গত পাঁচ বছরে সৌদি আরব থেকে লাশ হয়ে দেশে গেছে ছয় হাজার ৫৮০ লাশ। এ সংখ্যা মোট প্রবাসী লাশের ২৯ শতাংশ। গত চার মাসে মারা গেছে ৪৯৯ জন। রিয়াদে ২২৪ জন ও জেদ্দায় ২৭৭ জন। এদের মধ্যে দেশে লাশ ফেরত পাঠানো হয়েছে ৩২৪ জনের এবং সৌদিতে দাফন করা হয়েছে ১৭৫ জনের।
বাংলাদেশ দুতাবাস কার্যালয়ের ডেস্কে লেখা রয়েছে ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোক, দুর্ঘটনা, হৃদরোগ, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪ জন মারা গেছেন স্ট্রোকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২ জন। হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের এবং স্বাভাবিক মৃত্যু হয় ৫০ জনের।
প্রবাসীদের এমন অকালমৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনো কোনো অনুসন্ধান হয়নি। প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো মৃত্যুর এ সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গত পাঁচ বছরে যত প্রবাসীর লাশ দেশে গেছে, তাদের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু আকস্মিক।
প্রবাসী বাংলাদেশি, মৃতদের স্বজন ও দূতাবাস বলছে, বিভিন্ন কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্ট্রোক ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। যে বিপুল টাকা খরচ করে বিদেশে যান, সেই টাকা তুলতে অমানুষিক পরিশ্রম, দিনে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা, দীর্ঘদিন ধরে স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা- সব মিলিয়ে মানসিক চাপে ভোগেন তারা।
জানা যায়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসীদের লাশ দেশে নিতে সহযোগিতা করে। মৃতদের পরিবারগুলোকে দাফনের জন্য বিমানবন্দর বোর্ড ৩৫ হাজার টাকা করে এবং পরে তিন লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেয়।
দীর্ঘদিন সৌদি আরবপ্রবাসী ও জনশক্তি রপ্তানিকারক আরিফুর রহমান বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে প্রচণ্ড গরম। এখানে খাবার খুব সস্তা ও তেলযুক্ত। পাশাপাশি দুশ্চিন্তা, মালিকের অত্যাচার, দেশে স্বজনদের নানা চাহিদা, বিনোদনহীন একঘেয়ে জীবন তাদের মানসিক চাপে ফেলে। এ অবস্থায় অনেকে স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। অনেকে দুর্ঘটনায় মারা যান। ”
এভাবে একের পর এক অকালে প্রাণ হারাচ্ছে প্রবাসে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে যারা স্বজন-প্রিয়জন ছেড়ে নিজ দেশ ত্যাগ করে পাড়ি জমান অন্য দেশে বাড়তি একটু আয়ের আশায় তারাই প্রবাসী; তাদের উপার্জনের টাকা দেশে পাঠিয়ে তারা হন দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা , যাদের পাঠানো টাকাতে সচল থাকে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ।