অকেজো ঘোষিত ২২৮টি সরকারি গাড়ি নিলামে উঠছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নামি ব্র্যান্ডের এসব গাড়ির তালিকা তৈরি করেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। এছাড়া বিভিন্ন মডেলের গাড়িগুলোর সম্ভাব্য দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কয়েকটি কোম্পানির আবেদনের ভিত্তিতে পুরনো গাড়িগুলোর নতুন করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু গাড়ির কন্ডিশন (বর্তমান অবস্থা) নিয়েও কথা উঠছে। অনেকে বলাবলি করছেন, চালানোর উপযোগী অনেক গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে। এসব বিষয় মিটমাটের পরই অকেজো গাড়িগুলোর বিক্রয় বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশের জন্য দেয়া হবে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, অকেজো গাড়ি বিক্রয়ের প্রক্রিয়া অনেক আগেই শেষ হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি কোম্পানির আবেদনের ভিত্তিতে আমরা বিষয়টির সিদ্ধান্ত চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠিয়েছি। ফাইল ফেরত আসলে আবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুসরণ করেই অকেজো গাড়ি নিলাম বিজ্ঞপ্তি তৈরি করা হয়েছে। কিছু আবেদন আসায় ওই বিষয়গুলো সমাধা করতেই প্রথম বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করা হয়েছে। যানবাহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অকেজো এসব গাড়ি পৃথিবীর বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রস্তুতকৃত। ১৯৮৪ সালের পর থেকে পুরনো হওয়া এসব গাড়ি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির নিচতলা, দোতলা ও তিন তলার পার্কিং জুড়ে অকেজো গাড়ি স্থান দখল করেছে। অনেক আগেই গাড়িগুলোর ইঞ্জিন নষ্ট হয়েছে। ধুলার স্তূপ পড়েছে গাড়িগুলোতে। ইঞ্জিনের যন্ত্রপাতি খোয়া গেছে। পরিবহন কমিশনার শাহাবুদ্দীন জানান, সর্বনিম্ন ১৮-২০ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৩-৩৭ বছরের পুরনো গাড়ি রয়েছে আমাদের অধিদপ্তরে। এত পুরনো গাড়ি অধিদপ্তরে থাকা কতটুকু ঠিক? পরিবহন পুলে কর্মরত এক ড্রাইভার মানবজমিনকে বলেন, অকেজো গাড়ির কারণে ঠিকভাবে পার্কিং করা যায় না। যানবাহন অধিদপ্তরের সামনের রাস্তায় পার্কিং করতে হয়। এ কারণে নতুন গাড়িরও আয়ু কমে যাচ্ছে। তাই অকেজো গাড়ি বিক্রি করে দিলে পার্কিং ভালোভাবে করা যেতো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অকেজো গাড়িগুলো ‘যেখানে যে অবস্থায় আছে’ ওইভাবেই বিক্রি করা হবে। এছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সনদ, ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সনদ ‘যে অবস্থায় যে পর্যন্ত নবায়ন আছে’ ভিত্তিতে নিলামে তোলা হচ্ছে। কোম্পানির বাইরে বাংলাদেশের প্রকৃত নাগরিক আগ্রহী ক্রেতারা সিলমোহরকৃত দরপত্রে অংশ নিতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি দরপত্রে অংশ নিতে চাইলে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে। পাশাপাশি জামানতের পে-অর্ডারও জমা দিতে হবে। যানবাহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি দরপত্র দলিলের সিডিউলের মূল্য হবে দুইশ’ টাকা। সিডিউল কেনার পর চাইলে যে কোনো ক্রেতা সচিবালয় লিংক রোডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় পরিবহন পুল ভবন গ্যারেজ পরিদর্শন করতে পারবেন। এদিকে অকেজো গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য নয়টি টেন্ডার গ্রুপ তৈরি করেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। এর মধ্যে প্রথম গ্রুপে ২৫টি, দ্বিতীয় গ্রুপে ৩২টি, তৃতীয় গ্রুপে ২৯টি, চতুর্থ গ্রুপে ৩৩টি, ৫ম গ্রুপে ২২টি, ষষ্ঠ গ্রুপে ২২টি, ৭ম গ্রুপে ২৯টি, ৮ম গ্রুপে ১৮টি এবং নবম গ্রুপে ১৮টি গাড়ি বিক্রির কথা বলা হয়েছে। ওইভাবেই টেন্ডার সিডিউল তৈরি করা হয়েছে। তারিখ ও সময় অনুযায়ী এসব দরপত্র সিডিউল বিক্রি ও গ্রহণ করা হবে। এরপর নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিচালক (সড়ক)-এর দপ্তরে দরপত্র বাক্স খোলা হবে।