ঢাকা; কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং বেড়েছে ভোগান্তি। যন্ত্রণা। শুধুমাত্র সিটিং সার্ভিস বাসগুলো লোকাল হয়ে চললেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। আবার সিটিং সার্ভিস বন্ধে সরকারের অভিযানকে বেকায়দায় ফেলতে সড়কে গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে মালিকদের বিরুদ্ধে। গতকালও রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট ছিল। ফলে গণপরিবহনের নৈরাজ্য বন্ধের ঘোষণা ও মোবাইল কোর্ট শুরুর দ্বিতীয় দিন গতকালও বাস সংকটে রাজধানী জুড়ে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বরং তা প্রথমদিনের চেয়েও প্রকট ছিল । সকাল ও সন্ধ্যাসহ সারাদিনই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাত্রী ভোগান্তি চোখে পড়েছে। গাড়ির জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে আধ থেকে এক ঘণ্টাও। অনেককে গন্তব্যে ফিরতে হয়েছে পায়ে হেঁটে। এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া না দেয়ায় বিভিন্ন গাড়িতে যাত্রীর সঙ্গে সুপারভাইজারের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। গতকাল জাবালে নূর পরিবহনের শ্রমিকরা মারধর করে আহত করেছে একাত্তর টিভির প্রযোজক আতিকুর রহমানকে। মিরপুরে তার উপর এই হামলা চালানো হয়। একইদিন সমকালের স্টাফ রিপোর্টার ইন্দ্রজিৎ সরকারকে মারধর করেছে পরিবহন শ্রমিকরা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক মানবজমিনকে বলেন, পরিবহন মালিক সমিতি অতীতে কখনও যাত্রীবান্ধব সিদ্ধান্ত মানে নি। এবারও সিটিং সার্ভিস উঠিয়ে দেয়া হলেও ভাড়া নিচ্ছে আগের মতো। আবার অতিরিক্ত যাত্রীও বহন করা হচ্ছে। এবারও যদি সিটিং সার্ভিস তুলে দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আগামীতে পরিবহন সেক্টর মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়বে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাবিস্কো মোড়ে আসেন স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ী শাহ আলম। সঙ্গে অসুস্থ স্ত্রী ও দু’স্বজন। বাসে চড়ে যাবেন মগবাজারে আদ্-দীন হাসপাতালে। আধঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও বাস পাননি। ধীরে ধীরে লোক সমাগম শতাধিক ছাড়িয়ে যায়। তবু বাসের নাম নেই। আধঘণ্টা পর অগত্যা একটি সিনজিচালিত অটো রিকশায় চেপে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
তিনি বলেন, অন্য দিন কিছুক্ষণ পর পর গাড়ি পাওয়া যেত। আজ আধঘণ্টায়ও গাড়ি পাইনি। আরও কয়েকজনকে যৌথভাবে ভাড়া পরিশোধের চুক্তি করে পথ ধরতে দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার পর মগবাজার মোড়ে এসে চোখে পড়ে আরো বেশি লোকের জটলা। দীর্ঘ ৪০ মিনিট অপেক্ষাতেও কোনো গাড়ি পাননি বিক্রমপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. আতিকুর রহমান। তিনি কাজ সেরে গুলিস্তান যাওয়ার বাস ধরার অপেক্ষায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় ইতিপূর্বের সিটিং সার্ভিস দেয়া কোনো বাসের দেখা না পেয়ে শেষে একটি ৬নং লোকালবাসে উঠে পড়েন।
কিছুটা এগুতে যানজটে আটকে পড়া লাব্বাইক ট্রান্সপোর্টের একটি বাস পাওয়া যায়। সেটাতে উঠতেই চোখে পড়ে যাত্রীদের সঙ্গে সহকারী সাদিক হোসেন রনির বচসা। মগবাজারের পর থেকে মৌচাক যেতে ভাড়া চেয়ে বসে ১০টাকা। লোকাল না সিটিং সার্ভিসের ভাড়া জানতে চাইতেই তিনি বলেন, ভাড়া ৫ টাকা হলেও সামনে চেকার আছে, তাই এই ভাড়া নিচ্ছি। এর প্রমাণ হিসেবে জানালেন, আগে সাইনবোর্ড থেকে বাইপাইল যেতে নেয়া হতো ৮৫ টাকা। এখন লোকাল করায় নিচ্ছি ৬০ টাকা। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকযাত্রী আপত্তি তুলে বললেন, না কোনো ভাড়া তারা কমায়নি। ফার্মগেট থেকে উঠা তিতুমীর কলেজের ছাত্র রেজাউল করিম বলেন, ৩৫ মিনিট অপেক্ষার পর যুদ্ধ করে বাসে উঠেছি। আমরা ছাত্র হলেও বাসাবো যেতে নেয়া হয়েছে ১০ টাকা ভাড়া। পাশে বসা তেজগাঁও কলেজের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম বলেন, আগেও এরা ছাত্রদের হাফ ভাড়া নিত না। এখনও নেয় না। বৌদ্ধমন্দির যেতে আমার কাছ থেকে ১৪ টাকা নেয়া হয়েছে।
রাস্তায় বাস কম কেন জানতে চাইলে সহকারী রনি বলেন, আমাদের লাইনে লাব্বাইকের ৮০টা বাস আছে। আজ নামানো হয়েছে ৩০টা। মামলা এড়াতে বাকি বাসের ছাদের লোহার কাঠামোটা খোলার কাজ চলছে।
দুপুরে গুলিস্তান মোড়ে স্টপেজ ও নিজেদের ভাসমান কাউন্টারে যাত্রী উঠাচ্ছিল ওয়েলকাম সার্ভিসের ব-১১ ৭৫৯৪ নং বাস। একযাত্রী গুলিস্তান থেকে ফার্মগেটের ভাড়া জানতে চাইতেই সহকারী সুমন জানালেন ১০ টাকা। লোকাল হিসেবে চললে ভাড়া এত বেশি কেন জানতে চাইতে তিনি জবাব দিলেন, সার্ভিস লোকাল হয়েছে, ভাড়া তো কমেনি। তবে তার ওই কথা ঢাকতে এগিয়ে আসেন লাইনম্যান মো. মাসুদ রানা। তিনি বলেন, আমরা এখন ভাড়া কমিয়েছি। গুলিস্তান থেকে জিরানী বাজার পর্যন্ত আগে ৭০টাকা নেয়া হতো। এখন নেয়া হয় ৫৮ টাকা। এটার প্রমাণ দিতে গাড়ির কাচে লাগানো ভাড়ার চার্ট দেখান তিনি। তবে তাও ছিল প্রতারণা। সে চার্ট অন্য রুটের। তবে যাত্রীদের ঝামেলার কারণে এবং আগের ভাড়া প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ লাইনে ৯৫টি বাসের মধ্যে এখন ৬০টি চালানো হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
কিছুটা এগুতেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পাশেই দেখা যায় টিকিট দিয়ে যাত্রী তুলছে ঢাকা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪২৩০ নম্বর বাস। গুলিস্তান থেকে বনানীগামী এক যাত্রীকে দেয়া হলো ২০ টাকার টিকিট। লোকালে চললে টিকিট দিয়ে যাত্রী তোলার কারণ কী জানতে চাইলে লাইনম্যান পরিচয় দেয়া হাশেম ও সহকারী সুমন বলেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য টিকিট দিচ্ছি। তবে ওই লাইনে তাদের ৪৫টি বাসের মধ্যে ওই দিন অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় নামানো হয়নি বলে জানান তারা।
স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব ১১ ০৫৫৮) পল্টন মোড় থেকে ফার্মগেট যাচ্ছেন ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র। তিনি বলেন, টেলিভিশনে শুনেছি রোববার থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় ও নিয়মে রাজধানীর সব গণপরিবহন চলবে। কিন্তু দুপুরে মাওয়া ঘাটে নেমেই ভুল ভাঙলো। আগের ভাড়ায়ই চলছে সব গাড়ি। মাওয়া ঘাট থেকে ফার্মগেট যেতে আমাকে বাধ্য হয়ে ১০০ টাকার টিকিট কিনতে হয়েছে উল্লেখ করে তা দেখান। একইভাবে টিকিট দেখান তিতুমীর কলেজের ছাত্র তিতু মোল্লা এবং বাংলা কলেজের ছাত্র দিলীপ শিকারী। এর কারণ জানতে চাইলে সহকারী জয় বলে আমাদের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। অপর সহকারী শাকিল আহমেদ চৌধুরী বলে, যে যাই বলুক। আমাদের গাড়ির মালিক না বললে আমরা কীভাবে কম নেব। মালিক কমালেই আমরা কমাতে পারবো।
এদিকে গতকাল দুপুরে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট মোড়ে গণপরিহনের ব্যাপক উপস্থিতিসহ যানজটের সেই চিরচেনা দৃশ্য দেখা যায়নি। প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য গাড়ির উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও গণপরিহন ছিল যথেষ্ট কম। এছাড়া রাজধানীর ফার্মগেট, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কাওরান বাজার, নাবিস্কো, সাতরাস্তা, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন মোড়েও গণপরিবহনের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম দেখা গেছে। প্রতিটি মোড়েই সকাল-দুপুর অপেক্ষারত যাত্রীদের দাঁড়িয়ে গাড়ির প্রতীক্ষা করতে দেখা গেছে।
বিকেল-সন্ধ্যায় অফিস বা কর্মস্থল ফেরত মানুষকেও দুর্ভোগে পড়তে হয়। গতকাল দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট, সার্ক ফোয়ারা মোড়, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দুর্ভোগের চিত্র। বেশ ক’জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত দুদিন ধরেই তারা কর্মস্থল ও গন্তব্যে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। একে তো প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তার ওপর আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো পরিবহন পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের বেশির ভাগই আগের নিয়মে চললেও কিছু গণপরিবহনে আগের মতোই ভাড়া আদায় চলছে। যাত্রী চালক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহন কমে যাওয়া, নতুন নিয়ম অনুযায়ী বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না পাওয়া, কিছু ক্ষেত্রে তালিকা পেলেও তার তোয়াক্কা না করা ও বিআরটিএ, গণপরিবহনের মালিক, চালকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা সাধারণের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
আজিমপুরগামী বর্ণমালা পরিবহনের জন্য বিকাল তিনটার দিকে ফার্মগেটে অপেক্ষায় ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার। তিনি জানান, আধঘণ্টা অপেক্ষার পরও নির্ধারিত বাস আসেনি। রোববার থেকে এই অবস্থা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুনেছি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে পরিবহন মালিক, শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি বের করছে না। এতে সড়কে গাড়ি কমে গেছে। কিন্তু এতে করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, নতুন নিয়মে ভাড়া ও যাত্রী সেবার মানের কোনো হেরফের হয়নি। উপরন্তু দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। একই স্থানে মগবাজারগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলেন ডিপিডিসির কর্মকর্তা একরামুল আলম। তিনি বলেন, সব কিছু আগের মতোই রয়ে গেছে। রাজধানীতে হঠাৎ করেই গণপরিবহন কমে যাওয়া কারণ হিসেবে মিরপুর ১৩, ১৪ নম্বর থেকে জিরো পয়েন্টে চলাচলকারী ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট লিমিডেট পরিবহনের চালক কালাম মিয়া বলেন, বিআরটিএ এখনো আমাদের ভাড়ার চার্ট দেয়নি। তাই নতুন নিয়মে কোন গন্তব্যে কত ভাড়া এ বিষয়ে আমরা এখনো অবগত নই। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে সুপারভাইজার, লাইনম্যানদের তর্কাতর্কি, হাতাহাতি লেগেই আছে। অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতও তৎপর রয়েছেন। এ কারণে অনেক চালকই গাড়ি বের করছেন না। গুলিস্তান যাওয়ার জন্য অসুস্থ নানী সাহেরা বেগমকে নিয়ে ফার্মগেটে অপেক্ষা করছিলেন রাসেল। আলাপকালে তিনি জানান, ৪৫ মিনিটেও তিনি কোনো গাড়িতে ওঠতে পারেন নি। কেন পারেন নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে সিটিং ও গেটলক সার্ভিস ছিল। এখন তা নেই। বাসগুলো আসছে যাত্রী বোঝাই হয়ে। কিছু যাত্রী নেমে গেলেও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অপেক্ষমাণ যাত্রীরা। ভেতরে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। যে কারণে অসুস্থ নানীকে নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যারা যুবক তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা বৃদ্ধ ও অসুস্থ তাদের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আগের নিয়মই ভালো ছিল।
বিকাল চারটার দিকে শাহবাগে এক আত্মীয়কে ধামরাই অভিমুখী বাসে উঠিয়ে দিতে অপেক্ষায় ছিলেন রাজধানীর একটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সম্রাট। তিনি জানান, নতুন নিয়মের আগে এই রুটের বাসগুলো দু’মিনিট পর পর পাওয়া যেত। কিন্তু গত দু’দিন ধরে আধঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টায়ও কোন গাড়ি আসছে না। তিনি বলেন, শুনেছি ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে গাড়ি বের হচ্ছে না। একই স্থানে গাজীপুর অভিমুখী বাসের অপেক্ষা করছিলেন উত্তরার একটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোনো গাড়ি পাইনি।
এদিকে ভাড়া নিয়ে এন্তার অভিযোগ যাত্রীদের। মিরপুর থেকে সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে এর সত্যতা মেলে। ওই বাসের একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন- কিছু গণপরিবহন নতুন নিয়মে গন্তব্যের হিসেবে ভাড়া নিচ্ছে না। আগের মতোই তারা সিটিং ও গেটলক হিসেবে ভাড়া আদায় করছে । মো. সালাউদ্দিন নামে এক যাত্রী জানান, বিহঙ্গ পরিবহনে সদরঘাট থেকে তালতলা পর্যন্ত আগের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। কিন্তু নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর একই গন্তব্যের ভাড়া সেই ২০ টাকাই দিতে হচ্ছে। নতুন নিয়ম চালু করে লাভ কি হলো? বিল্লাল হোসেন নামের আরেক যাত্রী অভিযোগ করেন একই পরিবহনে গুলিস্তান থেকে মিরপুর-১০ নম্বরে যাওয়ার পথে তিনি ভাড়া দিয়েছেন ২০ টাকা। কিন্তু দুপুরের পর গুলিস্তান যেতে তাকে ৫ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। তবে, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগের বিপরীতে কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও জানান যাত্রীরা। মিরপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারজান ফেরদৌস বলেন, মিরপুর-১ নম্বর থেকে তানজিল পরিবহনে শাহবাগ আসতে আগে ভাড়া দিয়েছি ২০ টাকা। কিন্তু গত দুদিন ধরে ভাড়া দিচ্ছি ১৭ টাকা। তানজিল পরিবহনের সুপারভাইজার ওয়ালিদ বলেন, বিআরটিএ আমাদের ভাড়ার তালিকা দিয়েছে। তাই আমরা সেই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছি। তবে, শুনেছি অনেক বাসে এখনো ভাড়ার তালিকা পায়নি।
আজিমপুর থেকে, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব, শুক্রাবাদ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, বাংলা কলেজ, মিরপুর-১২-এর দিকে চলাচল করে ৯নং বাস। মাঝে মাঝে দুই-একটা বাস আসলেও তা ছিল যাত্রী বোঝাই। আজিমপুর এতিমখানা, ইডেন কলেজ, নিউমার্কেট, সিটিকলেজ, শুক্রাবাদ, সংসদ ভবন, খামারবাড়ি, বিজয় সরণি, ক্যান্টনম্যান্ট জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী হয়ে খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী, বোর্ডবাজার, গাজীপুর পর্যন্ত চলাচল করে ভিআইপি ২৭ নম্বর পরিবহন। বাসটি আগে সিটিং চললেও এখন চলছে লোকালে। তবে ভাড়া আগের মতোই রাখছে যাত্রীদের কাছ থেকে। আগের চেয়ে একেবারেই কম সংখ্যক পরিবহন রাস্তায় দেখা গেছে গতকাল। একই রুটে চলাচল করে সূচনা পরিবহন। সূচনা পরিবহনের মোজাম্মেল হক নামের এক যাত্রী বলেন, শুক্রাবাদ পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া হয় ৫ টাকা। কিন্তু আগের মতো ১০ টাকা দিতে হচ্ছে। গাড়িও দুই দিন আগের চেয়ে কম চলছে।
মিডওয়ে পরিবহন মোহাম্মদপুর, ফিজিক্যাল কলেজ, স্টার কাবাব, জিগাতলা, সিটি কলেজ, কাঁটাবন, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, নটরডেম কলেজ, কমলাপুর, মুগদা, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির হয়ে খিলগাঁও পর্যন্ত। এটিও আগের মতোই চলাচল করছে। ভাড়াও নিচ্ছে আগের মতোই।
কল্যাণ ভক্ত নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, আমি সকালে ফাল্গুন আর্ট ট্রান্সপোর্টের এক গাড়িতে চড়ে উত্তরা থেকে আজিমপুর যাই। গাড়িটি আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে ছেড়ে সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, কাকরাইল, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত চলাচল করে। আজিমপুর থেকে মৌচাক, বারিধারা, বসুন্ধরা ও উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ের ভাড়া যথাক্রমে ১৫ টাকা, ২৪ টাকা ও ৩০ টাকা। তবে লোকাল হয়ে যাওয়ার পর আগের এই ভাড়া এখনও কমানো হয়নি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক মানবজমিনকে বলেন, পরিবহন মালিক সমিতি অতীতে কখনও যাত্রীবান্ধব সিদ্ধান্ত মানে নি। এবারও সিটিং সার্ভিস উঠিয়ে দেয়া হলেও ভাড়া নিচ্ছে আগের মতো। আবার অতিরিক্ত যাত্রীও বহন করা হচ্ছে। এবারও যদি সিটিং সার্ভিস তুলে দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আগামীতে পরিবহন সেক্টর মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়বে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নাবিস্কো মোড়ে আসেন স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ী শাহ আলম। সঙ্গে অসুস্থ স্ত্রী ও দু’স্বজন। বাসে চড়ে যাবেন মগবাজারে আদ্-দীন হাসপাতালে। আধঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও বাস পাননি। ধীরে ধীরে লোক সমাগম শতাধিক ছাড়িয়ে যায়। তবু বাসের নাম নেই। আধঘণ্টা পর অগত্যা একটি সিনজিচালিত অটো রিকশায় চেপে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
তিনি বলেন, অন্য দিন কিছুক্ষণ পর পর গাড়ি পাওয়া যেত। আজ আধঘণ্টায়ও গাড়ি পাইনি। আরও কয়েকজনকে যৌথভাবে ভাড়া পরিশোধের চুক্তি করে পথ ধরতে দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে ১০টার পর মগবাজার মোড়ে এসে চোখে পড়ে আরো বেশি লোকের জটলা। দীর্ঘ ৪০ মিনিট অপেক্ষাতেও কোনো গাড়ি পাননি বিক্রমপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. আতিকুর রহমান। তিনি কাজ সেরে গুলিস্তান যাওয়ার বাস ধরার অপেক্ষায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় ইতিপূর্বের সিটিং সার্ভিস দেয়া কোনো বাসের দেখা না পেয়ে শেষে একটি ৬নং লোকালবাসে উঠে পড়েন।
কিছুটা এগুতে যানজটে আটকে পড়া লাব্বাইক ট্রান্সপোর্টের একটি বাস পাওয়া যায়। সেটাতে উঠতেই চোখে পড়ে যাত্রীদের সঙ্গে সহকারী সাদিক হোসেন রনির বচসা। মগবাজারের পর থেকে মৌচাক যেতে ভাড়া চেয়ে বসে ১০টাকা। লোকাল না সিটিং সার্ভিসের ভাড়া জানতে চাইতেই তিনি বলেন, ভাড়া ৫ টাকা হলেও সামনে চেকার আছে, তাই এই ভাড়া নিচ্ছি। এর প্রমাণ হিসেবে জানালেন, আগে সাইনবোর্ড থেকে বাইপাইল যেতে নেয়া হতো ৮৫ টাকা। এখন লোকাল করায় নিচ্ছি ৬০ টাকা। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকযাত্রী আপত্তি তুলে বললেন, না কোনো ভাড়া তারা কমায়নি। ফার্মগেট থেকে উঠা তিতুমীর কলেজের ছাত্র রেজাউল করিম বলেন, ৩৫ মিনিট অপেক্ষার পর যুদ্ধ করে বাসে উঠেছি। আমরা ছাত্র হলেও বাসাবো যেতে নেয়া হয়েছে ১০ টাকা ভাড়া। পাশে বসা তেজগাঁও কলেজের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম বলেন, আগেও এরা ছাত্রদের হাফ ভাড়া নিত না। এখনও নেয় না। বৌদ্ধমন্দির যেতে আমার কাছ থেকে ১৪ টাকা নেয়া হয়েছে।
রাস্তায় বাস কম কেন জানতে চাইলে সহকারী রনি বলেন, আমাদের লাইনে লাব্বাইকের ৮০টা বাস আছে। আজ নামানো হয়েছে ৩০টা। মামলা এড়াতে বাকি বাসের ছাদের লোহার কাঠামোটা খোলার কাজ চলছে।
দুপুরে গুলিস্তান মোড়ে স্টপেজ ও নিজেদের ভাসমান কাউন্টারে যাত্রী উঠাচ্ছিল ওয়েলকাম সার্ভিসের ব-১১ ৭৫৯৪ নং বাস। একযাত্রী গুলিস্তান থেকে ফার্মগেটের ভাড়া জানতে চাইতেই সহকারী সুমন জানালেন ১০ টাকা। লোকাল হিসেবে চললে ভাড়া এত বেশি কেন জানতে চাইতে তিনি জবাব দিলেন, সার্ভিস লোকাল হয়েছে, ভাড়া তো কমেনি। তবে তার ওই কথা ঢাকতে এগিয়ে আসেন লাইনম্যান মো. মাসুদ রানা। তিনি বলেন, আমরা এখন ভাড়া কমিয়েছি। গুলিস্তান থেকে জিরানী বাজার পর্যন্ত আগে ৭০টাকা নেয়া হতো। এখন নেয়া হয় ৫৮ টাকা। এটার প্রমাণ দিতে গাড়ির কাচে লাগানো ভাড়ার চার্ট দেখান তিনি। তবে তাও ছিল প্রতারণা। সে চার্ট অন্য রুটের। তবে যাত্রীদের ঝামেলার কারণে এবং আগের ভাড়া প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ লাইনে ৯৫টি বাসের মধ্যে এখন ৬০টি চালানো হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
কিছুটা এগুতেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পাশেই দেখা যায় টিকিট দিয়ে যাত্রী তুলছে ঢাকা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪২৩০ নম্বর বাস। গুলিস্তান থেকে বনানীগামী এক যাত্রীকে দেয়া হলো ২০ টাকার টিকিট। লোকালে চললে টিকিট দিয়ে যাত্রী তোলার কারণ কী জানতে চাইলে লাইনম্যান পরিচয় দেয়া হাশেম ও সহকারী সুমন বলেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য টিকিট দিচ্ছি। তবে ওই লাইনে তাদের ৪৫টি বাসের মধ্যে ওই দিন অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় নামানো হয়নি বলে জানান তারা।
স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব ১১ ০৫৫৮) পল্টন মোড় থেকে ফার্মগেট যাচ্ছেন ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র। তিনি বলেন, টেলিভিশনে শুনেছি রোববার থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় ও নিয়মে রাজধানীর সব গণপরিবহন চলবে। কিন্তু দুপুরে মাওয়া ঘাটে নেমেই ভুল ভাঙলো। আগের ভাড়ায়ই চলছে সব গাড়ি। মাওয়া ঘাট থেকে ফার্মগেট যেতে আমাকে বাধ্য হয়ে ১০০ টাকার টিকিট কিনতে হয়েছে উল্লেখ করে তা দেখান। একইভাবে টিকিট দেখান তিতুমীর কলেজের ছাত্র তিতু মোল্লা এবং বাংলা কলেজের ছাত্র দিলীপ শিকারী। এর কারণ জানতে চাইলে সহকারী জয় বলে আমাদের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। অপর সহকারী শাকিল আহমেদ চৌধুরী বলে, যে যাই বলুক। আমাদের গাড়ির মালিক না বললে আমরা কীভাবে কম নেব। মালিক কমালেই আমরা কমাতে পারবো।
এদিকে গতকাল দুপুরে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট মোড়ে গণপরিহনের ব্যাপক উপস্থিতিসহ যানজটের সেই চিরচেনা দৃশ্য দেখা যায়নি। প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য গাড়ির উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হলেও গণপরিহন ছিল যথেষ্ট কম। এছাড়া রাজধানীর ফার্মগেট, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কাওরান বাজার, নাবিস্কো, সাতরাস্তা, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন মোড়েও গণপরিবহনের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম দেখা গেছে। প্রতিটি মোড়েই সকাল-দুপুর অপেক্ষারত যাত্রীদের দাঁড়িয়ে গাড়ির প্রতীক্ষা করতে দেখা গেছে।
