অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বিচারক। ক্ষোভ থেকে এ কাজ করেছেন বলে জানালে বিচারক তাকে ক্ষমা করেন। পরের তারিখে ওই আসামি ফের জুতা মারার হুমকি দিলে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে এজলাসে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার ১ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আজ রবিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। সেখানে ওইসময় উপস্থিত আদালতের কর্মচারী, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা সবাই হতবাক হয়ে যান। এজলাসে থাকা আইনজীবীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামির দিকে তেড়ে যাওয়ার সময় অবস্থা বেগতিক দেখে বিচারক অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের বুঝিয়ে নিবৃত করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো এজলাসে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করছিলেন ট্র্রাইব্যুনালের বিচারক জেসমিন আরা বেগম।
মামলার শুনানির ফাঁকে বেলা সোয়া ১২ টার দিকে হঠাৎ বিচারককে লক্ষ্য করে কাঠগড়া থেকে আসামি শামীম খন্দকার (২৪) পরপর তার দুই পায়ের জুতা খুলে ছুড়ে মারেন। জুতা জোড়া বিচারকের গায়ে না লাগলেও একদম সামনে এসে পড়ে। আকস্মিক ঘটনায় এজলাসে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। উপস্থিত আইনজীবীদের রোষাণলে পড়লে বিচারক তৎক্ষণাত সকলকে নিবৃত্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা থামেন, শুনি কেন সে এমন কাজ করল। ’
ঘটনার কারণ জানতে চাইলে আসামি জানায়, ‘পাাঁচ বছর ধরে কারাগারে আছি। আপনি আমাকে জামিন দিচ্ছেন না কেন। ’
আসামি জানায় ’ অনেক আগে আমি জামিনের জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু জামিন দেন নাই। ’
কাকে টাকা দিয়েছে জানতে চাইলে আসামি বিচারককে বলেন, ‘আপনার সামনে যিনি মামলার নথি ওঠায় তাকে। ’
মামলার নথি পর্যালোচনা করে বিচারক আসামিকে বলেন, ‘চার বছর পর আজ আপনাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আপনি তো ফৗজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অপরাধ স্বীকার করেছেন। আপনার বিরম্নদ্ধে হত্যা মামলায় রয়েছে। ওই মামলাতেও আপনি কারাগারে আছেন। ’
আপনাকে কিভাবে জামিন দেব এমন উক্তি করলে এসময় বিচারককে উদ্দেশ্য করে আসামি বলে, ‘সামনের তারিখে আবারও আপনাকে জুতা মারব। ’
পরে বিচারক রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালে নিয়োজিত সরকারি কোসুলিকে দ্রম্নত মামলায় সাক্ষ্যি হাজির করার তাগিদ দেন। একইসঙ্গে পরবর্তী ধার্য তারিখ থেকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আসামিকে এজলাসে হাজির করার নির্দেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আবদুল বারীর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, মাদারীপুর জেলা আদালতে বিচারাধীন একটি হত্যা মামলারও আসামি শামীম। ওই মামলায় দীর্ঘদিন মাদারীপুর কারাগারে থাকায় তাকে এই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি। ফলে মামলার বিচার শুরম্ন হলেও কোনো সাক্ষ্যগ্রহন হয়নি। এই প্রথম তাকে এজলাসে উঠানো হয়েছিল।
মামলা শুনানির ফাঁকে হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই সে ঘটনাটি ঘটায়। আসামি গর্হিত অন্যায় করেছেন। মহানুভব বিচারক অবধারিত শাসিত্ম না দিয়ে তাকে ক্ষমা করেছেন।
নথিসুত্রে দেখা গেছে, ছেলে আকাশকে (৫) অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে মাদারীপুর জেলার সদর থানাধীন কালিকাপুর গ্রামের মনির হোসেন বাদী হয়ে ২০১২ সালের ৩১ আগস্ট দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহূত শিশু আকাশকে জীবিত উদ্ধার হয়।
তদন্ত্ম শেষে ওই বছরেরই ১১ ডিসেম্বর ওই থানার উপপরিদর্শক আবদুল মান্নান মুন্সি অপহরণের অভিযোগে শামীমের বিরম্নদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আসামির বিরম্নদ্ধে বিচার শুরম্নর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।