বিশ্ববাজারে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে বাংলাদেশি পণ্য। বর্তমানে দেশে রফতানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা ৭৪৪টি। বিশ্বের ১৯৮টি দেশে এসব পণ্য রফতানির সুযোগ আছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় রফতানি নীতিতে ৩০টি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং ১৪টি উন্নয়নমূলক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবারই প্রথম সেবাখাতও (সার্ভিস) এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে। সার্ভিসের মধ্যে ট্যুরিজম, ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইসিটি অন্যতম।
উন্নয়মূলক খাতের পণ্যগুলো হলো- বহুমুখী পাটজাত পণ্য, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, সিরামিক পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য (অটো পার্টস ও বাইসাইকেল), মূল্য সংযোজিত হিমায়িত মৎস্য, পাঁপড়, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অমসৃণ হীরা ও জুয়েলারি, পেপার ও পেপার পণ্য, রাবার, রেশম সামগ্রী, হস্ত ও কারুপণ্য, লুঙ্গিসহ তাঁত শিল্পজাত পণ্য এবং নারকেলের ছোবড়া।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানসহ ২৫টি দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ছাড়াও গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ, সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল সার্ভিসেস, আইটি পণ্য, ওষুধ, ফার্নিচার, জাহাজ, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, কৃষিপণ্য ও অ্যাগ্রো প্রসেসড পণ্য, আসবাবপত্র, টেরিটাওয়েল, লাগেজ, সিরামিক, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, আসবাবপত্র, গরু-মহিষের হাড়, নারকেলের ছোবড়া, আইটি পণ্য, কুইচ্চা মাছ ও শাকসবজির চাহিদা আছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিবছর রফতানি বাড়ছে। রফতানি বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ২০১৫-১৮ সাল পর্যন্ত রফতানি নীতিতে ১২টি পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এসব পণ্য রফতানিতে প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার। এ সহায়তা পেতে ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল ৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ৪১ দশমিক ৮৬ শতাংশ ওভেন পণ্য, ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ নিটওয়্যার পণ্য, ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাট ও পাটজাত পণ্য, ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ টেক্সটাইল পণ্য, ২ দশমিক ০৭ শতাংশ লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস পণ্য, ১ দশমিক ৮২ শতাংশ হিমায়িত খাদ্য পণ্য এবং ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ চামড়ার জুতা রফতানি করে এসেছে।
এ বিষয়ে ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, ‘বিশাল জনগোষ্ঠী ও বেকারত্ব বিবেচনা করে রফতানি পণ্যের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও উন্নয়নমূলক খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পণ্যের ভ্যালু চেইনের বড় অংশ দেশের কিনা, পণ্যটির মূল্য, বিশ্ববাজারে পণ্যটি প্রতিযোগিতায় টিকবে কিনা, পণ্য উৎপাদনে প্রাথমিক উপকরণের পর্যাপ্ততাও বিবেচনা করা হয়েছে।’
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৩৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি এবং দেশের সর্বোচ্চ রফতানি আয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে সরকার চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কয়েকটি পণ্যে রফতানি ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা দিচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে বস্ত্রখাতে ৪ শতাংশ, বস্ত্রখাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলে বস্ত্রখাতের রফতানিকারকদের অতিরিক্ত ২ শতাংশ, নতুন বাজার (বস্ত্র খাত) সম্প্রসারণে (আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাতীত) ৩ শতাংশ, হোগলা-খড়-আখের ছোবরার পণ্যে ১৫ শতাংশ, কৃষিপণ্য (শাকসবজি ও ফলমূল) ও প্রক্রিয়াজাত (এগ্রোপ্রসেসিং) কৃষিপণ্যে ২০ শতাংশ, হালকা প্রকৌশল পণ্যে ১৫ শতাংশ, শতভাগ হালাল মাংসে ২০ শতাংশ, হিমায়িত চিংড়িসহ অন্যান্য মাছে ২-১০ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্যে ১৫ শতাংশ, জাহাজে ১০ শতাংশ, আলু রফতানিতে ১০ শতাংশ, পেট বোতল ফ্লেক্সে ১০ শতাংশ, ফার্নিচারে ১৫ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্যে ১০ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ২০ শতাংশ, পাটজাত চূড়ান্ত দ্রব্যে (হোসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি) সাড়ে ৭ শতাংশ, পাট সুতায় ৫ শতাংশ, ট্যানারি থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার পণ্যে ৫ শতাংশ, গরু মহিষের নাড়ি, ভূড়ি, শিং ও রগ (হাড় ব্যাতিত) রফতানিতে ১০ শতাংশ, শস্য ও শাক সবজির বীজ রফতানিতে ২০ শতাংশ এবং পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বন রফতানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।