জমে উঠছে রাজনীতি

Slider জাতীয়

64293_lead

 

ঢাকা; আপাত স্থবির রাজনীতি জমে ওঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভোটের দেড় বছরের কিছু বেশি সময় বাকি থাকলেও সরকারি দল এরই মধ্যে প্রকাশ্য নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছে। বিভিন্ন সংস্থা মাঠপর্যায়ে জরিপ পরিচালনা করছে। ভোট চাচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। এমপিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ওদিকে, বিএনপিও নতুন উদ্যমে রাজনীতির মাঠে নামার চেষ্টা করছে। তৃণমূলে নতুন করে কর্মিসভা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপি নেতারা। যদিও দলের এ দুরবস্থার মধ্যেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেমে নেই। নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে আগামী ১০ বা ১১ই মে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভবিষ্যৎপন্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি একটি নতুন জোট আনার চেষ্টা করছে। তবে ওই জোট যে নামসর্বস্ব হবে তা নিয়ে তেমন কোনো সন্দেহ নেই। যদিও দুর্নীতি মামলায় খালাস পাওয়ার পর এরশাদ নিজে রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। জামায়াতের ব্যাপারে সব পক্ষই অপেক্ষার নীতি অবলম্বন করছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়া দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে। নতুন নেতৃত্বে পথচলা জামায়াত এখন শতভাগ নীরবতার নীতি অবলম্বন করছে। শক্তি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার পর দলটির সামনে অবশ্য এখন আর অন্য কোনো বিকল্পও নেই। কয়েক বছর ধরেই সরকারি দলের মন্ত্রীরা যেকোনো সময় জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলে আসছেন। দৃশ্যত, ক্ষমতাসীনরা এ ব্যাপারে সময় নেয়ার নীতিই অবলম্বন করছে। অন্যদিকে, বিএনপির ওপর দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত ত্যাগের চাপ ছিল। ২০ দলীয় জোটের প্রধান দুই শরিকের সম্পর্ক এখন অনেকটাই শিথিল। তবে জোটে জামায়াতকে রাখা-না রাখার ব্যাপারে বিএনপিও অপেক্ষার নীতি অবলম্বন করছে। সহসাই এ ব্যাপারে বিএনপির সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনাও নেই। আগামী নির্বাচনে হেফাজতে ইসলাম ফ্যাক্টর হতে পারে বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে বলাবলি আছে। হেফাজতের রাজনীতিতে আসার গুজবও চাউর হয়েছিল। যদিও হেফাজত আমির আল্লামা শফি বিবৃতি দিয়েই বলেছেন, হেফাজতের রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে রাজনীতিতে না এলেও হেফাজত সমর্থকরা আগামী নির্বাচনে কোন পক্ষকে ভোট দেন তা নিয়ে রাজনীতিতে কৌতূহল থেকেই যাবে।
আওয়ামী লীগের ভোট কৌশল প্রণয়নের কাজ চলছে পুরোদমে। সংশ্লিষ্টরা নিজেদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক সমাবেশে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। সামনে তার এ ধরনের আরো বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে মনোযোগী দলীয় কোন্দল মেটানোর দিকে। দলটির অনেক নীতিনির্ধারকই মনে করেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দীর্ঘদিন টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে নানা উপদল। এমপিদের সঙ্গেও স্থানীয় নেতৃত্বের বিরোধ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে কোন্দল মেটানোর জন্য কেন্দ্র থেকে এমপিদের কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। যেসব এমপির এলাকায় সমস্যা রয়েছে তাদের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে এটা ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। যে কারণে দলের নেতারা প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁক রাখতে চান না।
অন্যদিকে, দীর্ঘ নীরবতার পর রাজনীতির মাঠে নামার চেষ্টা করছে বিএনপি। আপাতত সংবাদ সম্মেলনে হাজির হচ্ছেন খালেদা জিয়া। দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভিশন-২০৩০ নামে একটি প্রস্তাবনা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থান করতে পারেন বেগম জিয়া। যে প্রস্তাবনায় দেশ এবং দলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নির্দেশনা থাকবে। আপাতদৃষ্টিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে অনেকটাই সরে এসেছে বিএনপি। এখন দলটির নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ধীরে ধীরে আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করার প্রক্রিয়াও চলছে। তবে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপিতে দুটি মতই প্রবল। একটি অংশ যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। অন্য অংশ মনে করে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো লাভ হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *