এম আরমান খান জয়,গোপালগঞ্জ : মহারানী ভিক্টোরিয়ার আমলে যশোর থেকে রায় গোবিন্দও সুর নারায়ন নামক দুই জমিদার বংশধর গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং তেলিহাটি পরগনা পওর নিয়ে শুরু করেন এলাকার জমিদারী প্রথা। সেই সুবাদে উজানীতে নির্মিত হয় বিভিন্ন কারুকার্য খচিত দ্বিতল- ত্রিতল বিশিস্ট জমিদারদের বসতের জন্য দালানবাড়ি, যা বর্তমানে রাজবাড়ি নামে পরিচিত। সেই সঙ্গে জমিদাররা নির্মান করে পাকা বৈঠক খানা শান বাধাঁনো ঘাট, টেরাকোটা সমাধি মঠ ও মন্দির।
জমিদারদের এসব প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন ধ্বংসের মুখোমুখি অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আজও দর্শক পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় এখন টিকে থাকা জমিদার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এখন টিকে থাকা জমিদার সুর নারায়নের প্রোপৌত্র সমরেন্দ্র চন্দ্র রায় দর্শর্নার্থীদের কাছে বলে যান সেই জমিদারি আমলের রুপ কথার ইতিহাস। প্রায় ৮৫ বছর বয়সী এই জমিদার বংশধর সমরেন্দ্র চন্দ্র রায় এখনও যেন শৌর্যে বীর্যে বলীয়ান এক অগ্নিপুরুষ। এলাকার হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন তাকে কর্তা বলে সম্বোধন করেন।
সমরেন্দ্র চন্দ্র রায জানান, অবিভক্ত ভারত বিভাগ ও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর এখানকার জমিদাররা ভারতে চলে গেলেও তিনি পৈত্রিক নিবাস হওয়ার কারনে এখান থেকে যায়নি। জমিদাররা চলে গেলেও থেকে যায় তাদের স্মৃতি চিহ্ন গুলো। সংস্কার আর সংরক্ষনের অভাবে সে চিহ্ন গুলো আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। ভেঙ্গে পড়ছে পাচিল ঘেরা দালানবাড়ি, মন্দির, মঠ ইত্যাদি। প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম টেরা কোটা শৈলির নির্মিত জমিদারদের মঠটির ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া গুপ্ত ধনের সন্ধানে খোড়া খুড়ি, ভাংচুর করে কতিপয় লোকজন মাঠটিকে বিকৃত করে ফেলেছে। এই মাঠটি প্রায় ৩০ হাত মাটির নিচে দেবে গেছে। জমিদারবাড়ির সন্নিকটে কালীমন্দিরটিও ভগ্নদশায় পতিত। এই মন্দিরের কষ্টি পাথরের কালী মূর্তিটি অনেক আগেই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জমিদার বাড়ি সংলগ্ন বিশাল দীঘি টি ও দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। উজানীর অদূরে মহাটালী গ্রামে রয়েছে জমিদার আমলের আরও একটি প্রাচীন মন্দির ও আছে বিশাল দীঘি। দীর্ঘ দিন ধরে এগুলো কোনো সংস্কার না করায় ক্রমেই বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
সমরেন্দ্র চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে আরও জানা যায়, জমিদারদের ফেলে যাওয়া সম্পদের প্রায় ৭০ ভাগ একর জমি-জায়গা এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল ভয়ভীতি দেখিয়ে ছলচাতুরি করে জাল দলিল ও বল প্রয়োগের মাধ্যেমে নাম মাএ মূল্যে দখল করে নিয়েছে। বাংলা ১৩৫২সালের ঝড়ে তহশিলের বিভিন্ন কাগজ পত্র নষ্ট হয়ে যায়। এই সুযোগে এলাকার ওই প্রভাবশালীরা নিজেদের জমি দাবি করে ওই জমিদারি সম্পওির বেশ কিছু অংশ দলিল করে নেয়। যা ইসলাম কাঠি দলিল বাংলাদেশ আমলে বাতিল করা হয়।
পুরনো স্মৃতি চারন করে সমরেন্দ্র আরো বলেন, তৎকালীন চান্দার বিলসহ প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর এলাকা নিয়েছিল তাদের এই জমিদারি আর এই জমিদারি এলাকা বিভিন্ন অংশে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা স্থাপনা, নিদের্শন। উজানীর ১৫ কি: মি: পূর্বে রাজৈর উপজেলার খালিয়াতেও রয়েছে অনুরুপ জমিদার বাড়ী, টেরা কোটা মন্দির, শান বাধানো ঘাট ইত্যাদি। উজানীর জমিদার বাড়ী, মন্দির, মঠের যথেষ্ট মিল রয়েছে। উজানীর জমিদার বাড়ির ন্যায় খালিয়ার জমিদার বাড়ির নিদের্শন গুলোও বর্তমানে ধ্বংসের মুখে।
এক সময়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উজানী ও খালিয়ার সঙ্গে পাকা সড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলেও সংস্কার ঘটেনি ইতিহাস বিজড়িত এখানকার স্মৃতি চিহ্ন গুলোর প্রতœতত্ব বিভাগ উজানী ও খালিয়ার জমিদার আমলের নিদের্শন গুলো সংস্কার ও সংক্ষনের জন্য এগিয়ে এলে এখানেও গড়ে উঠতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র।