৬৫ বছরে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট

Slider বাধ ভাঙ্গা মত সারাবিশ্ব

8812910b824ee4c637377ea85195ac47-58ff9a49ecc48

 ঢাকা; ডোনাল্ড ট্রাম্পআগামী শনিবার, ২৯ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০ দিন পূর্ণ হবে। প্রথম ১০০ দিনে কী কী করবেন, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তার মস্ত ফিরিস্তি দিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ১০০ দিনের কর্মসূচি প্রকাশ করে বলেছিলেন, এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সঙ্গে তাঁর চুক্তি। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ও সিবিএস টিভি ভিন্ন ভিন্ন বিশ্লেষণে দাবি করেছে, সেই তালিকার প্রতিশ্রুতিগুলোর কার্যত কোনো কিছুই অর্জিত হয়নি। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই বাস্তবায়িত হয়নি। একজন রক্ষণশীল বিচারপতির নিয়োগ চূড়ান্ত করার বাইরে কংগ্রেসেও তাঁর অন্য কোনো সাফল্য নেই।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই অর্জিত হয়েছে বা হওয়ার পথে। তবে এতে ট্রাম্প এ-ও স্বীকার করেছেন, দেশ শাসন যে এতটা কঠিন ও জটিল, তা তাঁর জানা ছিল না। স্বাস্থ্যবিমা বা ন্যাটোর ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি বিশেষ কিছুই জানতেন না।
ট্রাম্পের এই ব্যর্থতার ছাপ পড়েছে তাঁর জনসমর্থনে। ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি নিউজের গৃহীত এক জাতীয় জনমত জরিপ অনুসারে এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের কাজে সন্তুষ্ট এমন মার্কিনের সংখ্যা মাত্র ৪২ শতাংশ। আর সন্তুষ্ট নন এমন লোকের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও এনবিসি নিউজের গৃহীত আরেকটি জরিপ অনুসারে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন রয়েছে এমন নাগরিকের সংখ্যা আরও কম, মাত্র ৪০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের গত ৬৫ বছরের ইতিহাসে ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মাথায় এত কম জনসমর্থন অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের ছিল না। ট্রাম্পের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ক্ষেত্রে তা ছিল ৬৯ শতাংশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এক টুইটার বার্তায় এই দুই জরিপকেই ‘ফেইক নিউজ’ বা মিথ্যা খবর বলে বাতিল করে দিয়েছেন। তবে তাঁর মতে, এসব জরিপ ‘পুরোপুরি ভুল’ হলেও তাতে খুবই ইতিবাচক কিছু বিষয় আছে। পোস্ট/এবিসির জরিপ বলছে, নির্বাচনে যাঁরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাই এখনো তাঁর ওপর আস্থাবান। ৯৬ শতাংশই বলেছেন, ট্রাম্পকে ভোট দেওয়াটা সঠিক ছিল। তাঁদের মাত্র ২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ট্রাম্পের কাজে হতাশ। কিন্তু যেসব মার্কিন হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের মাত্র ৮৫ শতাংশ বলেছেন, সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। ভাষ্যকারেরা মনে করেন, ট্রাম্প সম্ভবত এ বিষয়টিকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
সত্যি বলতে, ১০০ দিন এগিয়ে আসছে, অথচ দেখানোর মতো কোনো সাফল্য তাঁর নেই—এ কথা ট্রাম্প খুব ভালো করে জানেন বলেই রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যের কাছে ‘ওবামাকেয়ার’ নামে পরিচিত স্বাস্থ্যবিমা আইন দ্রুত বাতিল করার দাবি করেছেন। নিজ দলের ভেতরই সমর্থনের অভাবে একবার সে চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এবার তিনি আশা করছেন, বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা তাঁকে সে কাজে সাহায্য করবে, কিন্তু সেটি খুবই অবাস্তব পরিকল্পনা। ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ওবামাকেয়ার বাতিল হয় এমন কোনো কাজই তাঁরা সমর্থন করবেন না।
এ ছাড়া ট্রাম্প এই ১০০ দিনের মধ্যেই আয়কর আইন নতুন করে প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কংগ্রেসের রিপাবলিকান স্পিকার অবশ্য বলেছেন, এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান চিন্তা ফেডারেল সরকারের কাজ চালু রাখতে নতুন ব্যয় বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া। শুক্রবারের মধ্যে এই ব্যয় বরাদ্দ গৃহীত না হলে ফেডারেল সরকারের অধিকাংশ কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। ট্রাম্প সে কথা জেনেও শর্ত দিয়েছেন, এই ব্যয় বরাদ্দ প্রস্তাবে মেক্সিকো সীমান্তে তাঁর প্রস্তাবিত দেয়ালের জন্য দেড় শ কোটি ডলার রাখতে হবে।
রিপাবলিকান নেতৃত্বের ভয়, হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের উভয় কক্ষে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও সরকারের কাজকর্ম বন্ধ হওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ হলে দায়ভার তাঁদের ওপরই বর্তাবে, যার প্রভাব পড়তে পারে ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *