শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। দু’জনেই এখন শোবিজ দুনিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। রুপালি পর্দায় এ দুই হার্টথ্রবের একসঙ্গে পথচলা শুরু হয় ২০০৬ সালে। আর এর দুই বছর পরই দু’জন গোপনে বিয়ে করেন। এফ আই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবির মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ শুরু করেন শাকিব-অপু বিশ্বাস। প্রথম ছবিতেই এ জুটি দর্শকের মন কেড়ে নেয়। এরপর একের পর এক হিট ও সুপারহিট ছবি উপহার দেন তারা। দর্শকের মনের আসনে বসার পাশাপাশি তখন শাকিবের হৃদয়েও জায়গা করে নেন অপু বিশ্বাস। তবে কে কাকে কিভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে অপু বলেন, ২০০৮ সালের ১৭ই এপ্রিল আমরা দু’জন সারা দিন আশুলিয়ার প্রিয়াঙ্কা শুটিং স্পটে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কথা দাও সাথী হবে’ ছবির
কাজ করছিলাম। কাজ শেষে শাকিব আমাকে বলে, তোমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে। সন্ধ্যার পর অবশ্যই দেখা করতে হবে। তার মুখ থেকে যে কথাটি শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম সেই কথাটি হয়তো শাকিব বলবে এই অনুমান ছিল আমার। এরপর তার কালো হ্যারিয়ার গাড়িতে করে আশুলিয়ার পথ ধরে এগিয়ে চলছি। একটা সময় সে আমাকে বললো, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই এবং সেটা আগামীকাল। একথা শুনে অপু নিঃসংকোচে শাকিবের হাতে হাত রাখলেন। এরপর তারা মিরপুরে শাহ আলীর মাজারে যান। সেখান থেকে দোয়া নিয়ে মহাখুশিতে যে যার মতো বাসায় চলে যান সেদিনের মতো। এরপর আসে বিয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৮ই এপ্রিল ছিল শুক্রবার। অপু বলেন, তখন আমার বাসা ছিল মিরপুরে। আমার বোন লতা ছিল বন্ধুর মতো। তাকে সবকিছু বললাম। আর মাকে বললাম বিউটি পার্লারে যাবো। তখন মা বলেছিলেন, কখনো তো পার্লারে কাউকে নিয়ে যাস না, আজ একা না গিয়ে দুই বোন একসঙ্গে বের হচ্ছিস কেন? মায়ের প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই সকাল সাড়ে ১০টায় ঘর থেকে বের হন অপু। কিন্তু বোন লতা একথা জানার পর রেগে আগুন। কারণ, শাকিব ও অপুর ধর্ম তো আলাদা। তারপর অনেক বোঝানোর পর বোন রাজি হন। পথে বসুন্ধরা সিটির সামনে থেকে প্রযোজক মামুনকে গাড়িতে তুলে নেন। তার হাতে দুটি মালা ছিল। আর অপুর বোন শাকিবের জন্য ডায়মন্ডের একটি ফিঙ্গার রিং কিনে নিলেন। অপুর পরনে সেদিন ছিল শার্ট-প্যান্ট। বাসা থেকে তা পরেই বের হয়েছিলেন তিনি। প্রযোজক মামুন মালা ও ডায়মন্ড ফিঙ্গার রিং শাকিবের হাতে তুলে দেন। শাকিব নিজেই পছন্দ করে একটি লেহেঙ্গা কিনে এনেছিলেন। সেই নজরকাড়া লেহেঙ্গা পরেই বিয়ে করেন অপু। নায়কের পরনে ছিল সাধারণ পাজামা-পাঞ্জাবি। বিকাল সাড়ে ৩টায় শাকিবের গুলশানের বাসায় বিয়ে হয় দুজনের। শাকিবের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কাজী আনেন তার চাচাতো ভাই মনির। কাজী বিয়ে পড়ানোর আগে অপুর ধর্ম পরিবর্তনের কথা বলেন। এরপর অপুর নাম পাল্টে লেখা হয় অপু ইসলাম খান। আর এ বিয়েতে উকিল বাবা হিসেবে ছিলেন প্রযোজক মামুন। শাকিবের চাচাতো ভাই মনির ছিলেন বিয়ের সাক্ষী। সেদিনের পর থেকে শুরু হয় শাকিব ও অপুর নতুন পরিচয়। কিন্তু বাসায় ফেরার পর অপুর মায়ের মনে নানা কারণে প্রশ্ন জাগে। একদিন শুটিং স্পটে গিয়ে অপু শাকিবের সঙ্গে আলাদা কোথাও যেতে চাইলে তার মা বাধা দেয়। পরে অপু সব খুলে বলার পর তার মা বাধ্য হয়েই সব মেনে নেন। বিয়ের এক বছর পর মিরপুরে অপুর বাসায় শাকিবের বাবা-মা, অপুর মা, বোন, ভগ্নিপতিসহ আরো কয়েকজন মিলে একটি ঘরোয়া পার্টিও করেন। সেখানে অপুর মা সব রান্না করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো কিভাবে সংসার করতেন শাকিব ও অপু। অপু জানিয়েছেন, তিনি কিছুদিন নিজের বাসা, আবার কিছুদিন শাকিবের বাসা এভাবেই থাকতেন। শাকিবের বাসায় যেন কেউ না দেখে তাই অনেক রাতে যেতেন। এভাবেই চলেছে তাদের সংসার। কিন্তু তারা কখনো হানিমুনে যাননি। শুটিংয়ে বিভিন্ন দেশে গেলেও হানিমুন নিয়ে আফসোস রয়েছে তাদের। কিন্তু এরপর দুঃখের অংশ শুরু। বাচ্চা গর্ভে আসার পর একটি মেয়ের যে আনন্দ থাকে তা অপুর মধ্যে ছিল না। শাকিবের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে কলকাতার একটি হাসপাতালে নিজে বন্ডে সাইন দেয়ার পর সিজার হয় অপুর। ২০১৬ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর শাকিব ও অপুর ঘরে ছেলে সন্তান আব্রাহাম খান জয় আসে। তারপরও শাকিব এ খবর অপুকে গোপন রাখতে বলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দুজনের ক্যারিয়ারের স্বার্থে সন্তান ও বিয়ের কথা গোপন রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রযোজকরা যখন জানতেন আমরা বিবাহিত তখন আমাদের জুটি করে আর ছবি বানাতে আগ্রহী হতেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গত সোমবার টিভি লাইভে এসে সবই জানিয়ে দেন অপু। এরপর থেকে শাকিব আর তাকে ঘিরে ঘটে চলেছে একের পর এক চমকপ্রদ নানা ঘটনা।