সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আরও বলেন, বিচারকদের সঙ্গে কোনো ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। এখন যেকোনো স্থান থেকেই জনগণ মামলার খবর জানতে পারছেন। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এবং জট কমাতে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নেই। দেশকে উন্নত করতে আইনের শাসন প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও থাকতে হবে। এ দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা যাবে যদি আইনজীবীরা বিচারকদের সহযোগিতা করেন।
সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি বলেন, বিজ্ঞান ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে দেশ এখন ছোট হয়ে আসছে। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে এখন পরের দিনই জনগণ তাদের নকল পেয়ে যাচ্ছে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য। এখন যেকোনো স্থান থেকেই জনগণ তার মামলার খবর জানতে পারছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এবং জট কমাতে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নেই। এখন যাঁরা বিচারক হচ্ছেন, তাঁরা যেমন উচ্চশিক্ষিত, তেমনিভাবে ইংরেজি ও কম্পিউটারে তাঁরা দক্ষ। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে আমাদের ১ হাজার ৫০০ বিচারকের তাদের দেশের ভোপালে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। বিচারকদের সঙ্গে কোনো ধরনের ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। তাঁরা একটি এলাকায় যান অতিথি হিসেবে। যদি কারও সঙ্গে সমস্যা হয়, তাহলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে আমাকে অবগত করলে অবশ্যই এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, জেলা জজ যদি সৎ লোক হন, তাহলে অন্য বিচারকেরা অসৎ হতে পারেন না। তাই বর্তমানে সৎ বিচারক ছাড়া কাউকে জেলা জজ করা হয় না। দেশে বর্তমানে আইনের ত্রুটি যেমন আছে, তেমনি আছে মামলাজট। অনেক সময় প্রয়োজনীয় আইন হয় না। তাই রায়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকি, যাতে করে জনগণের কম হয়রানি হয়। মনে রাখতে হবে, উন্নত দেশ হতে হলে নাগরিকদের কম খরচে ও কম সময়ে উন্নত সেবা দিতে হবে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক উন্নত হয়েছে। দেশে যত দুর্যোগই আসুক না কেন, এখন বাইরের সাহায্য ছাড়াই দেশ তা মোকাবিলা করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেই দেশ উন্নয়নশীল দেশ হবে না। অনেক দেশের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি হলেও তারা উন্নত দেশের মর্যাদা পায় না। এর সঙ্গে আরও অনেক সূচক জড়িত। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইনের শাসন। পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও থাকতে হবে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা যাবে যদি বিচারকদের আইনজীবীরা সহযোগিতা করেন। প্রধান বিচারপতির পক্ষে আইনের শাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, যদি সবাই মিলে সহযোগিতা না করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জেলা ও দায়রা জজ আতাব উল্লা, জেলা বারের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ চৌধুরী আবদুল হাই, পিপি সিরাজুল হক চৌধুরী প্রমুখ।