পঞ্চায়েতের রক্তচক্ষু তাঁকে দমাতে পারেনি। যে কোনো রকম শাস্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে নিজের কথা জোর গলায় জানিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত সভার সমস্ত নিদান অগ্রাহ্য করে, সবার সামনে মাতাল স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করলেন ভারতের বিহারের ফিরাঙ্গি বিগা গ্রামের বছর পঁয়ত্রিশের নারী ফুলিয়া দেবী। তাঁর সাহসে রীতিমতো অবাক সবাই।
মেয়েরা জিন্স পরবে না, মোবাইল ফোন ব্যবহার করবে না, সন্ধ্যার পর একা বাড়ির বাইরে বেরোবে না, অন্য জাতের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করলে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে… ভারতের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এমন হাজারো পঞ্চায়েতী নিদান মাঝেমধ্যেই উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। এমনই এক গ্রামসভার অতি গ্রাম্য নারী সব ফতোয়াকে ঝেড়ে ফেলে নিজের ইচ্ছার কথা নিজের মুখে জানিয়েছেন। তিনি জানেন, এর পর পঞ্চায়েতের শাস্তির খাঁড়া হয়তো নেমে আসতে পারে তাঁর ওপর। তবু পিছিয়ে যাননি ফুলিয়া দেবী। নিজের জীবনকে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন। তার জন্য যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত তিনি।
বিহারের শেখপুরা জেলার ফিরাঙ্গি বিগা গ্রামের মুচু বিন্দের সঙ্গে বিয়ে হয় ফুলিয়া দেবীর। বিয়ের পর থেকেই মদ্যপ স্বামীর অত্যাচার সহ্য করছেন তিনি। মারধর, মানসিক অত্যাচার, বাদ যায় না কিছুই। বেশ কয়েক বছর ধরে অত্যাচার সহ্য করে শেষ পর্যন্ত রুখে দাঁড়ান তিনি। স্বামীকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর সে কথা জানিয়ে দেন পঞ্চায়েতের সভায় সারা গ্রামের সামনে। স্বামীকে সুপথে ফেরানোর অনেক চেষ্টা তিনি করেছেন বলে জানান। কিন্তু মুচু বিন্দ মদের নেশা ছাড়তে পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে নিজের মতো বাঁচার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রয়োজনে যেকোনো শাস্তির মুখোমুখি হতেও তিনি প্রস্তুত বলে পঞ্চায়েতকে জানিয়ে দেন।
গ্রামসভা তাঁর সব কথা শুনলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। পরে নিজের দেবর হিরা বিন্দকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ফুলিয়া। বিপত্নীক হিরাও ফুলিয়ার সঙ্গে ঘর বাঁধতে রাজি। যে দেশে এখনো স্বামীর হাজার অপরাধ সত্ত্বেও বিবাহিত মেয়েদের একমাত্র আশ্রয় বলে ধরা হয়, সেখানে বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের এক নারীর সাহসকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। এইসময়