দেয়ালচিত্র পোড়া তেলে ঢেকে দেওয়ার পরও থেমে নেই বর্ষবরণের কর্মযজ্ঞ। কালো আবরণে ঢাকা দেয়ালচিত্রগুলো প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সেভাবেই রেখে দেওয়া হয়েছে। পাশের দেয়ালে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এঁকে চলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
গত মঙ্গলবার রাতে নগরের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের করা দেয়ালচিত্রে পোড়া মবিল ছিটিয়ে আঘাত হানে দুর্বৃত্তরা। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে নগরের বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউট সরব হয়ে ওঠে। রংতুলি নিয়ে কাজে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন শিক্ষকেরাও। বৃহস্পতিবারও তাঁরা কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কালো তেলে ঢেকে দেওয়া দেয়ালচিত্রের পাশে আবার রং তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার নানা ছবি। পাশাপাশি চলছে নববর্ষের দিন অর্থাৎ শুক্রবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন উপকরণ তৈরির কাজ।
আবির মণ্ডল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যারা বাঙালি সংস্কৃতিকে ভয় পায়, তারাই এই আঘাত হেনেছে। আমরা আঘাতে ভীত নই। তাই নতুন করে আলপনা করছি। দেয়ালচিত্র করছি। মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছি। বাধা আসলে প্রতিরোধ করা হবে।’
শুধু দেয়ালচিত্র কিংবা মুখোশ তৈরি নয়, প্রতিবাদস্বরূপ নগরের বাদশা মিয়া সড়কের প্রবেশপথসহ বিভিন্ন সড়কে নববর্ষ উপলক্ষে আলপনা এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পর গতকাল থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটের দেয়ালচিত্র এবং সাজসজ্জার কাজে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে।
সুমন্ত রানী মোহন্ত নামের এক শিক্ষার্থী আজ দুপুরে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বুধবার প্রায় সারা রাত কাজ করা হয়েছে। আঘাতে আমরা ভীত নই।’
নতুন রঙে নতুন দেয়ালে চিত্র আঁকার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে রুহিন কাইফার নামের একজন লিখেছেন, ‘আবার এঁকেছি। পারলে এসে আবার পেট্রল ঢালেন। কাজ চলবেই।’
হাসান মুরাদ নামের একজন নতুন দেয়ালচিত্র আঁকার ভিডিও পোস্ট করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘থেমে নেই চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে চলছে দেয়ালচিত্র তৈরির কাজ। যত আঘাত করবে, ততই দৃঢ় হবে আমাদের চেতনা।’
জানতে চাইলে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক জাহেদ আলী বলেন, ‘ওই ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য আমরা এবং শিক্ষার্থীরা হতাশ ছিলাম। কিন্তু আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আমাদের দেয়ালচিত্র এবং নানা কাজ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য আমরা প্রস্তুত। তার আগে আজ বিকেলে যে শোভাযাত্রা বের হবে তাতে আমরা কালো ব্যাজ পড়ব।’ আগামীকাল সকাল নয়টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে।
এদিকে, ওই ঘটনায় পুলিশ নগরের বাদশা মিয়া সড়কের আশপাশ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। কিন্তু এখনো সেভাবে কিছু পায়নি। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে তিনি জানান।