ঢাকা; স্বেচ্ছায় রাজনীতিতে ফিরতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এমন ইঙ্গিত দিয়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বারাক ওবামা এখনই রাজনীতি থেকে অবসরে যাচ্ছেন না।
গত ২০ শে জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে তিনি অবসরে গিয়েছেন। তারপর প্রায় তিন মাস পরিবারের সদস্যদের একান্তে সময় দিয়েছেন। তাদের নিয়ে অবকাশ যাপনে গিয়েছেন। ঘুরেছেন ভার্জিন আইল্যান্ড সহ বিভিন্ন স্থানে। এ সময়টাতে বারাক ওবামা ছিলেন প্রচার প্রচারণার বাইরে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দৃশ্যত হযবরল অবস্থ বাধিয়ে দেন নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম প্রবেশে ৭টি, পরে ৬টি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা। অন্যদিকে রাশিয়া কানেকশন নিয়ে তার প্রশাসন একেবারে জেরবার। গোয়েন্দারা এ সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত করছে। এরই মধ্যে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা পূর্বাভাষ দিয়েছেন যদি ওই তদন্তে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাহলে তার ক্ষমতার মসনদ নড়ে যেতে পারে। এই যখন অবস্থা তখন অনেকেই জানার চেষ্টা করেছেন বারাক ওবামা কি করছেন। যে বয়সে তিনি অবসরে গিয়েছেন তাতে তিনি ভবিষ্যতে কি করবেনÑ এমন সব প্রশ্ন এসে যায়। গত সপ্তাহে তিনি জনসম্মুখে এসেছেন। শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য রেখেছেন। আর শেষ পর্যন্ত যেন তেন কোন সূত্র নয়, তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আভাস দিলেন রাজনীতিতে ফিরতে প্রস্তুত ওবামা। তিনি ডেমোক্রেট দলের জন্য প্রচারণা চালাবেন। এ কাজে তাকে কেউ উদ্বুদ্ধ করছে না। তিনি স্বেচ্ছায় নামছেন রাজনীতির মাঠে। দলীয় একটি বার্ষিক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে তিনি প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে কানকথা ছড়িয়ে পড়েছে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ নিয়ে তার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু বাইডেন তা উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি এবং বারাক ওবামা ‘পাবলিক ডিবেট’কে নতুন করে সাজাতে তারা যতটা পারেন ততটা সাহায্য করবেন। দ্য হিল’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। জো বাইডেন বলেছেন, অর্থ সংগ্রহ, প্রার্থী বাছাই, প্রচারণা কাজে সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত। বারাক ওবামাও। নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্য ডেমোক্রেটিক পার্টির এক নৈশভোটে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জো বাইডেনকে। সেখানে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা নিয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন। বলেন, যখন আমাকে এখানে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রণ জানানো হলো তখনই বুঝতে পেরেছিলাম ওই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আসতে পারে। এ সময় চারদিকে হাততালি পড়ে যায়। তিনি আবার বলতে শুরু করেন, বন্ধুরা, আমি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করছি না। তবে আরো ডেমোক্রেট যাতে নির্বাচিত হতে পারেন সে জন্য দলকে সাহায্য করতে চাই। ওদিকে রাজনীতিতে বারাক ওবামার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি সে বিষয়ে নানা কথা আছে। তবে ওবামা নিজে এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে তিনি বলেছেন, পরবর্তী কাজ হিসেবে কি করতে পারি সেটাই এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে আমি প্রচুর সময় নিয়ে ভাবি। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেকোনো ভাবে আমি লড়াই চালিয়ে নিতে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরিতে সাহায্য করতে পারি। যাতে তারা পরিবর্তিত বিশ্বে নিজেদের পথ খুঁজে নিতে পারে। জো বাইডেনের কণ্ঠেও অনেকটা তেমনই সুর শোনা গেছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরা হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার পর অন্য কাজে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ পেইন্টিং বা আঁকাআকিকে বেছে নিয়েছেন। মঅন্যদিকে জিমি কার্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা শেষ হওয়ার পর ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে অব্যাহত কাজ করে চলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। গত বছর তার স্ত্রী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন তখন তিনি তার প্রচারণায় সরাসরি মাঠে নামেন। ওদিকে সাবেক এটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মার্চেই ফের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারেব সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছিলেন, বারাক ওবামা আসছেন। তিনি তার ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। তবে মার্চ শেষ হয়ে গেছে। বারাক ওবামা নিজে এখনও কিছু বলেন নি। স্ত্রী মিশেল ওবামা, দু’কন্যা সাশা ও মালিয়াকে নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতেই দিন কাটছে ৫৫ বছর বয়সী বারাক ওবামার।