বিকেল-সন্ধ্যায় অফিস বা কর্মস্থল ফেরত মানুষকেও দুর্ভোগে পড়তে হয়। গতকাল দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট, সার্ক ফোয়ারা মোড়, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দুর্ভোগের চিত্র। বেশ ক’জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত দুদিন ধরেই তারা কর্মস্থল ও গন্তব্যে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। একে তো প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তার ওপর আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো পরিবহন পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের বেশির ভাগই আগের নিয়মে চললেও কিছু গণপরিবহনে আগের মতোই ভাড়া আদায় চলছে। যাত্রী চালক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহন কমে যাওয়া, নতুন নিয়ম অনুযায়ী বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না পাওয়া, কিছু ক্ষেত্রে তালিকা পেলেও তার তোয়াক্কা না করা ও বিআরটিএ, গণপরিবহনের মালিক, চালকদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা সাধারণের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
আজিমপুরগামী বর্ণমালা পরিবহনের জন্য বিকাল তিনটার দিকে ফার্মগেটে অপেক্ষায় ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার। তিনি জানান, আধঘণ্টা অপেক্ষার পরও নির্ধারিত বাস আসেনি। রোববার থেকে এই অবস্থা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুনেছি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারণে পরিবহন মালিক, শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি বের করছে না। এতে সড়কে গাড়ি কমে গেছে। কিন্তু এতে করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, নতুন নিয়মে ভাড়া ও যাত্রী সেবার মানের কোনো হেরফের হয়নি। উপরন্তু দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। একই স্থানে মগবাজারগামী বাসের অপেক্ষায় ছিলেন ডিপিডিসির কর্মকর্তা একরামুল আলম। তিনি বলেন, সব কিছু আগের মতোই রয়ে গেছে। রাজধানীতে হঠাৎ করেই গণপরিবহন কমে যাওয়া কারণ হিসেবে মিরপুর ১৩, ১৪ নম্বর থেকে জিরো পয়েন্টে চলাচলকারী ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট লিমিডেট পরিবহনের চালক কালাম মিয়া বলেন, বিআরটিএ এখনো আমাদের ভাড়ার চার্ট দেয়নি। তাই নতুন নিয়মে কোন গন্তব্যে কত ভাড়া এ বিষয়ে আমরা এখনো অবগত নই। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে সুপারভাইজার, লাইনম্যানদের তর্কাতর্কি, হাতাহাতি লেগেই আছে। অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতও তৎপর রয়েছেন। এ কারণে অনেক চালকই গাড়ি বের করছেন না। গুলিস্তান যাওয়ার জন্য অসুস্থ নানী সাহেরা বেগমকে নিয়ে ফার্মগেটে অপেক্ষা করছিলেন রাসেল। আলাপকালে তিনি জানান, ৪৫ মিনিটেও তিনি কোনো গাড়িতে ওঠতে পারেন নি। কেন পারেন নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে সিটিং ও গেটলক সার্ভিস ছিল। এখন তা নেই। বাসগুলো আসছে যাত্রী বোঝাই হয়ে। কিছু যাত্রী নেমে গেলেও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অপেক্ষমাণ যাত্রীরা। ভেতরে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। যে কারণে অসুস্থ নানীকে নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যারা যুবক তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা বৃদ্ধ ও অসুস্থ তাদের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আগের নিয়মই ভালো ছিল।
বিকাল চারটার দিকে শাহবাগে এক আত্মীয়কে ধামরাই অভিমুখী বাসে উঠিয়ে দিতে অপেক্ষায় ছিলেন রাজধানীর একটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সম্রাট। তিনি জানান, নতুন নিয়মের আগে এই রুটের বাসগুলো দু’মিনিট পর পর পাওয়া যেত। কিন্তু গত দু’দিন ধরে আধঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টায়ও কোন গাড়ি আসছে না। তিনি বলেন, শুনেছি ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয়ে গাড়ি বের হচ্ছে না। একই স্থানে গাজীপুর অভিমুখী বাসের অপেক্ষা করছিলেন উত্তরার একটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোনো গাড়ি পাইনি।
