা বাধা দিয়ে চলে আসার চেষ্টা করি। সাফাত ও নাঈম একপর্যায়ে আমাদের মাথায় পিস্তল ধরে গুলি করার হুমকি দেয় এবং বলে, ‘তোরা আমাদের কথায় রাজি না হলে গুলি করে লাশ কোথায় রাখব কেউ জানবেও না, তোরা আর এ পৃথিবীতে থাকবি না…। ’ এর পরও আমরা চেষ্টা করি ওদের কাছ থেকে সড়ে পড়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি। ওরা কক্ষে আটকে রেখে সারারাত নির্যাতন চালায়। এরপর সেই দৃশ্য ভিডিও করে রাখে।

দুই শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ওই সময় আমাদের ওরা মারধরও করে। এভাবে সারারাত শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে সকালে আমাদের ছেড়ে দেয়। ওই সময় ওরা আমাদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিল। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *