স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: শেষ টেস্টেও জিম্বাবুয়েকে ১৮৬ রানে হারিয়ে জয় পেল বাংলাদেশ। এই জয়ে প্রথম বার তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ প্রতিপক্ষকে হোয়াইট ওয়াশ করতে সক্ষম হলো টাইগারা। সেই সঙ্গে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এটি প্রথম টেস্ট জয়ই না, দেশের মাটিতে প্রথম হোয়াইট ওয়াশ করার রেকর্ডও। সব মিলিয়ে নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটে নতুন এক ইতিহাস রচনা করলো টাইগাররা। এর আগে এই স্টেডিয়ামে মোট ১২টি ম্যাচ খেলেছিল। কিন্তু ৮টি ম্যাচে পরাজয়ের লজ্জা ও ৪টি ম্যাচে ড্র’র প্রাপ্তি নিয়েই সন্তোষ্ট থাকতে হয়েছে। তবে আজ সাগরিকায় জয়ের ঢেউ আছড়ে পড়ে নতুন এক রেকর্ড গড়ে। জিম্বাবুয়েকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে টানা ৪ বার হারালো বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচে জিতে প্রথম কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হোয়াইট ওয়াশ করেছি। এই পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩টি সিরিজে জয় পেয়েছে। তার মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় বার। শুধু তাই না রানের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়। এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালে সর্বোচ্চ ২২৬ রানের ব্যাবধানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ঢাকা ৩ উইকেট ও খুলনায় ১৬২ রানের জয় দিয়ে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। সেই সুবাদে বাংলদেশ টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নাম্বাার থেকে জিম্বাবুয়ে পিছনে ফেলে উঠে আসে ৯ নাম্বারে। আর তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে জয় দিয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন জিম্বাবুয়ের কাছ থেকে ৩৪ রান বেশী। এই পর্যন্ত বাংলাদেশ ৮৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে জয় এসেছে ৭টিতে ড্র ১১টিতে ও হার ৭০টিতে। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় এসেছিল এই চট্টগ্রামে। ২০০৫ সালে অবশ্য সেটি ছিল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি ১৪ তম টেস্টে ৫ জয়।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে টসে জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তামিম ও ইমরুললের জোড়া সেঞ্চুরি ৫০৪ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ১২৯ রান পিছিয়ে থেকে ৩৭৪ রানে আল আউট হয়। এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩১৯ রান করে ৫ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংসে লিডের সুবাদে জিম্বাবুয়ের সামনে জয়ের জন্য টার্গেট ছুড়ে দেয় ৪৪৮ রানের। চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে ১ উইকেটে তুলে জিম্বাবুয়ে ৭১ রান সংগ্রহ করে দিন শেষ করে। তবে ৫ম দিন কোন ভাবেই বাংলাদেশের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্পিনারা আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরে জিম্বাবুয়েকে।
৪৪৮ রানের লিড তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেট হারিয়ে ৭১ রান। তাই আজ তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৭৮ রান। হাতে ছিল ৯টি উইকেট। কিন্তুএকের পর এক উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ফিঁকে হয়ে আসে তাদের জয়ের আশা। এর আগে ব্যাট হাতে নেমে আগের দিন ৪৩ রানে সিকান্দার রাজা তার সঙ্গে ২৬ রানে অপরাজিত থাকা মাসাকাদজা খুব বেশী দূর যেতে পারেননি। জিম্বাবুয়ে জয়ের জন্য ৩৫২ রান দূরে থাকতেই হারিয়েছে দ্বিতীয় উইকেট। অভিজ্ঞ ব্যাটম্যান মাসাকাদজাকে ৩৮ রানেই ফিরিয়ে দিয়ে দিনের প্রথম উইকেট এনে দেন শুভাগত হোম। জিম্বাবুয়ে ২ উইকেট হারায় ৯৭ রান রান সংগ্রহ করতেই। তবে টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে আপরাজিত ছিলেন সিকান্দার রাজা ভাট। তার সঙ্গে দলের হাল ধরতে এসেছিলেন দলের অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর। তবে রাজার এই প্রতিরোধ লড়াই বেশিক্ষণ আস্থায়ী হতে দেননি শুভাগত হোম। নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান ৭৫ বলে ৬৫ রান করা রাজাকে। রাজা ১১৬ রানের সময় সাজঘরে পথে হাটেন। ক্রিজে অধিনায়ক টেইললের সঙ্গে আছেন চাকাভা। অধিনায়ক টেইলর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও ব্যর্থ হন। দলের জন্য মাত্র ২৪ রানের আবদান রেখেই তিনি জুবায়েরর শিকার হয়ে হাটেন সাজঘরের পথে। চাকাভার সঙ্গে প্রথম ইনিংসে চিগুম্বুরার জুটি লম্বা হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে চাকাভাকে একা ফেলেই হাটতে হয়েছে চিগুম্বাবুরাকে। মাত্র ৫ই ছিল তার দলের জন্য অবদান। জুবায়ের দ্বিতীয় শিকার ছিলেন তিনি।
এরপর শেষ মুহুর্তে চাকাভা একাই দলের হাল ধরে থাকেন। তাকে সঙ্গ দিতে এসে একবার রিভিওতে বেঁচে যাওয়া আরভিন মধ্যানহ্ন বিরতীর পর ১৬ রানের অবদান রেখেই হাটেন সাজঘরের পথে। তবে তাকে সঙ্গ দিতে এসে কেউ দাড়াতে পারেনি টাইগারদের সামনে। দলীয় ২২৮ রানে আরভিনের বিদায়ের পর মুতাম্বিকে নিয়ে কিছু প্রতিরোধ গড়েন চাকাভা। কিন্তু তাইজুল ২ রানেই তাকে সাজঘরে পথ দেখান। এরপর স্পিনারদের সাফল্যে চুপ করে থাকেনি পেসারও। রুবেল হোসেন তার দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন পানিয়াংঙ্গারাকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে। এরপর পেসার শফিউল ইসলাম পর পর দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক জয় উপহার দেয়।