এদিকে ভাড়া নিয়ে এন্তার অভিযোগ যাত্রীদের। মিরপুর থেকে সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে এর সত্যতা মেলে। ওই বাসের একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন- কিছু গণপরিবহন নতুন নিয়মে গন্তব্যের হিসেবে ভাড়া নিচ্ছে না। আগের মতোই তারা সিটিং ও গেটলক হিসেবে ভাড়া আদায় করছে । মো. সালাউদ্দিন নামে এক যাত্রী জানান, বিহঙ্গ পরিবহনে সদরঘাট থেকে তালতলা পর্যন্ত আগের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। কিন্তু নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর একই গন্তব্যের ভাড়া সেই ২০ টাকাই দিতে হচ্ছে। নতুন নিয়ম চালু করে লাভ কি হলো? বিল্লাল হোসেন নামের আরেক যাত্রী অভিযোগ করেন একই পরিবহনে গুলিস্তান থেকে মিরপুর-১০ নম্বরে যাওয়ার পথে তিনি ভাড়া দিয়েছেন ২০ টাকা। কিন্তু দুপুরের পর গুলিস্তান যেতে তাকে ৫ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। তবে, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগের বিপরীতে কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াও জানান যাত্রীরা। মিরপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারজান ফেরদৌস বলেন, মিরপুর-১ নম্বর থেকে তানজিল পরিবহনে শাহবাগ আসতে আগে ভাড়া দিয়েছি ২০ টাকা। কিন্তু গত দুদিন ধরে ভাড়া দিচ্ছি ১৭ টাকা। তানজিল পরিবহনের সুপারভাইজার ওয়ালিদ বলেন, বিআরটিএ আমাদের ভাড়ার তালিকা দিয়েছে। তাই আমরা সেই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছি। তবে, শুনেছি অনেক বাসে এখনো ভাড়ার তালিকা পায়নি।
আজিমপুর থেকে, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব, শুক্রাবাদ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, বাংলা কলেজ, মিরপুর-১২-এর দিকে চলাচল করে ৯নং বাস। মাঝে মাঝে দুই-একটা বাস আসলেও তা ছিল যাত্রী বোঝাই। আজিমপুর এতিমখানা, ইডেন কলেজ, নিউমার্কেট, সিটিকলেজ, শুক্রাবাদ, সংসদ ভবন, খামারবাড়ি, বিজয় সরণি, ক্যান্টনম্যান্ট জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী হয়ে খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী, বোর্ডবাজার, গাজীপুর পর্যন্ত চলাচল করে ভিআইপি ২৭ নম্বর পরিবহন। বাসটি আগে সিটিং চললেও এখন চলছে লোকালে। তবে ভাড়া আগের মতোই রাখছে যাত্রীদের কাছ থেকে। আগের চেয়ে একেবারেই কম সংখ্যক পরিবহন রাস্তায় দেখা গেছে গতকাল। একই রুটে চলাচল করে সূচনা পরিবহন। সূচনা পরিবহনের মোজাম্মেল হক নামের এক যাত্রী বলেন, শুক্রাবাদ পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া হয় ৫ টাকা। কিন্তু আগের মতো ১০ টাকা দিতে হচ্ছে। গাড়িও দুই দিন আগের চেয়ে কম চলছে।
মিডওয়ে পরিবহন মোহাম্মদপুর, ফিজিক্যাল কলেজ, স্টার কাবাব, জিগাতলা, সিটি কলেজ, কাঁটাবন, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, নটরডেম কলেজ, কমলাপুর, মুগদা, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির হয়ে খিলগাঁও পর্যন্ত। এটিও আগের মতোই চলাচল করছে। ভাড়াও নিচ্ছে আগের মতোই।
কল্যাণ ভক্ত নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, আমি সকালে ফাল্গুন আর্ট ট্রান্সপোর্টের এক গাড়িতে চড়ে উত্তরা থেকে আজিমপুর যাই। গাড়িটি আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে ছেড়ে সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ, কাকরাইল, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত চলাচল করে। আজিমপুর থেকে মৌচাক, বারিধারা, বসুন্ধরা ও উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ের ভাড়া যথাক্রমে ১৫ টাকা, ২৪ টাকা ও ৩০ টাকা। তবে লোকাল হয়ে যাওয়ার পর আগের এই ভাড়া এখনও কমানো হয়নি।