ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানোর সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এই দুটি জ্বালানি দরিদ্র মানুষ বেশি ব্যবহার করে থাকে। এই দুটি জ্বালানি থেকে সরকার বেশি মুনাফা করলে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি সাশ্রয় হবে না। দাম কমালে গরিব মানুষ লাভবান হবে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিপিডি এ কথা বলেছে। বাজেট বাস্তবায়নের দুর্বলতা কাটাতে পাঁচটি সুপারিশ করেছে তারা। এর একটি সুপারিশ হলো ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানো। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরা উপলক্ষে আজ রোববার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি।
বাজেট বাস্তবায়নের দুর্বলতা কাটাতে সিপিডির অন্য চারটি সুপারিশ হলো রপ্তানি ও প্রবাসী আয় খাতকে সুবিধা দিতে স্বল্প মেয়াদে টাকার মূল্যমান কমানো, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা দূর করতে স্বাধীন আর্থিক খাত সংস্থার কমিশন গঠন।
আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন বাস্তবায়নকে নীতিগত সমর্থন করে সিপিডি। তবে সিপিডি মনে করে, ১৫ শতাংশ মূসক হার ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ, এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এ ছাড়া সিপিডি আরও বলেছে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিন্ন ১৫ শতাংশ মূসক হার নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আপাতত তা কমানোর সুযোগ এখন নেই। আগামী এক-দুই বছরে মূসক আহরণ বৃদ্ধি পেলে তা ক্রমান্বয়ে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।
অনুষ্ঠানের সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের আকার বড় হলেও তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ছে না। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি সম্প্রসারণশীল বা বড় বাজেট নেওয়ার অবস্থা বিদ্যমান। তবে বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে বড় বড় নীতি সংস্কার করতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, প্রতিবছর বড় বাজেট বলে যে কল্পকাহিনি বাজারে ছড়ানো হচ্ছে, তা একধরনের আর্থিক ভ্রম। বাজেট বড় বলা হচ্ছে, কিন্তু বড় নয়। কেননা, কর জিডিপি অনুপাত কিংবা ব্যয় জিডিপি অনুপাত আগের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি। তাঁর মতে, গত কয়েক বছরে কর আহরণে সফলতা এলেও ব্যয় করার সামর্থ্য বাড়েনি। এটি একটি অদ্ভুত বিষয় বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া নির্বাচনের বছরে সরকারের পক্ষে বড় সংস্কার নেওয়া কঠিন বলে মনে তিনি করেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হয় না বললেই চলে। তিনি প্রশ্ন করেন, বাজেট কি আমলাদের সংখ্যানির্ভর প্রক্রিয়া, নাকি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া? তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়নের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা দেখা যায় না। এটি বাজেট-কাঠামোর মৌলিক সমস্যা। এতে কায়েমি স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে সম্পদ খরচের ক্ষমতা চলে যায়। এ সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো এত বড় ঘটনা ঘটল, কিন্তু মন্ত্রিসভা কিংবা সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।